ক্যাটাগরি

গল্পেরা চুপটি করে থাকে

পুরো নাম টিয়া ত্রয়ী। যা বলছিলাম- ওর মনটা বিশেষ ভালো নেই। পছন্দের
পুতুল কিনে না দিলে বা বড় চকলেটটা কিনে না দিলে যেমন মন খারাপ হয়, ঠিক অমন
মন খারাপ নয় এটা। ওর কিছুই ভালো লাগে না। পছন্দের কার্টুন দেখতে, ছাদে
বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে যেতে,
আলতা পরতে, এমনকি বাবার পিঠে চড়ে সারা বাড়ি ঘুরে বেড়াতেও না।

পড়া মনে রাখতে পারছে না, স্কুলেও যেতে মন চায় না। শুধু
কান্না পায়।

মা-বাবা সবাই চিন্তায় পড়ে গেল। বন্ধুরা খেলতে ডাকতে এসে শুকনো মুখে ফিরে যায়। টিয়ার
কিছুই ভালো লাগে না। পুরো পৃথিবী শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে, এমনবোধ
হয় তার। সে সব গল্প হারিয়ে ফেলেছে। সব গল্প। দরজা জানালা বন্ধ করে বালিশে মুখ গুঁজে
কাঁদতে ইচ্ছে করে ওর।

উঠোনের দুধারে গাছের টবে জল দেওয়ার সময় যখন গড়িয়ে পড়তো তখন গড়াতে
থাকা জলের আকারকে কখনও সে কচ্ছপ, কখনও বকের ঠোঁট কখনওবা নদী বানিয়ে ফেলতে পারতো।
কিন্তু এখন যতই জল গড়াক,
তার জলকে জলই মনে হয় অন্য কিছু না। ছাদে শুয়ে আগে আকাশের মেঘকে
হাওয়াই মিঠাই ভেবে নিতো,
কিন্তু এখন পানসে লাগে। খুব পানসে। কেন? কারণ
তার গল্প হারিয়ে গেছে।

সব দোষ মিষ্টি দাদুমণির। হঠাৎ এত অসুখ করলো তার। বিছানাতেই পড়ে
গেলেন। বড় কাকুর বাড়িতেই থাকেন এখন। কাকু ডাক্তার তো, তাই তিনিই
নিয়ে গেলেন দাদুমণিকে। আর সেই থেকে টিয়ার কিছুই ভালো লাগে না। স্কুল থেকে ফিরে শুধু
কান্না পায়।

দাদুমণি গাছের খুব যত্ন নিতেন, পাতার
গায়ে ছড়িয়ে থাকা শিরা উপশিরা নিখুঁত করে দেখাতেন। হ্যাঁ, ঠিক তখনই
টিয়া সেই পাতাটিকে একটা গ্রাম বানিয়ে ফেলতো, শিরা উপশিরাকে গাঁয়ের পথ। কোথায়
কার ঘর সেটাও ভেবে নিত। কিন্তু এখন কী হবে? সব গল্প কি এভাবেই উবে যাবে?

বাবা-মা যে টিয়ার ব্যাপারটা খুব একটা বোঝেন না, তা কিন্তু
নয়! বাবা একদিন টিয়াকে বললেন, কাল তো তোমার শেষ স্কুল। তারপরই ঈদের ছুটি।
চলো কাল আমরা বড় কাকুর বাড়ি যাব। তুমি মিষ্টি দাদুমণিকে দেখতে পাবে, কেমন? টিয়ার
চোখ জ্বলে ওঠা লাইটারের মতো ঝপাৎ করে উঠলো। প্রশস্ত হাসি হেসে বললো, ঠিক বলছো
তো বাবা? বাবা সায় দিলেন।

পরদিন টিয়া, বাবা আর মা গেল বড় কাকুর বাড়ি।
টিয়া দৌড়ে দাদুমণির ঘরে ঢুকলো। মিষ্টি দাদুমণি দুটো বালিশের ওপর পিঠ রেখে আধশোয়া হয়ে
বই পড়ছেন। টিয়া ঢুকতেই চশমার ওপর দিয়ে তাকালেন ওর দিকে। চাঁদের হাসি হেসে বললেন, টিয়া
দাদুভাই এসেছে নাকি! দেখি দেখি আমার কাছে এসো।

টিয়া দৌড়ে দাদুমণিকে জড়িয়ে ধরলো। দাদুমণি বললেন, শুনলাম
তোমার নাকি মন ভালো নেই। কী হয়েছে সোনা? টিয়া চিবুক নামিয়ে বললো, তুমি
নেই। সব শূন্য হয়ে গেছে। কেউ গল্প বলে না। আমার কোনো গল্প নেই।

দাদুমণি বললেন, কেউ বলে না তো কী হয়েছে? তুমি
গল্প বানাবে! পৃথিবীর সব গল্পই তোমার। তুমি চাইলেই ওরা তোমার কাছে আসবে। তোমাকে ঘিরে
থাকবে। কখনও হারাবে না।

কিন্তু আমি তো পারছি না মিষ্টি দাদুমণি!

এজন্য তোমাকে সব সময় দেখতে হবে। আকাশ, গাছ, পাখি, পিঁপড়া, প্রজাপতি।
আর যা আছে। দরজা জানালা বন্ধ করে বসে থাকলে হবে?

দাদুমণি একহাত দিয়ে খাটের পেছনের জানালার কপাট খুলে দিয়ে বললেন-
দেখেছ কী সুন্দর হাওয়া বইছে। এই হাওয়া তোমার মন ছুঁয়ে যাচ্ছে না? চোখে
ভাসছে না নদীর পাড়ের মাটির রাস্তাটা?

ভালো লাগছে মিষ্টি দাদুমণি। তুমি কাছে থাকলেই ভালো লাগে সব।

তুমি এই আকাশ, বাতাস আর এই প্রকৃতিকেও এভাবে
ভালোবাসো, আপন করে নাও তাহলে দেখবে ওরা কখনও তোমাকে একা হতে দেবে না। তোমায় গল্পে গল্পে ভরিয়ে
দেবে।

জানালা দিয়ে একটা নারকেল গাছ দেখিয়ে দাদুমণি টিয়াকে বললেন- বলতো
নারকেল গাছের পাতাগুলো কিসের মতো?

আ…চিরুণির মতো! বলে উঠলো টিয়া। মাঠে যে ঘাসগুলো আছে সেগুলো
হলো পৃথিবীর চুল। আর বাতাসের দোলে ওই চিরুণি তা আঁচড়ে দিচ্ছে।

দাদুমণি বললেন, দেখেছ, গল্পেরা
তোমায় ছেড়ে যায়নি! তুমি কিন্তু ওদের মনে রেখো। ওরা তো চুপটি করে থাকে। তোমাকে খুঁজে
নিতে হবে।

এবার চাঁদের হাসি হাসলো টিয়া। টিয়াপাখি নয় কিন্তু! টিয়া ত্রয়ী।

 

কিডজ
পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি,
মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ
স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের
নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!