ক্যাটাগরি

মাছের সুড়ঙ্গে পাতলাদা

আমরা চুপচাপ মন্তাজ মিয়ার বাড়ির পেছনে ঝোপের আড়ালে বসে আছি। মশার বীরবিক্রম আক্রমণে দিশেহারা। কিন্তু পাতলাদার হুকুম, নো শব্দ। নো টব্দ!

মন্তাজ মিয়ার বাড়ির পেছনে বিরাট একটা পুকুর। পুকুরে হরেক রকম মাছ সারা দিন রাত খলবল করে। কিন্তু কাউকে একটা মাছ ধরতে দেয় না। নিজেও ধরে না। এমনকি কারও কাছে বিক্রিও করে না। আজব কারবার।

আমরা কয়েকদিন আগে মন্তাজ মিয়ার বাড়ি গিয়েছিলাম। পাঠিয়েছিল পাতলাদাই। দেড় হাজার টাকা নোটের নগদ নিয়েই গিয়েছিলাম। পাতলাদার ছোট মামার বড় ছেলের শ্যালকের মেয়ের ছেলের খতনা। খতনায় বিরাট খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করছে। কিন্তু সমস্যা হলো মাছ? কোথাও ভালো টাটকা মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা গিয়ে কেবল বললাম, মন্তাজ চাচা আমাদের পাতলাদা পাঠিয়েছে।

পাতলাদা? মন্তাজ মিয়া আকাশ থেকে পড়ে। মনে হয় সাত জনমেও পাতলাদার নাম শোনেনি। অথচ পাশাপাশি বাড়ি। আমাদের অবাক করে দিয়ে পাল্টা মন্তাজ মিয়া জিজ্ঞেস করে, পাতলাদা করে কী? বাড়ি কোথায়?

আপনার পাশের বাড়ির বিখ্যাত পাতলাদা!
হাত পা ছুড়ে ব্যাকুল একটা কিছু বলতে যাচ্ছিল, মন্তাজ মিয়া ভয়ানক গম্ভীর গলায় বলল, ওসব পাতলা মোটা থাক। আগে বলো কী বলতে এসেছো?

মাছ চাই আমরা, চট করে বলে সাগর।

আঁতকে ওঠে মন্তাজ মিয়া, মাছ? কিসের মাছ?

আপনার পুকুরের মাছ। আমরা নগদ টাকা এনেছি। নগদ টাকা দিয়েই নেবো।

তেলে বেগুনে জ্বলে উঠবার ঘটনা শুনেছি,
এই প্রথম চোখে দেখলাম মন্তাজ মিয়া চার হাত পায়ে জ্বলে ওঠে, আমাদের দিকে মেরে কেটে তেড়ে আসে। চোর ডাকাত যেভাবে তাড়িয়ে দেয়, আমাদের প্রায় সেভাবে তাড়িয়ে বাড়ির বাইরে এনে দরজা বন্ধ করে নিজের মনে গজরাতে থাকে, আমার বাড়ির পুকুরে না হয় কয়েকটা মাছ হয়েছে। তাই বলে সব ব্যাটা সব সময় আমার পুকুরের মাছ চাইতে আসবে কেনো? ব্যাটাদের আমি পুলিশে দেবো। আমাকে চেনে না? আমার নাম মন্তাজ মিয়া। আমি কি কাউরে ভয় পাই? আবার আসুক মাছ নিতে, হাত পা ঠ্যাং একেবারে ভেঙ্গে দেবো..

সব শুনে পাতলাদা খুব গম্ভীর হয়ে আমাদের বললো, তোরা বাড়ি যা। আমি দেখছি। ওর পুকুরের মাছ দিয়ে ওকে মাছের মুড়ো খাওয়ার ব্যবস্থা করতেছি।

সেই যে পাতলাদা বললো, তোরা বাড়ি যা, আমি দেখছি তাও প্রায় পনেরো বিশ দিন হয়ে গেলো। পাতলাদার কোনো খবর নেই আর সেই দেখারও কেনো দেখা নেই। আমার আবার অনেকদিন পর অম্বলের ব্যাথাটা উঠেছে। বিছানায় কোকাচ্ছি। অল্প অল্প আম কাঁঠালের ঝোল খাচ্ছি, হঠাৎ জানালায় ছটফটানি। ঘটনা কী? জানালা খুলে দেখি মিস্টার কালো কাক এসেছে। মুখে একখানা চিঠি। কালো কাক এবং কালো কাকের মুখে চিঠি দেখে বুঝেছি, পাতলাদার খবর আছে।

