পরীক্ষাভীতি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা, প্রস্তুতি এবং ফলাফলে সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে। অনেক শিক্ষার্থী কখনোই এ ভীতি কাটিয়ে উঠতে পারে না। ফলে পরবর্তীতে তাদের ভেতর উদ্বেগ এবং বিষণ্নতা দেখা দেয়৷ ২০১০ সালের একটি গবেষণা অনুযায়ী ১০ থেকে ৪০ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রীদের মনে পরীক্ষা নিয়ে উদ্বেগ কাজ করে।
পরীক্ষাভীতির কিছু শারীরিক প্রভাব
১. ঘুম না হওয়া
২. ক্লান্তি অনুভব হওয়া
৩. প্রশ্ন পড়ার পর কোনকিছু মনে করতে না পারা
৪. পেট ব্যাথা, মাথা ব্যাথা
৫. বমিভাব
৬. পেটে সমস্যা
পরীক্ষাভীতির কিছু মানসিক প্রভাব
১. নিজেকে নিয়ে সন্দেহে থাকা। আমি পরীক্ষায় পাশ করবো না, আমি ভালো নাম্বার পাবো না, আমি সময়ের আগে পড়া শেষ করতে পারবো না, ইত্যাদি চিন্তা
২. ভয় অনুভব হওয়া, হাত পায়ে ঠান্ডা অনুভব হওয়া
৩. মানসিক চাপ অনুভব হওয়া
৪. হতাশ অনুভব হওয়া
৫. নিজেকে ‘যথেষ্ট যোগ্য’ মনে না করা, ‘আমি পারবো না’, ‘আমাকে দিয়ে হবে না’ ইত্যাদি নেতিবাচক চিন্তা করা
৬. নিজের ও অন্যের উপর রাগ অনুভব হওয়া
পরীক্ষাভীতির কারণ
১. পরীক্ষায় নাম্বার কম আসবে বা অকৃতকার্য হবে এমন ভয় কাজ করা
২. আত্মনিয়ন্ত্রণ হারানোর ভয়
৩. অন্যদের ছোট করার ভয় (বাবা-মা, শিক্ষক, আত্মীয়)
৪. সামান্য বিষয়কে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া ও নেতিবাচক চিন্তা করা। যেমন, একটি পরীক্ষায় নাম্বার কম পেলে বা কোন একটি অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে না পারলে ‘সবকিছু শেষ হয়ে গেছে’ এ ধরনের চিন্তা করা
৫. নিজেকে নিয়ে অবাস্তব প্রত্যাশা করা। ‘একদিনে সব পড়া শেষ করতেই হবে’, ‘আমাকে প্রথম হতেই হবে’, ‘ভালো ফলাফল না করতে পারলে আমি জীবনে কিছুই করতে পারবো না’ ইত্যাদি
৬. পরীক্ষার ফলাফলকে নিজের আত্মবিশ্বাসের মাপকাঠি মনে করা
৭. আত্মবিশ্বাস কম বা একদমই আত্মবিশ্বাস না থাকা, অথবা নিজেকে নিয়ে নেতিবাচক চিন্তা করা
কীভাবে পরীক্ষা সংক্রান্ত ভীতি ও দুঃশ্চিন্তা কমাবেন
সন্তানের পরীক্ষা সংক্রান্ত ভীতি ও দুঃশ্চিন্তা কমাতে এবং ভালোভাবে পরীক্ষার প্রস্তুতি যা করতে পারেন-
১. ইতিবাচক দিকগুলোতে মনযোগ দিন। সন্তানের ইতিবাচক দিকগুলো সন্তানকে বারবার মনে করিয়ে দিন। সন্তান কোন বিষয়গুলোতে তুলনামূলক ভালো তা তাকে জানান। সন্তান পড়াশোনায় ভালো ফলাফল করার জন্য যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে (রুটিন করে পড়া, নোট করা) তা যে আপনি জানেন তাও সন্তানকে জানাতে ভুলবেন না। মনে রাখবেন, পরীক্ষার ফলাফল ভালো না করলে সন্তানের ভবিষ্যতে কী কী ক্ষতি হবে তা সন্তানকে বারবার মনে করিয়ে দিলে সন্তানের ভেতর ভয় তৈরি হবে, সে ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে পারবে না। কিছু ক্ষেত্রে এসব উদাহারণ জেদ তৈরি করতে পারে, ‘আমিতো এমনিতেই ভালো নম্বর পাবো না। এতো পড়াশোনা করে কী হবে!’।
২. সন্তানকে ভালো অভ্যাস তৈরিতে উৎসাহ দিন। যেমন, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, পর্যাপ্ত ঘুম, খেলাধুলা করা ইত্যাদি।
