ক্যাটাগরি

ভূতের রূপকথা

এইটুকু বলে রামিনের বড় বড় চোখ! রাইয়ান ভয়ে ভয়ে প্রশ্ন করে, ‘তারপর?’

‘তারপর আর কি! ট্যাং ট্যাঙিয়ে হেঁটে এসে সে তোমার রূপকথার বইটা হাতে নেয়। পাতা উল্টায়। পড়ে রূপকথার কাল্পনিক ঘোড়া, জাদুমন্ত্র, পরি, দৈত্যের গল্প। পড়া শেষ করে ভূতটা আবার টুপ করে ওর নিজের বইয়ের ভেতর ঢুকে যায়।’

‘ভূতকে দেখে তুমি ভয় পাওনি!’ রাইয়ান জানতে চায়।

রামিন বলে, ‘পেয়েছি পেয়েছি! কিন্তু আমাকে দেখেনি সে, আমি তো কাঁথার ভেতরে মুখ লুকিয়ে ওর কাণ্ডকারখানা দেখছিলাম।’

‘ভূত দুঃখী মৎস্যকন্যার গল্পটা পড়েনি?’

‘হ্যাঁ! পড়েছে। পড়ার সময় ভূতের চোখ দিয়ে টপটপ করে পানিও পড়ছিল। ভূতকে কাঁদতে দেখে খুব মায়া হয়েছিল আমার।’

‘আহারে! ভূতের চোখের পানি মুছে একটু আদর করে দিতে পারতে!’

‘না ভাই! তখন ভূত যদি আমার ঘাড় মটকে দিত? দাদী বলেছে শুনোনি, ভূতের ভালো করতে গেলে ভূত উল্টো কামড়ে দেয়। আর আমি আদর না করলেই কি! একটু পরই ভূত খিকখিক করে হাসছিল।’

‘এমা! হাসছিল কেন!’

‘কেন বুঝো না! জাদুমন্ত্র গল্প পড়ে। ওই গল্পের জাদুকরের নাম হাসি মিয়া। হাসি মিয়া তাদের গ্রামের সবাইকে জাদুমন্ত্র দিয়ে হাসিখুশি রাখেন। সেটা পড়ে ভূতের সেকি হাসি!’

‘হাসি মিয়া কী জাদুমন্ত্র পড়তেন আমাকে বলবে? আমিও জাদুমন্ত্র দিয়ে সবাইকে হাসিখুশি রাখব।’

‘ওটা তো ভুলেই গেছি। এখন তাহলে ঘুমিয়ে পড়ি। ঘুমের মধ্যে হাসি মিয়া আবার এলে মন্ত্রটা শিখে নেব।’ বলেই রামিন টুপ করে ঘুমিয়ে পড়ল।

রামিন, রাইয়ান জমজ ভাই। দেখতে ওরা একরকম হলেও ওদের পছন্দ আলাদা। রামিন মুড়ি খেতে পছন্দ করে, রাইয়ানের চিড়া ভালো লাগে। রামিন ক্রিকেট ভালোবাসে, রাইয়ান ফুটবল। রামিনের পছন্দ ভূতের গল্প, রাইয়ানের চাই রূপকথা।

ওরা একই বিছানায় ঘুমায়। ঘুমানোর সময় ওদের সিথানে থাকে বই। ওরা বই পড়তে পড়তে ঘুমায়। গতরাতে রামিনের সিথানে ছিল ভূতের বই, রাইয়ানের সিথানে রূপকথার। রামিনের বইয়ের একটা ভূত রাইয়ানের রূপকথা বইটা পড়ছিল, ঘুমে দেখা সেই স্বপ্নের কথাই রামিন এতক্ষণ রাইয়ানকে বলছিল।

শনিবার রাত। ‘হঠ্যৎ দেখি রূপকথার বইটা থেকে একটা ইয়াব্বড় দৈত্য বেড়িয়ে এলো।’

এইটুকু বলে রাইয়ানের খাড়া খাড়া চুল। রামিন রাইয়ানের চুলে হাত বুলিয়ে জানতে চায়, ‘তারপর! তারপর!’

‘তারপর আর কি! দ্রিম দ্রিম করে হেঁটে এসে সে তোমার ভূতের বইটা হাতে নেয়। পাতা উল্টায়। পড়ে মামদো ভূত, গেছোভূত, বেঁশোভূতের গল্প। পড়া শেষ হলে দৈত্যটা আবার দ্রিম করে ওর বইয়ের ভেতর ঢুকে যায়।’

‘দৈত্যকে দেখে তুমি ভয় পাওনি?’

‘পাইনি আবার! দৈত্যটাকে দেখেই মনে হয়েছিল আমাকে বুঝি উঠিয়ে নিয়ে যাবে দৈত্যপুরীতে। কিন্তু কি ভালো সে! একটু বকাও দেয়নি।’

‘তুমি তো গুড বয়, তাই বকেনি। আচ্ছা! দৈত্যটা মেছোভূতের গল্প পড়েনি?’

‘হ্যাঁ! পড়েছে। মেছোভূতের গল্পটাই আমার অনেক মজা লেগেছে। মেছোভূত ভারি মাছ খেতে ভালোবাসে। সে কী করে জানো! গ্রামের পুকুরধারে দাঁড়িয়ে থাকে, বাজার থেকে কেউ মাছ কিনে ওই পথ দিয়ে গেলেই ফুসলিয়ে তাকে বাঁশবাগানে নিয়ে যায়। ভয় দেখিয়ে সব মাছ খেয়ে ফেলে।’

মেছোভূতের কথা শুনে রামিন হিহি করে হাসে।

‘হাসছো কেন?’ রাইয়ান জানতে চায়।

রামিন বলে, ‘আমিও তো একটা মেছোভূত, কারণ আমি ভারি মাছ খেতে ভালোবাসি। তাই হাসছি।’

‘তুমি মেছোভূত হলে আমি কী?’

‘তুমি জাদুকর হাসি মিয়া, জাদুমন্ত্র দিয়ে সবাইকে হাসিখুশি রাখবে।’

‘ঠিক বলেছ, কিন্তু মন্ত্রটাই তো জানি না।’

‘কাল রাতে স্বপ্নে এসেছিল হাসি মিয়া, আর আমাকে মন্ত্রটাও শিখিয়ে গেছে।’

নিজিং হাসিং নিজিং খুশিং

সবিং হাসিং সবিং খুশিং

এরকম একটা উদ্ভট মন্ত্র শুনে রাইয়ানের কৌতুহলী প্রশ্ন, ‘এটার অর্থ কী?’

‘রাামিন হাসিমুখে উত্তর দেয়, ‘অর্থ হলো- নিজে হাসিখুশি থাকলেই সবাইকে হাসিখুশি রাখা যায়।’

কিডজ পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!