ক্যাটাগরি

ছাদবন্ধু কাজলা

যখন
বন্ধুরা আসে না তখন আমার বন্ধু হয় একটি কাক। সেও একা। কাকটা এসে আমার আশপাশে ঘুরতে থাকে
আর কা কা বলে ডাকতে থাকে। কাকে ডাকে সে? আমাকে? বন্ধুরা নাই বলে ওরও হয়তো একা লাগছে
আমার মতো।

প্রায়ই
ঘটে এমন ঘটনা। আমার বন্ধুরা না আসলেই কোথা থেকে উড়ে এসে কাকটা কা কা করে ডাকতে থাকে।
ভাবি কাকটা হয়তো আমার একাকীত্ব অনুভব করতে পারে। সেজন্য সে আমার আশপাশে ঘোরাঘুরি করতে
থাকে।

আমার
সেই কাক বন্ধুর নাম আমি দিয়েছি ‘কাজলা’। কারণ আমি ওর চোখে এক ধরনের
মায়া দেখতে পাই এবং মনে হয় ও বুঝি মাত্র কাজল দিয়ে এসেছে। আস্তে আস্তে ও আমার
খুব কাছের বন্ধু হয় ওঠে। সে প্রতিদিন আমাকে নতুন
নতুন গান শোনায়, আমার সঙ্গে গল্প করে, আমাকে তার নাচ দেখায়। আমি মাঝে মাঝে ওকে বই পড়ে
শোনাই। এভাবে কাজলার সঙ্গে আমার বিকেলটা ভালোই কাটতে থাকে।

একদিন
ছাদে উঠে আমি কাজলার জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। কিন্তু সে আসে না। অপেক্ষা করতে করতে
সন্ধ্যা হয়ে যায়। তবুও কাজলার দেখা মিলে না। আমার ভীষণ দুশ্চিন্তা হয়ে। বারবার মনে
হতে থাকে কেউ ওকে ধরলো না তো! এদেশে পাখি বা কাক ধরার মানুষের অভাব নেই, পাখি চালান
দেওয়াই তাদের ব্যবসা। তারা কেউ কাজলাকে ধরল নাতো! নানা চিন্তা ভর করে মনে।

পরেরদিন
বিকেলেও আমি কাজলার জন্য অপেক্ষা করি। কিন্তু সেদিনও কাজলা এলো না। আমার মনটা ছটফট
করতে থাকে। এভাবে বেশ কিছুদিন কেটে যায়। তখন আমি বন্ধু কাজলার জন্য একাধারে অপেক্ষা
করি। কিন্তু সে তো আর আসে না। মন খারাপ হলে মা নানা কথা বলে আমাকে সান্ত্বনা দেয়। এভাবে
বেশ কয়েকদিন কেটে যায়।

একদিন
ভোরবেলা মা আমাকে খুব তাড়াহুড় করে ডেকে উঠালো। তারপর বলল,
আমি কাজলার খোঁজ পেয়েছি। আমি তো খুশি। কিন্তু এরপরের কথা শুনে বুকটা কেমন যেন করে উঠে।
একটি লোক নাকি তার গায়ে গরম পানি ঢেলে দিয়েছে এবং সে যন্ত্রণায় মারা গিয়েছে। বাড়ির পাশেই
পড়ে আছে তার দেহ।

মার
কথা শুনে আমার মনে হচ্ছিল আমি বুঝি কোনো স্বপ্ন দেখছি। আমি মাকে ধরে কান্না শুরু করি।
মা আমাকে বিভিন্নভাবে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলো। কিন্তু কিছুতেই আমার মন মানতে
চাইছিলো না। কাজলা বেঁচে নেই এটা মানতে পারছিলাম না। আমি ভীষণ ভাবে ভেঙে পড়েছিলাম।

তারপর
থেকে আমি কাজলার একটা ছবি এঁকে আমার ঘরে টাঙিয়ে রেখেছি। যখনই আমার ওর কথা মনে পড়ে আমি
ওই ছবির সঙ্গে কথা বলি। হয়তো ওর চেয়ে তুচ্ছ জীব শহরে আর নেই, তবুও ওর সঙ্গে কাটানো
কয়েকটা দিনের স্মৃতি আমার আজীবন মনে থাকবে। তবে আমার ছাদবন্ধু কাজলাকে যারা মেরেছে
তাদেরকে আমি কখনই ভালোবাসি না। 

 লেখক: শিক্ষার্থী, অষ্টম শ্রেণি, নালন্দা উচ্চ বিদ্যালয়

কিডজ
পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি,
মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ
স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের
নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!