৩. সন্তানকে সহায়তা করুন যেন সে এক সময়ে অনেকগুলো বিষয় বা কাজে মনযোগ না দিয়ে একটি বা দুটি বিষয় বা কাজে মনযোগ দেয়। পড়াশোনা করার সময় রুমে যে কোন ধরনের শব্দ বন্ধ রেখে শান্ত পরিবেশে পড়াশোনার চেষ্টা করতে হবে। অতিরিক্ত শব্দ মনযোগে বাধা দেয়।
৪. পরীক্ষার আগে বাসায় প্রশ্ন তৈরি করে সন্তানের পরীক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করুন। এতে সন্তানের আত্মবিশ্বাস বাড়বে, সে পরবর্তীতে স্কুলের পরীক্ষার সময় শান্ত থাকতে পারবে এবং তুলনামূলক ভালোভাবে প্রশ্নের উত্তর লিখতে পারবে।
৫. রুটিন করে নির্দিষ্ট সময় পড়াশোনা করার পর সন্তানকে বিশ্রাম নিতে দিন। এসময় শিশু ঘুমিয়ে নিতে পারে বা শুধু চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকতে পারে। বিশ্রাম করলে শিশু নতুনভাবে কাজ করার মতো শক্তি ফিরে পাবে।
৬. সন্তান ঘরে বিশ্রাম নিতে না চাইলে তাকে কিছু সময়ের জন্য বাসার বাইরে খোলা বাতাসে সময় কাটাতে দিন। শিশু খেলাধুলা করতে চাইলে তাকে খেলতে দিন।
৭. সন্তানকে পাঠ্যবইয়ের বাইরে রূপকথা, রহস্য গল্প কিংবা এমন সৃজনশীল
বই কিনে দিন, নিজে পড়ুন এবং সন্তানকে পড়তে উৎসাহিত করুন। এসব বই তার চিন্তাশক্তি ও
বুদ্ধিমত্তা বাড়াবে।
৮. অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও উদ্বেগ আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এতে আমাদের মস্তিষ্কে কম পরিমাণে অক্সিজেন সরবরাহ হয়। ফলে একজনের কোন কিছু মনে করতে কষ্ট হয় বা মনে করতে ব্যর্থ হয়। এছাড়া মনযোগেও ব্যাঘাত ঘটে। পরীক্ষার আগে বা পরীক্ষা চলাকালীন শিশু মানসিক চাপ অনুভব করলে জানা জিনিস মনে করতে পারে না ও লিখতে পারে না। তাই শিশুকে ডিপ ব্রিদিং বা গভীরভাবে শ্বাস নেওয়ার পদ্ধতি শেখাতে হবে।
ডিপ ব্রিদিংয়ের নির্দেশনা- নাক দিয়ে দীর্ঘশ্বাস নিন। কিছুক্ষণ শ্বাস ধরে রাখুন। এবার মুখ দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। শ্বাস নেওয়ার তুলনায় শ্বাস ছাড়ার সময় তুলনামূলক বেশি সময় নিন। ডিপ ব্রিদিং নেওয়া হলে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক হবে এবং মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়বে।
৯. পরীক্ষার প্রস্তুতি, পড়াশোনার সময় (ঘণ্টা) ও পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে সন্তানকে অন্যের সঙ্গে তুলনা করা থেকে বিরত থাকুন। আপনার সন্তানও যদি অন্যের পরীক্ষার প্রস্তুতি বা ফলাফল জেনে নিজেকে অন্যের সঙ্গে তুলনা করে তাহলে আপনার সন্তানকে তার ইতিবাচক দিকগুলো মনে করিয়ে দিন। অন্যের ভালো বা খারাপ প্রস্তুতির সঙ্গে আপনার সন্তানের প্রস্তুতি ও ফলাফল যে কোনভাবে জড়িত নয় তা বুঝিয়ে বলুন৷ তুলনা শুধু দুঃশ্চিন্তা বাড়িয়ে দেয় যা পরবর্তীতে শিশুর ভেতর মানসিক চাপ ও ভীতি তৈরি করে। শিশু আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে।
১০. সন্তানের পরীক্ষাভীতি, উদ্বেগ ও অতিরিক্ত নেতিবাচক চিন্তা কোনভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে একজন অভিজ্ঞ সাইকোলজিস্টের পরামর্শ নিন।
কিডজ পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না! |