ক্যাটাগরি

চাঁদের খরগোশ

কিন্তু কীভাবে সম্ভব মানুষের পৃথিবীতে দেবতা হয়ে ঘুরে বেড়ানো? মানুষের মধ্যে তিনি অদ্ভুত এক চেহারা নিয়ে ঘুরে বেড়াতে চাইলেন যাতে করে কেউ তাকে চিনতে না পারে। সেই অনুযায়ী সবুজ ও সোনালি রংয়ের পালকে অলংকৃত একটি চেহারা ধারণ করলেন তিনি, কিন্তু শরীরটা একেবারে মানুষের মতো। এবার তিনি শুরু করলেন তার ভ্রমণ। 

বড় বড় পাহাড়ে উঠলেন তিনি আর জঙ্গলের মধ্য দিয়ে অক্লান্ত হেঁটে চললেন। এই দীর্ঘ পথচলায় তিনি শেষ পর্যন্ত ক্লান্ত হয়ে পড়লেন। শরীরে শক্তি সঞ্চয় করার জন্য তিনি এক জায়গায় বিশ্রামের জন্য থামলেন। চারদিকে তিনি যা কিছুই দেখেছেন, সবই তার মধ্যে তৃপ্তি এনে দিয়েছিল। বনের ধারে একটি বড় পাথরের উপর বসলেন প্রকৃতির দেওয়া প্রশান্তিকে উপভোগ করার জন্য।

খুব সুন্দর এক গ্রীষ্মকালের এক রাতের বেলা। তারাগুলো মিটমিট করে জ্বলছে। যেন হীরের টুকরো দিয়ে নকশা করা একটা বিশাল কাপড় গোটা আকাশটা ঢেকে দিয়েছে, আর পাশে রয়েছে কমলা রংয়ের চাঁদ। চাঁদটা যেন সবকিছুর উপর নজরদারি করছে। এই দৃশ্যটা দেবতার কাছে মনে হলো সারা জীবনে দেখা এটাই সবচেয়ে সুন্দর।

কিছুক্ষণ পর তিনি লক্ষ্য করলেন তার পাশেই একটি খরগোশ মুখের মধ্যে কী একটা চিবিয়ে যাচ্ছে তার দিকে তাকিয়ে।

কী খাচ্ছ হে সুন্দর খরগোশ?

তাজা একটু ঘাস খাচ্ছি। তুমি চাইলে তোমাকেও একটু দিতে পারি।

তোমাকে অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা। তবে ঘটনা হলো আমরা মানুষরা তো ঘাস লতাপাতা খাই না।

তাহলে তোমরা কী খাও? তোমাকে দেখে তো ক্লান্ত মনে হচ্ছে, নিশ্চয়ই তোমার খুব ক্ষুধা লেগেছে।

ঠিকই বলেছ। মনে হচ্ছে মুখে দেওয়ার মতো যদি কিছু না পাই, তাহলে ক্ষুধায় মরে যাবো।

এই কথা শুনে খরগোশের খুব খারাপ লাগলো। এমনটা তো হতে দেওয়া যায় না। চিন্তায় পড়ে গেল খরগোশ। মহত্ত্বের অনুভূতি থেকে অবশেষে সে নিজেই দেবতার ক্ষুধা মেটাবার জন্য প্রস্তাব করলো।

আমি অতি ক্ষুদ্র এক খোরগোশ, তবে তোমার খাদ্য হিসেবে আমি কাজে লাগতে পারি। আমাকে খাও, তুমি আর ক্ষুধায় মরবে না।

দেবতা খুব আলোড়িত হলেন এই ছোট্ট প্রাণিটির কোমলতা আর দয়ায়। দেবতার জীবন রক্ষার জন্য কিনা তার নিজের জীবনটাই উৎসর্গ করতে চাইছে!

তোমার কথাগুলো আমাকে আবেগাক্রান্ত করেছে, খরগোশটির মাথায় আদর করতে করতে বললেন তিনি। আজ থেকে, তুমি সবসময় স্মরণীয় হয়ে থাকবে। খুব ভালো ব্যবহারের কারণে এটা তোমার প্রাপ্য।

দেবতা তার হাত দিয়ে খরগোশটাকে এত উপরে তুললেন যার ফলে ওর শরীরটা গোলগাল চাঁদের উপর একটা ছবির মতো দেখাচ্ছিল। তারপর তিনি খুব সাবধানে খরগোশটাকে মাটিয়ে নিয়ে রাখলেন। খরগোশ বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করলো চাঁদের উপর তার নিজের উজ্জ্বল একটা ছবি।

শত শত বছর পেরিয়ে যাবে, মানুষও বদলে যাবে অনেক, কিন্তু তোমার স্মৃতিটা সবসময় ওখানে থেকে যাবে।

দেবতা তার অঙ্গীকার রাখলেন। আজও রাতটা যখন পরিষ্কার থাকে, তখন যদি তুমি ভালো করে গোলাকার চাঁদের দিকে তাকাও, তাহলে ওই দয়ালু খরগোশটার একটা ছবি তুমি দেখতে পাবে যে কিনা অনেক অনেক বছর আগে দেবতা কেৎসালকোয়াতলকে সাহায্য করতে চেয়েছিল।

 

কিডজ পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com । সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!