ক্যাটাগরি

জোড়া পাখি

কিন্তু আমার ঘরের আশপাশে কোন বিল্ডিং নেই। আমি একা থাকি, কিন্তু আসলে আমি নিঃসঙ্গ নই। প্রতিদিন সকাল হলে এক জোড়া পাখি আমার ঘরের পাশে এসে বসে। ওরা বসে একটা বড় আমগাছের উপর।

গ্রীষ্মকাল এলে আম পাড়ার ধুম পড়ে । যেহেতু গাছের কোন মালিক ছিল না তাই আমগুলো খেতে কোন নিষেধ ছিল না, তাই প্রত্যেক গ্রীষ্মকালে আমি আমগুলো খেতাম । হ্যাঁ, জোড়া পাখির কথা তো ভুলেই গিয়েছিলাম। ওরা দুজন খুব সুন্দর ছিল।

অনেকদিন কেটে যাওয়ার পর ওদের চারটা ডিম হলো। ওই ডিমগুলো খুব ছোট ছোট, আর দেখতে মিষ্টি। অনেকটা সময় কেটে যায়। মা ডিমগুলো তা দিতে থাকে। হঠাৎ করে একদিন অনেক ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়। জোড়া পাখি প্রাণপণ চেষ্টা করছে তাদের ডিমগুলো বাঁচাবার জন্য।

আমি খুব ভয় পেয়ে গেলাম, এবার আমিও তাদের সাহায্য করার জন্য মায়ের কোন কথা না শুনে নেমে পড়লাম। আমাদের যে দারোয়ান কাকা আছে তার সাহায্য নিয়ে দ্রুত গাছে চড়লাম। অনেক ঝড় চলছে, বোধহয় আমি পড়ে যেতাম আরেকটু হলে। কিন্তু সবচেয়ে কষ্ট হচ্ছে আমার হাত থেকে চারটি ডিমের মধ্যে একটি ডিম পড়ে গেলো।

ডিমগুলো আমি আমার জানালার সামনে রাখলাম। জোড়া পাখি সর্বাত্মক চেষ্টা করছিল তাদের ডিম রক্ষা করতে। তখনই মনে হলো আমাদের বাবা-মা আমাদের জন্য ঠিক এমনই কষ্ট করেন।

ঝড়-বৃষ্টি চলে যাওয়ার পর আমি গিয়ে আবার আমগাছের উপর সে তিনটি ডিম রেখে এলাম। কিন্তু খুব খারাপ লাগছিল, কারণ চারটি ডিম থেকে একটি ডিম পড়ে ভেঙ্গে গিয়েছে। অনেকদিন পর ডিমগুলো থেকে বাচ্চা ফুটলো। ওরা দেখতে ওদের বাবা-মায়ের মতো আরও খুব সুন্দর হলো।

একদিন খবর এলো আমাদের ঘরের পাশে যে আমগাছটি আছে সেটি কেটে ফেলা হবে। আর ওখানে নির্মাণ করা হবে বাড়ি। কথাটি শুনে আমার গায়ে কেমন কাঁটা দিয়ে উঠলো, কারণ গাছটি কেটে ফেললে পাখিরা কোথায় থাকবে? আমার খুব মায়া হলো । কিন্তু ওরা আমার কোন কথাই শোনার জন্য রাজি হচ্ছিল না, ওরা গাছটি কাটবে মানে কাটবেই। তবে কি আমার জোড়া পাখি বন্ধুদের সঙ্গে আর দেখা হবে না! দেখা হবে না ছোট্ট পাখিগুলো কীভাবে বেড়ে উঠছে!

মানুষ এমন কেন! তারা কেন এত স্বার্থপর, কেন নিষ্পাপ পাখিদের জীবন শেষ করে দেয়! খুব জেদ হচ্ছিল আমার। গাছগুলো কেটে ফেলা হলো। ভোরবেলা ফোনে অ্যালার্ম বেজে উঠলো। এখন যে আর সকালবেলা পাখির ডাকে ঘুম ভাঙ্গে না তাই।

জানি না ছোট্ট পাখির ছানাগুলো আর জোড়া পাখি কেমন আছে। আমাদের ঘরের পাশে আর কখনও কোনো পাখি দেখিনি। আমার ঘরের চারপাশে বড় বড় দালান হয়েছে। বড় বড় দালানগুলোর কারণে আকাশের পাখি দেখা যায় না । সব সময় ওই জানালার পাশে বসে থাকি। যদি জোড়া পাখি কখনও আসে।

লেখক পরিচিতি: শিক্ষার্থী, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, অষ্টম শ্রেণি

কিডজ পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com
সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!