দ্রুত দরজা খুলে বাইরে এসে কালো কাকের সামনে দাঁড়াই। কাক উড়ছে আর ডানা ঝাপটাচ্ছে, তাড়াতাড়ি তোমার চিঠি নাও গো কম্বল মিয়া।

কম্বল মিয়া মানে? চিঠি নিতে নিতে প্রশ্ন করি।

অম্বলের ব্যথায় তো মিয়া সারাদিন কম্বল গায়ে শুয়ে থাকো, তাই মজা করে তোমাকে কম্বল মিয়া ডাকলাম। যদিও তোমার নাম ভোম্বল। খি খি… হাসিতে মাথার উপর ডানা দিয়ে কয়েকটা ঝাকানাকা বাড়ি দিয়ে হাসতে হাসতে উড়ে যায় পাতলাদার ডাকপিওন, কালো কাক। আমি অবাক হয়ে তাকাই চলে যাওয়া কাকের দিকে, কাকটা তো কথা বলতো কম। প্রয়োজনীয় কথা বলে উড়ে যায়। অথচ আজ!

কাক নিয়ে পরে ভাবা যাবে, আগে দেখি চিঠিতে কী আছে? ভাবতে ভাবতে চিঠি খুলে পেলাম পাতলাদার জরুরি চিঠি। আগামীকাল বিকেল সাড়ে আটটায় আমার বৈঠকখানায় জরুরি জনসভা। জনসভা? আমি আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারি না। বিকেল সাড়ে আটটা! সেটা আবার কী? কখনও বিকেল কি সাড়ে আটটায় হয়? আবার বৈঠকখানায় জনসভা? বৈঠকখানায় বড় জোর পনেরো থেকে বিশজনের মতো লোক বসতে পারে। জনসভাটা হবে কোথায়? কিসের জনসভা?
মহাচিন্তায় পড়ে গেলাম। জামাটা গায়ে দিয়ে দৌড়ে গেলাম সাগরের বাসায়। সাগরও দেখি আমার মতো চিন্তিত। কিছুক্ষণের মধ্যে ঈগলু, আকুল-ব্যাকুল দুই ভাই, টিয়া এসে হাজির। সবার হাতে চিঠি।

টিয়া বললো, এই চিঠি কি পাতলাদা লিখেছে?

কি যা তা বলছিস। ধমকে ওঠে ঈগলু, পাতলাদার নিজের হাতের লেখা।

বুঝলাম পাতলাদার নিজের হাতের লেখা। কিন্তু বিকেল সাড়ে আটটা আর বৈঠকখানায় জনসভা, কথা দুটোর মানে কী? জিজ্ঞেস করে আকুল।

আমারওতো একই প্রশ্ন,
বৈঠকখানায় জনসভা কেমন করে হয়?

চল, পাতলাদাকে জিজ্ঞেস করি? বলে ব্যাকুল। আকুল-ব্যাকুল দুই ভাইয়ের দূর সর্ম্পকের মামা পাতলাদা। সামনে গেলে মামাই ডাকে। কিন্তু আমাদের সঙ্গে থাকলে ডাকে পাতলাদা। আমরা খুব মজা পাই। কিন্তু এই মুহূর্তে আর মজার মধ্যে নেই আমরা। অদ্ভুত চিঠি পাতলাদা কেনো লিখলো?

আমার মনে হয়, বরিশাইলা সাগর মিনমিন করে, পাতলাদা আমাদের আইকিউ পরীক্ষা করছে।

আইকিউ? বাম হাতে ডান গাল চুলকে প্রশ্ন করে ঈগলু। আইকিউ আবার কী?

আইকিউ হচ্ছে তোর গোবর ভরা মাথা! বেইজ্জাপুরের কুতুবমিনার কোথাকার, রাগে গজগজ করে সাগর, উজবুক আইকিউ কী জানে না!

