তবে লঞ্চ মালিকদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল সংস্থা’ এই সিদ্ধান্ত নেয়নি। তাই কেউ কেউ বাড়ালেও কোনো কোনো মালিক ভাড়া বাড়াননি।
বৃহস্পতিবার থেকে এই বিশেষ সার্ভিস শুরু করার কথা জানিয়েছেন লঞ্চ মালিকরা।
বিশেষ সার্ভিসের জন্য লঞ্চ ভাড়া ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের।
বিশেষ সার্ভিস চালু করা লঞ্চ মালিকদের দাবি, সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে এক টাকাও বেশি নিচ্ছেন না তারা। ডেকে এবং কেবিনে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে এতদিন তারা কম নিতেন; এখন যে ভাড়া নিচ্ছেন তা সরকার নির্ধারিত ভাড়ার মধ্যেই আছে।
সরকারের প্রজ্ঞাপনে ডেক ও কেবিনের ভাড়া নির্ধারণ করা আছে। তবে ডেকে কয়জন যাত্রী বহন করা যাবে তা ঠিক করা নেই। বিভিন্ন উৎসবে – বিশেষ করে দুই ঈদে দেশের বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী লঞ্চগুলোতে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করতে দেখা যায়।
বিআইডব্লিউটিএ বলছে, ২০২১ সালের ৮ নভেম্বরের পর ভাড়া বাড়ানো সংক্রান্ত আর কোনো আদেশ সরকার জারি করেনি।
ঢাকা-বরিশাল রুটের যাত্রীবাহী ‘এমভি কীর্তনখোলা’ লঞ্চের মালিক মঞ্জুরুল আহসান ফেরদৌস বলেন, গত ২ বছর কোভিড মহামারীর কারণে বেশিরভাগ মানুষ রাজধানীতেই ঈদ করেছেন। এ বছর কোভিড পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক থাকায় রেকর্ড সংখ্যক যাত্রী পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে বাড়ি ফিরবেন। তাই কেবিনের চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ।
যাত্রীদের বাড়তি চাপ সামাল দিতে ২৮টি বিলাসবহুল লঞ্চ প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান মঞ্জুরুল আহসান।
এদিকে, ঈদকে সামনে রেখে টিকেট কাটতে আসা যাত্রীরা লঞ্চ ভাড়া বৃদ্ধির অভিযোগ করছেন।
যাত্রীরা বলছেন, বিশেষ সার্ভিসের নামে ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে লঞ্চ মালিক কর্তৃপক্ষ। যেদিন থেকে বিশেষ সার্ভিস শুরু হবে ওই দিন থেকেই ডেকে ৫০ এবং আসনভেদে কেবিন ভাড়া ২০০ টাকা পর্যন্ত বেশি গুনতে হবে।
বরিশাল শহরের আলেকান্দা এলাকার বাসিন্দা আলী আহমেদ খান মঙ্গলবার সকালে প্যারারো রোডে ‘সুরভী’ লঞ্চের টিকিট কাউন্টারে দাঁড়িয়ে বলেন, আগে ডেকের ভাড়া দেড়শ থেকে ২শ টাকা ছিল; সিঙ্গেল কেবিন ৯শ থেকে এক হাজার টাকা এবং ডাবল কেবিনের ভাড়া ছিল ১৮শ থেকে ২ হাজার টাকা। তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে নভেম্বরে লঞ্চ ভাড়া বাড়িয়েছিল মালিকরা। তখন সিঙ্গেল কেবিন ১৩শ-১৪শ টাকা, ডাবল কেবিন ২৪শ থেকে ২৫শ টাকা এবং ডেকের ভাড়া আড়াইশ থেকে ৩শ টাকা নির্ধারণ করা হয়। গত প্রায় ৬ মাস এভাবেই চলে আনছে।
তিনি বলেন, এবার ঈদকে সামনে রেখে হঠাৎ ২৭ এপ্রিল থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকা থেকে বরিশাল এবং ৫ মে থেকে ১০ মে পর্যন্ত বরিশাল-থেকে ঢাকা রুটে ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে।
মোস্তাফিজুর রহমান রানা নামে এক লঞ্চ যাত্রী বলেন, ২৭ এপ্রিল থেকে ঢাকা-বরিশাল রুটে বিশেষ সার্ভিস পরিচালনা করবে সুরভী লঞ্চ কোম্পানি। রাজধানীর সদরঘাট থেকে প্রতিদিন তাদের দুটি করে লঞ্চ ছেড়ে আসবে। এখন তাদের সিঙ্গেল কেবিন (এসি-নন এসি) ১৪শ থেকে ১৫শ টাকা, ডাবল (এসি-নন এসি) ২৬শ থেকে ২৮শ টাকা এবং ফেমিলি কেবিন ভাড়া ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
