ক্যাটাগরি

জুটুন মামার বাঘযাত্রা

এ কী করে সম্ভব? বাঘের গতিবিধি যার নখদর্পণে, বাঘ নিয়ে যার বিস্তর গবেষণা সে কিনা খেলো বাঘের থাবড়া? জুটুন মামা সুন্দরবন যাননি আগে কখনও। তাতে কি; তিনি তার সাড়ে তেতাল্লিশ বছর জীবনের প্রায় সাড়ে বেয়াল্লিশ বছরই কাটিয়ে দিয়েছেন বাঘবিষয়ক ভাবনা-চিন্তায়!

এই সেদিনও সুন্দরবন যাওয়ার আগে বলে গেলেন, কটকা নদীর পশ্চিম পাড়ে বন বিভাগের যে রেস্টহাউস তার পাশেই ঘর তুলে থেকে আসবো মাস তিনেক। বুবুনরা অবাক হয়ে জানতে চাইলো, বনে ঘর তুলে থাকবে; বাঘের ভয় করবে না? মামা বলেছিলেন, বাঘ হচ্ছে গোধূলি প্রাণী। রাত নেমে এলে উল্টো তারাই আমাকে ভয় পাবে!

অরণ্য বলেছিলো, আচ্ছা মামা, বনের মধ্যে ঘর তুলবে কেমন করে? মামা বলেন, আরে পৃথিবীর সবচেয়ে সহজ কাজ বনে ঘর তোলা। কিছুই কিনতে হয় না। বনেই পাওয়া যায় সব। আর সুন্দরবনে ঘর তোলা তো আরও সহজ। গেউয়াবন চিনিস? সুন্দরবনে খুব হয়। গেউয়া গাছের বালি মাটিতে পুঁতে মাটি থেকে ফুট চারেক উঁচুতে মাচাঘর বানিয়ে নেবো। শুধু ঘরই নয়, ঘরের সামনের দিকটায় বানাবো একটা খোলা মাচা। রাতে ঘুমানোর আগে অই মাচায় বসে আকাশের তারা দেখবো আর আয়েশ করে ধোঁয়া ওঠা চা খাবো।

অরণ্য বলে, রাতের বেলা অই সুন্দরবনের অন্ধকারে চায়ের ধোঁয়া ওঠা দেখা যাবে? মামা বলেন, আরে যাবে যাবে। দেখার চোখ থাকতে হয়। আমার চোখ হচ্ছে চিল চোখ। পানির তলায় কী আছে তাও দেখি। তা এই চিল চোখের ক্ষমতা নিয়ে ঘুরে বেড়ানো জুটুন মামা খেলেন বাঘের থাবড়া। ভাবা যায়! অথচ জুটুন মামা সুন্দরবন যাওয়ার আগে বুবুনদের বলে গিয়েছিলেন, তোদের জন্য একটা বাঘের বাচ্চা নিয়ে আসবো। সেই থেকে বুবুনরা বাঘের বাচ্চার স্বপ্ন দেখা শুরু করেছে। তারা এও ভাবতে শুরু করেছে যে, কলোনির রাস্তা দিয়ে একটা বাঘের বাচ্চার গলায় দড়ি লাগিয়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আর এই দৃশ্য দেখার জন্য মানুষ রাস্তার দু’পাশে জড়ো হয়েছে। অনেকে বিল্ডিংয়ের জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে দেখছে তাদের বাহাদুরি। ভাবতেই যেন বুক ফুলে উঠছিল বুবুনদের।

সেই ফোলা বুক ফুটো বেলুনের মতো মিইয়ে এলো জুটুন মামার বাঘের থাবড়া খাওয়ার খবরে। তাই বলে এই খবর শুনে তো আর বসে থাকা যায় না। তারা জড়ো হলো অরণ্যদের বাড়ির ছাদে। এর মধ্যে অরণ্য বুদ্ধি করে বাসা থেকে বাবার মোবাইল এনে কল দিল জুটুন মামার নম্বরে। রিং হতেই মামা কল রিসিভ করে লম্বা একটা হাই তুলে বলেন, না না, আমি আর কোথাও যাবো না। আমায় ক্ষমা করুন।