আমি পেটে অম্বলের ব্যথা নিয়ে দুজনের মাঝে দাঁড়াই,
এই সময় ঝগড়া করা ঠিক না। আইকিউ মানে হচ্ছে সাধারণ জ্ঞান। হলো তো? আমারও ধারণা,
পাতলাদা আমাদের সাধারণ জ্ঞানের পরীক্ষা নিচ্ছেন। আমরা বিকেল সাড়ে আটটাকে কীভাবে ব্যাখা করবো, সেটার।

আমাদের আগে যতো চিঠি দিয়েছে পাতলাদা,
বলে টিয়া, সব চিঠিতে সময় দিয়েছে বিকেল সাড়ে চারটায়। যেহেতু বিকেল সাড়ে আটটা বলে কোনো সময় দুনিয়ায় নেই, সুতরাং আগের চিঠির সূত্র ধরে আমরা বিকেল সাড়ে চারটায়ই যাবো। টিয়ার কথাগুলো আমার কাছে যথার্থ মনে হলো।

বললাম, টিয়া ইজ রাইট।

ঈগলু বললো, একটা সমস্যার সমাধান হলো। আর বৈঠকখানায় জনসভা? সেটার সমাধান কী?

আরও সোজা, উত্তর দেয় ব্যাকুল। আগের চিঠির সূত্রধরে আমরা দেখেছি, বৈঠকখানায় কয়েকজন মানুষের সভা হয়, জনসভা হয় না। সুতরাং…

দারুণসস, আমরা ব্যাকুলকে কোলে নিয়ে নাচতে থাকি।

পরের দিন বিকেল সাড়ে চারটায় আমারা পাতলাদার বাড়িতে হাজির। পাতলাদা বিখ্যাত ডান হাতল ভাঙ্গা চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে বাদাম খুটছে। আমাদের দেখে অবাক হয়ে বললো, কিরে তোরা এতো সকালে চলে এলি কেনো? তোদের তো বিকেল সাড়ে আটটায় আসার কথা!

আমরা চুপ।

পাতলাদা আরও অবাক, কথা বলছিস না কেনো?

তুমি তোমার জীবনে শুনেছো বিকেল সাড়ে আটটা বলে কোনো সময় আছে, প্রশ্ন করে সাগর। আমাদের কী মনে হয় তোমার? বোকার হদ্দ?

আরে না, তোরা বোকা হবি কেনো? তোরা এক একজন মহাজ্ঞানী। তাহলে আমিই ভুল করলাম? মৃদু হাসি পাতালাদার মুখে। আমরাও হাসি। পাতলাদা বিখ্যাত হাতল ভাঙ্গা ময়ূর সিংহাসন ছেড়ে বাইরে আমাদের নিয়ে ঘরের পেছনে যাচ্ছে। কোথায় যাচ্ছে আমাদের নিয়ে? যেতে যেতে থমকে দাঁড়ালো। সামনে বিরাট একটা কিছু হোগলা দিয়ে ঢাকা। পাতলাদা ইশারা করলে ব্যাকুল হোগলাটা তুললে দেখতে পাই ট্রাক্টরের মতো একটা মেশিন। পাতলাদা আমাদের দিকে তাকায়। আমরা একবার তাকাই পাতলাদার দিকে, আর একবার মেশিনটার দিকে। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছি না।

আমাদের নির্বোধ মুখের দিকে তাকিয়ে পাতলাদা আবারও হাসলো,
তোদের কাছে এটাকে কী মনে হয়?

টিয়া ফস করে বললো, কী আবার? এটাতো একটা ট্রাক্টর। ভাব দেখাচ্ছো, আমরা বুঝি চিনতে পরবো না?

তাই? পাতলাদা পান খাচ্ছে আর পিক ফেলছে।

নাতো কী? পাল্টা প্রশ্ন করে টিয়া।

সাগর, তোর তো বুদ্ধিটুদ্ধি অনেক বেশি, বলতো এটা কিসের মেশিন?

হাঁটুমুড়ে উপরে নিচে ভালো করে দেখে সাগর বলে, পাতলাদা এটা ট্রাক্টর নয়। ট্রাক্টর হলে নিচের দিকে লাঙ্গলের মতো ফলা থাকতো। এই মেশিনের ফলাগুলো সামনের দিকে ঠিক বুঝতে পারছি না, এটা কিসের মেশিন?

