ক্যাটাগরি

মহাসড়কের জমি ব্যাংকে দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ, দুদকে অনুসন্ধানের নির্দেশ

দুর্নীতি দমন কমিশনকে
(দুদক) বিষয়টি অনুসন্ধান করে আগামী ২৬ জুনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেছে আদালত।

জনস্বার্থে করা এক
রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী
মো. ইজারুল হক আকন্দের হাই কোর্ট বেঞ্চ সোমবার এ আদেশ দেয়।

পাশাপাশি দুর্নীতি
ও জালিয়াতির মাধ্যমে ওই জমি বন্ধক দেওয়া দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা
নেওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের ব্যর্থতা কেন ‘বেআইনি ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত’ ঘোষণা
করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে আদালত।

পেশাগত দায়িত্ব হিসেবে
এই সম্পত্তি নিলামে তোলার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ
দেওয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।

দুদক, বাংলাদেশ ব্যাংক,
বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড
(এসআইবিএল) ও ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আদালতে রিট আবেদনের
পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী অনীক আর হক ও মো. তামজিদ হাসান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি
অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।

গত ২১ এপ্রিল হাই কোর্টে
জনস্বার্থে রিট আবেদনটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ওবায়েদ আহমেদ।

জালিয়াতির মাধ্যমে
উত্তরার আজমপুরে জমির মালিক হন গোলাম ফারুক নামে এক ব্যক্তি। পরে জমি বন্ধক রেখে বেসরকারি
একটি ব্যাংক থেকে ১৫ কোটি টাকার ঋণ নেন। ঋণ পরিশোধ না করায় মহাসড়কের ওই অংশের জমি নিলামে
তোলে ব্যাংক।

সরকারি জমি ব্যাংকে দিয়ে ১৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ
 

জালিয়াতির এ ঘটনায়
গোলাম ফারুকসহ দুইজনকে গত ১৪ এপ্রিল উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব।

পরের দিন তাদেরকে গণমাধ্যমে
সামনে হাজির করে সংস্থাটি জানায়, মেরুল বাড্ডায় জাল দলিল সংক্রান্ত একটি খুনের মামলা
তদন্ত করে গিয়ে জমি জালিয়াতির ঘটনার সন্ধান পাওয়া যায়।

ওই দিন র‌্যাবের আইন
ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের জানান, কয়েকটি সরকারি
অফিসের অসাধু কর্মচারীর যোগসাজশে মহাসড়ক শ্রেণিভুক্ত সরকারি জমি গোলাম ফারুকরা ব্যক্তি
মালিকায় নিবন্ধন করে নেয়। যদিও এসব জমি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এল. এ কেস ১৩-১৯৪৮/৪৯ সালের
মূলে ও পুনরায় ৬৬-১৯৫৭/৫৮ সালের মূলে অধিগ্রহণ করা হয়।

গোলাম ফারুককে জিজ্ঞাসাবাদের
বরাতে মঈন বলেছিলেন, তিনি ২০০০ সাল থেকে গাড়ি আমদানিকারক হিসাবে ব্যবসা শুরু করেন।
এজন্য একটি বেসরকারি ব্যাংকে কোনো বন্ধকী সম্পত্তি ছাড়াই এলসি আবেদন করে গাড়ি আমদানি
শুরু করেন।

ব্যাংকের টাকার পরিশোধের
বাধ্যবাধকতা থাকায় ব্যাংকটি আমদানিকৃত গাড়ি বিক্রি করে অর্থ পরিশোধ করার শর্তে গোলাম
ফারুককে সাত কোটি টাকা ডিমান্ড লোন দেয়।

পরে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ
না করায় ব্যাংক তাকে সম্পত্তি বন্ধক দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ দিলে তিনি সরকারি জমিকে
ব্যক্তি নামে নিবন্ধন করার পরিকল্পনা করেন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী,
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উত্তরার আজমপুর অংশের একটি জমির মালিকের ছেলেকে খুঁজে বের করেন
তিনি। জমিটি ১৯৪৮ সালে সরকার অধিগ্রহণ করে। ২০০৬ সালে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ওই জমির একটি
ভুয়া দলিল তৈরি করেন তিনি। ওই দলিলমূলে মালিকের ছেলের কাছ থেকে ফারুক তার স্ত্রীর নামে
২০১০ সালে নামমাত্র মূল্যে জমিটি কিনে নিয়ে আরেকটি দলিল তৈরি করেন।

ওই জামি আবার স্ত্রীর
কাছ থেকে ফারুক নিজের নামে দলিল করে নেন, পরে সেই জমি ওই বেসরকারি ব্যাংকে বন্ধক রেখে
তিনি আরও ১৫ কোটি টাকা ঋণ নেন। কিন্তু ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করায় ২০১৩ সালে বন্ধকী
জমি নিলামে বিক্রি করতে নোটিস জারি করে ব্যাংক। পরে কর্মকর্তারা সেখানে গিয়ে দেখতে
পান, তা সরকারি সম্পত্তি।