২৮ এপ্রিল থেকে লঞ্চের বিশেষ সার্ভিস পরিচালনা করবে সুন্দরবন, পারাবত, কীর্তনখোলা, মানামী, কুয়াকাটা লঞ্চ। বিশেষ সার্ভিস উপলক্ষে কয়েকটি ছাড়া প্রায় লঞ্চেই ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে।
ঢাকা-বরিশাল রুটে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক (চারটি) লঞ্চ চলাচল করে পারাবত কোম্পানির।
পারাবত বরিশাল অফিসের ম্যানেজার সেলিম আহম্মেদ জানান, তাদের সিঙ্গেল কেবিনের ভাড়া আগের মত ১৪শ টাকাই রাখা হচ্ছে। তবে ২৪শ টাকার ডবল কেবিনে ৪শ টাকা বাড়িয়ে ২৮শ টাকা করা হয়েছে।
কুয়াকাটা-২ লঞ্চের ম্যানেজার নাসির হোসেন জানান, বিশেষ সার্ভিসের জন্য তারা সিঙ্গেল কেবিনের ভাড়া ১শ টাকা বাড়িয়ে ১৫শ টাকা করেছেন। ডাবল, ফ্যামিলি ও ভিআইপি কেবিনের ভাড়া আগের মতোই রয়েছে। ডেকের ভাড়া সাড়ে ৩শ টাকা করা হয়েছে।
কুয়াকাটা লঞ্চ শুধু ২৯ এপ্রিল বিশেষ সার্ভিস পরিচালনা করবে বলে জানান নাসির হোসেন।
তবে এমভি কীর্তনখোলা লঞ্চের ম্যানেজার স্বপন আহম্মেদ বলেন, তারা ঈদ উপলক্ষে কেবিনের ভাড়া বৃদ্ধি করেননি। আগের ভাড়াতেই কেবিনের টিকিট বিক্রি করছেন।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল সংস্থার সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, বিশেষ সার্ভিস পরিচালনা করতে লঞ্চ মালিকদের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হবে; কারণ ঢাকা থেকে যাত্রী নিয়ে বরিশাল ঘাটে নামিয়ে দিয়ে, খালি লঞ্চ ঢাকায় চালিয়ে যেতে হবে। ফলে যাওয়ার তেল খরচ কিছুটা পুষিয়ে নিতে কেবিনে ২/১শ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
“তবে এটি সরকার নির্ধারিত ভাড়ার বাইরে নয়।”
তিনি জানান, ডেকের ভাড়া ৩৬৬ টাকা, সিঙ্গেল কেবিন এক হাজার ৪৬৪ টাকা ও ডাবল কেবিন ২ হাজার ৯২৮ টাকা সরকারই নির্ধারণ করেছে।
সাইদুর রহমান রিন্টুর মালিকানাধীন সুন্দরবন লঞ্চেও ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। সিঙ্গেল কেবিনে ১০০ টাকা, ডাবল কেবিনে ২০০ টাকা, ভিআইপি কেবিনে ৫০০ টাকা ও ডেকে ৫০ টাকা বৃদ্ধির কথা জানিয়েছে কোম্পানিটি।
তারা ২৮ এপ্রিল থেকে ঢাকা-বরিশাল রুটে বিশেষ সার্ভিস পরিচালনা করবে বলে জানান রিন্টু।
এদিকে, ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাননি বলে জানিয়েছেন বরিশাল বিআইডব্লিউটিএ-এর যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান।
তিনি বলেন, ২০২১ সালের ৮ নভেম্বর যাত্রীবাহী লঞ্চের নতুন ভাড়া সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। প্রতি কিলোমিটার দূরত্বের জন্য ৬০ পয়সা বৃদ্ধি করা হয়। আগে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া ছিল ১ টাকা ৭০ পয়সা। তা বৃদ্ধি করে ২ টাকা ৩০ পয়সা করা হয়েছে। ১০০ কিলোমিটারের পর প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৪০ পয়সার ভাড়া বৃদ্ধি করে ২ টাকা করা হয়েছে।
বরিশাল বিআইডব্লিউটিএ-এর যুগ্ম পরিচালক (নৌ নিরাপত্তা ও সংরক্ষণ) আজগর আলী বলেন, ঢাকা-বরিশাল নৌ-পথের মোট দূরত্ব ১৬৮ কিলোমিটার। সে অনুযায়ী ঢাকা-বরিশাল রুটে লঞ্চে ডেকের ভাড়া ৩৬৬ টাকা। নিয়মানুয়ায়ী ডেকের ভাড়ার চেয়ে চার গুণ ভাড়া হবে দ্বিতীয় শ্রেণির সিঙ্গেল কেবিনের প্রতি আসনে।