পাতলাদা মেশিনটার সামনে হাঁটাহাঁটি করতে করতে বললো, এটা মাটি কাটার মেশিন।

মানে? মাটি কাটার মেশিন দিয়ে কী করবে তুমি? ঈগলু চেঁচিয়ে ওঠে, আর এই মেশিন চালাবে কে?

আমি চালাবো।

কবে কোথায় চালাবে?
প্রশ্ন করে আকুল।

শোন, তোদের খুলেই বলি আমার পরিকল্পনাটা। মন্তাজ মিয়া যেদিন মাছ না দিয়ে তোদের তাড়িয়ে দিয়েছে আমি সেদিনই সিদ্ধান্ত নিয়েছি,
ওর পুকুরের সব মাছ ধরে আমরা উজানগাও গ্রামের সবাইকে উপহার দেবো। কিন্তু মাছ কীভাবে ধরবো? অনেক ভেবে একটা পরিকল্পনা করে আমি মাদাগাস্কারের আমার বন্ধু অ্যালবার্ড ডিরোজিওর কাছে গেলাম। ও মস্ত ইঞ্জিনিয়ার। আমি বললাম, খাল থেকে পুকুরের দূরত্ব পাঁচশো গজ। আমি এমন একটা মেশিন চাই যে মেশিনটা আকারে বড় না কিন্তু কার্যকর। খালের নিচ থেকে পুকুর সোজা গর্তের মতো করে মাটি কেটে কেটে পুকুরের নিচে গিয়ে উঠবো।

পাতলাদার পরিকল্পনা শুনেই আমরা উত্তেজনায় অস্থির হয়ে ওঠি, দারুণ আইডিয়া তোমার পাতলাদা।

বলছিস তোরা? পাতলাদার মুখে বিগলিত হাসি। আমিতো ভেবেছিলাম, আমার সব আইডিয়ার মতো শুরুতে তোরা এই আইডিয়াও বাতিল করে দিবি।

পাতলাদা, উচ্ছ্বাসে জড়িয়ে ধরে ঈগলু পাতলাদাকে, সত্যি তুমি জিনিয়াস। ভেবে দেখো, খালের পাড় থেকে মাটির ভেতর থেকে গর্ত করে মেশিন নিয়ে একেবারে পুকুরের নিচ থেকে উঠবে। আর পানি নেমে আসবে খালের জলে। গোটা ব্যাপারটাই এক্সিলেন্ট পাতলাদা। তোমাকে আমি একটা নোবেল পুরস্কার দেবো পাতলাদা.. উত্তেজনায় ঈগলু বলতে থাকে আরও অনেক কথা। আমিও ভেবে দেখলাম, পাতলাদার আইডিয়াটা বিশ্বমানের। সোজা কথা, পুকুরের নিচ দিয়ে মেশিনে গর্ত করে…।

সেই জলের সামনে পেতে রাখবো বড় জাল। পুকুরের সব মাছ গিয়ে পড়বে জালে। জালের মাছ তোরা ধরবি আর গ্রামের সব বাড়িতে পৌঁছে দিবি। গ্রামে থাকবে মন্তাজ মিয়া, আর গ্রামের মানুষের সঙ্গে করবে বিটলামি,
কাউকে একটা মাছ দেবে না। এমনকি ব্যাটা নিজেও ধরবে না। এটা অন্যায়। এই অন্যায় সহ্য করা যায় না। কী বলিস তোরা?

অবশ্যই, আমরা হাত তুলে পাতলাদাকে সমর্থন করি। যেভাবেই হোক, লোকটাকে একটা উচিত শিক্ষা দিতে হবে পাতলাদা।

তো সবই যখন রেডি, তখন আর দেরি করে কী লাভ? আজ রাতেই মন্তাজ মিয়ার পুকুরের মাছ শিকার করে ফেলি? পাতলাদা বেশ উত্তেজিত। হবেই না কেনো? জগতে প্রথম এমন একটা কাজ হতে যাচ্ছে পাতলাদার পরিকল্পনায়, একটু উত্তেজনাতো থাকবেই। তোরা রাজি?