কিছুই বুঝতে পারে না অরণ্য। বুঝতে পারে না বুবুন, তুতুন আর তিতলিও। ফের কল করে অরণ্য। এবার মোবাইলটা কানে ধরে বুবুন। কল রিসিভ করেই কাঁদো কাঁদো গলায় বলেন, জাহাজ থেকে কোনোভাবেই নামবো না। দয়া করে আমাকে মোংলা বন্দরে নামিয়ে দিয়ে আসুন। এই বলে ভ্যাঁ-অ্যা-অ্যা কেঁদে ওঠেন জুটুন মামা। বুবুন এ-পাশ থেকে বলে, মামা, আমি বুবুন। কী হয়েছে তোমার? কান্না করছো কেন? তুমি নাকি বাঘের থাবড়া খেয়েছো?

মামা ফুঁপিয়ে উঠে বলেন, সে আর বলিসনারে বুবুন, অল্পের জন্য বাঘের মুখ থেকে ফিরে এসেছি!

কী বলো মামা! বাঘে ধরেছিল তোমায়? তুমি তো তাহলে বিখ্যাত হয়ে যাবে। শুনেছি সুন্দরবন এলাকায় যাদের বাঘে ধরে সরকার তাদের টাকা দেয়; তুমি তো নিশ্চয় টাকাও পাবে! সেই টাকা দিয়ে আমাদের জন্য একটা বাঘের বাচ্চা কিনে নিয়ে এসো মামা। প্লিজ, প্লিজ প্লি-ই…।

কথা শেষ হওয়ার আগেই টুট-টুট-টুট। কল কেটে যায়। অরণ্য বলে, দেখিস, মামা ঠিকই বাঘের বাচ্চা নিয়ে আসবে আমাদের জন্য। তখনই দৌড়ে ছাদে আসে অরণ্যর বড় বোন তৃষা আপু। তিনি তাদের একটা ভিডিও দেখিয়ে বলেন, এই ভিডিও পাঠিয়েছে আমার বন্ধু নিষাদ। সেও সুন্দরবন গিয়েছে ঘুরতে। তাদের দলে মোট ৩৭ জন ট্রাভেলার। এক জাহাজে সবাই। নিষাদ বললো, তাদের জাহাজের পেছনে একটা বড়সড় নৌকা বাঁধা আছে। একটা পয়েন্টের কাছাকাছি গিয়ে জাহাজ ঠায় পানিতে দাঁড়ায়। তারপর ট্রাভেলাররা জাহাজ থেকে গিয়ে ওঠে নৌকায়। সেই ইঞ্জিনচালিত নৌকা তাদের ডাঙায় নিয়ে যায়। কখনও ছোট খাল ধরে বনের গভীরে। তা হিরণ পয়েন্ট পাইলট বেইজে গিয়ে একজন পথে পাগমার্ক দেখে নাকি সেন্সলেস হয়ে যায়। তারপর থেকে আবোল-তাবোল বকছে! লোকটাকে চেনা চেনা লাগছে। দেখতো, এটা তোদের জুটুন মামা কিনা?

তারা গোল হয়ে ভিডিওটা দেখে খুব মনোযোগ দিয়ে। তুতুন চিৎকার করে ওঠে। হ্যাঁ এই তো, বাঘের টি-শার্ট। এই টি-শার্টটাই জুটুন মামাকে আমরা ভ্রমণে যাওয়ার আগে অনলাইন শপ থেকে কিনে গিফট করেছিলাম। অরণ্য, বুবুন আর তিতলিও চিনতে পারে টি-শার্টটা। তৃষা আপু বলেন, এই ভীতুর ডিমটা তোদের বাঘের বাচ্চা এনে দেবে? যাই আসল রহস্যটা সবাইকে জানাই! বুবুন বলে, জুটুন মামা সেন্সলেস না হলে ঠিকই একটা বাঘের বাচ্চা নিয়ে আসতো। তারপর তারা একে অন্যের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে!

কিডজ পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com
সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!