বাজারে এর উল্টো চিত্র
খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের বেলায়; এক্ষেত্রে সরবরাহ কিছুটা থাকলেও তা সরকার নির্ধারিত
মূল্যে মিলছে না বলে অভিযোগ ক্রেতা ও বিক্রেতাদের।
পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা
বলছেন, মিল থেকে ভোজ্যতেলের সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকার নির্ধারিত মূল্যে কিছু
পরিমাণ বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া গেলেও সেটা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। আবার কারখানা
থেকেই খোলা সয়াবিন তেলের দাম চাওয়া হচ্ছে সরকারি নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি।
মঙ্গলবার রাজধানীর
মিরপুর, কারওয়ান বাজারসহ বেশ কয়েকটি খুচরা ও পাইকারি বাজার ঘুরে পাম তেল ও সয়াবিন তেলের
সরবরাহ স্বল্পতার বিষয়ে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
কারওয়ান বাজারে রাকিব
স্টোর নামের মুদি দোকানের মালিক আব্দুর রাজ্জাক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,
সরবরাহ সঙ্কটের কারণে তিনি গত দুই দিন ধরে সয়াবিন তেল ও পাম তিল বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন।
এখন সেমাই, চিনিসহ ঈদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পণ্য বিক্রিতে মনোযোগ বাড়িয়েছেন।
পাশের দোকান আলী স্টোরের
জসিম উদ্দিন বলেন, সরকার নির্ধারিত দামে তেল কিনতে না পেরে প্রায় এক মাস ধরে তিনি খোলা
সয়াবিন ও পাম তেল বিক্রি বন্ধ রেখেছেন। গত এক সপ্তাহ ধরে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহও
কমে গিয়েছে। দুই একদিন পর ভোজ্যতেলই পাওয়া যাবে না বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি বলেন, “আমার দোকান
থেকে প্রতিদিন অন্তত ২০০ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হয়ে থাকে। কিন্তু দিনে এখন
১০০ লিটারও বিক্রি করতে পারি না। কারণ আমার কাছে তেল আসছে কম। অথবা আমি চাহিদামত সংগ্রহ
করতে পারছি না।
ফাইল ছবি
“বাজারে এখন পাম তেল
বিক্রি হচ্ছে প্রতিলিটার ১৬৫ টাকায়; কিন্তু সরকারি নির্ধারিত মূল্য হচ্ছে ১৩০ টাকা।
সেজন্য পাম তেল বিক্রি দুই সপ্তাহ ধরে বন্ধ রেখেছি।”
রাজধানী ঢাকার অন্যতম
প্রধান এ কাঁচাবাজারের পাইকারি দোকানগুলোতে খোঁজ নিয়েও ভোজ্যতেলের সরবরাহ সঙ্কটের কথা
শোনা যায়। এ বাজার থেকে অনেক এলাকার খুচরা দোকানিরাও তেল সংগ্রহ করে নিয়ে যান।
বেঙ্গল ট্রেডার্সের
মঈনুদ্দিন জানান, খোলা সয়াবিন ও পাম তেল সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে লিটারে ১০ টাকা
করে বেশি চাওয়া হচ্ছে। সেকারণে গত দুইদিন ধরে তেল সংগ্রহ বন্ধ রেখেছি। বোতলজাত সয়াবিন
তেলের সরবরাহ এতদিন স্বাভাবিক থাকলেও দুইদিন ধরে সেটিও কমে গেছে।
তার ভাষ্য, ভোক্তা
অধিকার থেকে বলে দিয়েছে পাকা রশিদের মাধ্যমে তেল সংগ্রহ করতে। কিন্তু ডিলাররা পাকা
রশিদ দিতে রাজি হচ্ছে না।
বিসমিল্লাহ ট্রেডার্সের
আব্দুর রহিম বলেন, গত সাত দিন ধরেই ভোজ্যতেলের সরবরাহ নাই। সে কারণে আমরাও নিয়মিত গ্রাহকদের
কাছে তেল বিক্রি করতে পারছি না। তারা চলে যাচ্ছে অন্য দোকানে।
বাজার পরিস্থিতির এমন
চিত্র তুলে ধরে জানতে চাইলে টিকে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতহার তাসলিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর
ডটকমকে বলেন, পরিশোধন কারখানাগুলো থেকে শতভাগ সরবরাহ না থাকলেও ৮০ শতাংশ চালু আছে।
আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় দেশের বাজারে তেলের দাম অনেক কম। বিশেষ করে ভারতে এখন সয়াবিন
তেলের লিটার ২১০ টাকা করে। এই পরিস্থিতিতে দেশের বাজারে ভোজ্যতেল মিলের বাইরে কেউ মজুদ
করছে কি না দেখতে হবে। অন্যথায় এতটা সঙ্কট হওয়ার কথা নয়।
গত মার্চে সরকার ভোজ্যতেলের
ওপর থেকে ভ্যাট ও শুল্ক প্রত্যাহারের পর দামেও সমন্বয় করেছে। নতুন দরে প্রতিলিটার বোতলজাত
সয়াবিন তেল ১৬০ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৪০ টাকা এবং পাম তেল ১৩০ টাকা নির্ধারণ করা
হয়।
এর আগে আগে আন্তর্জাতিক
বাজারে দাম বাড়ার কথা বলে দেশে ভোজ্যতেলের দাম সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অন্তত
৪০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কোথাও কোথাও খোলা সয়াবিনের দাম ২০০ টাকাও নেওয়া হয়। তখন
অনেক এলাকার অনেক দোকানে তেলেও পাওয়া যায়নি।
পরে সরকারের বিভিন্ন
পদক্ষেপে সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ার পাশাপাশি দামও কমে আসে। সেসময় তেল পরিশোধনকারী কারখানাগুলো
থেকে সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠার পর পরিদর্শন শুরু করে বিভিন্ন অনিয়মও পেয়েছিল
ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
ফাইল ছবি
দাম বেড়েছে সেমাইয়ের
এবারের ঈদে গত বছরের
তুলনায় সেমাইসহ মিষ্টান্ন তৈরিতে ব্যবহৃত উপকরণের দামও কিছুটা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন
বিক্রেতারা।
বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির
২০০ গ্রামের লাচ্ছা সেমাইয়ের প্যাকেটে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য লেখা রয়েছে ৪৫ টাকা, যা
গত বছর ৩৫ টাকা থেকে ৪০ টাকার মধ্যে ছিল।
কারওয়ান বাজারের মুদি
দোকানি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গতবছরের তুলনায় এবার ময়দা, চিনি, ডালটা, ঘিসহ সব ধরনের
পণ্যের দাম বেড়েছে। সেই হিসাবে লাচ্ছা সেমাই ও ছন সেমাইয়ের দামও কিছুটা বেড়েছে।
গত বছরের তুলনায় বনফুল,
আলাউদ্দিন, প্রিন্স, কুলসুন ও প্রাণের ২০০ গ্রামের প্যাকেটের দাম ১০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত
বেড়েছে বলে জানান তিনি।
বাজারে এখন প্যাকেটজাত
সাদা চিনি বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৮৫ টাকায়, আখের চিনি গিয়ে ঠেকেছে ১০০ টাকায়। এছাড়া
খোলা চিনি ৭৮ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া গত দেড় মাস ধরে
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা সুগন্ধি চিনিগুড়া চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৯০ টাকায়। এরফান,
মোজাম্মেল, প্রাণ ব্র্যান্ডের চিনিগুড়া চাল বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১৩০ টাকায়। গত দুই
মাসে সুগন্ধি চালের দাম কেজিপ্রতি অন্তত ১০ টাকা করে বেড়েছে বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন:
লিটারে ৮ টাকা কমলো সয়াবিন তেলের দাম
এখন থেকে ‘নিয়ম মানবে’ ভোজ্যতেলের মিলগুলো
ভোজ্যতেলে ‘অনিয়ম’: ৪ গ্রুপের বক্তব্যে সন্তুষ্ট নয় ভোক্তা অধিদপ্তর
ভ্যাট ছাড়ে আসা তেলের হিসাবও দিতে হবে
পাম অয়েল রপ্তানি নিষিদ্ধ করছে ইন্দোনেশিয়া
ভোজ্যতেল আমদানিতে ভ্যাট কমলো ১০%
দাম বাড়ানো নিয়ে পাল্টাপাল্টি: ভোজ্যতেল কারখানায় ‘অধিকতর তদন্তে’ যাবে মন্ত্রণালয়