আমরা সঙ্গে সঙ্গে হাত তুলে জানিয়ে দিলাম,
রাজি রাজি এবং রাজি।

দুপুরের সেই সূত্র ধরে আমরা রাতে এসেছি মন্তাজ মিয়ার পুকুরের মাছ ধরতে। সাগর নিয়ে এসেছে বিশাল একটা জাল। প্রত্যেকে এনেছে বড় বড় হাঁড়ি পাতিল। মূল সমস্যাটা হলো মাটি কাটার মেশিনটা আনার সময়। স্টার্ট দিয়ে নিয়ে আসার শব্দ শুনে চারপাশের মানুষ জেগে উঠতে পারে। সেই কারণে, আমরা সবাই মিলে কাঁধে করে মেশিনটাকে খালের পাড়ে এনেছি। অপেক্ষা করছি রাত বারোটা বাজার। বারোটা বাজলেই কাজ শুরু করে দেবো। পুকুর সোজা খালের পাড়ে সাগরের আনা জাল বাঁশের খুঁটির সঙ্গে টাঙ্গিয়ে দিলাম। মেশিন মাটি কাটতে কাটতে যত ভেতরে ঢুকবে, মাটি তত নরম হবে। যে কেনো সময়ে মাটি ভেদ করে পানি ও মাছ প্রবল বেগে ছুটে আসতে পারে। এবং তখন একটা মাছও যাতে খালের পানিতে মিশে না যায়, সেজন্য জাল পেতে রাখা আগেই।

মশার কামড়ে আমরা অতিষ্ঠ, কিন্তু পাতলাদা নির্বিকার। বসে আছে আমাদের সঙ্গে উজানগাও খালের পাড়ে। সব ধৈর্যের একটা সীমা থাকে। সেই সীমা শেষ করে ঠিক বারোটার সময় বারোটা বাজলে, নিঃশব্দে পাতলাদা উঠে মেশিন স্টার্ট করলো। চোখের সামনে ম্যাজিকের মতো দেখছি, মেশিনটা সামনের ধারালো ফলা দিয়ে মাটি কেটে গর্ত করে দ্রুত ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে। আমরা উত্তেজনায় ছটফট করছি।

শোন ভোম্বল,
কানের কাছে মুখ এনে বলে সাগর, সকালে উঠে যখন ব্যাটা মন্তাজ মিয়া পুকুরের পানি আর মাছ দেখবে না, ওর কেমন লাগবে?

আমি হাসি, লোকটা পাগল হয়ে যাবে।

টিয়া হাই তোলে, একটা কাজ করা যেতো ভোম্বল।

কী কাজ?

বাড়ি থেকে ছোট হাঁড়ি পাতিল,
দা আনলে এখানেই একটা মাছ পিকনিক হয়ে যেতো।

মাছ পিকনিক মানে? গলা বাড়ায় ব্যাকুল।

মাছ পিকনিক বুঝলি না? টিয়া বলে, গর্তের ভেতর দিয়ে যখন মাছ এসে জালে আটকাবে,
তখন কয়েকটা মাছ ধরে আমাকে দিলে দ্রুত কুটে পাতিলে চড়িয়ে দিতাম। একদিকে মাছ ধরে ধরে বড় বড় পাতিলে রাখতি আর একদিকে টাটকা মাছ খেতে পারতি। খুব মজা হতো।

আমি এখনই বাড়ি থেকে ছোট পাতিল দা মরিচ নিয়ে আসছি। মা মরিচ বেটে বৈয়ামে রেখে দিয়েছে- ব্যাকুল ছুটতে শুরু করে।

পেছন থেকে ধরে ঈগলু, পাতলাদার অনুমতি ছাড়া মাছ পিকনিক করা যাবে না।

ঠিক বলেছিস। আর কতো দেরি? রাততো একটা বাজলো?
চলতো গর্তের কাছে যাই, ব্যাকুলের পরামর্শে সবাই গর্তের কাছে গিয়ে দাঁড়াই। গর্তের ভেতরের ঝুরঝুরে মাটি নেমে আসছে। দু’হাতে মাটি সরিয়ে গর্তের রাস্তা পরিষ্কার রাখি। হঠাৎ শুনতে পাচ্ছি কুলকুল ধ্বনি। মানে পাতলাদা গর্ত করে পুকুরের মধ্যে ঢুকে পরেছে! পানি এখন ছুটে আসছে!

আমরা গর্তের সামনে থেকে সরে দাঁড়ালাম। সঙ্গে সঙ্গে  গর্তের ভেতর থেকে প্রবল বেগে পানির স্রোত ছুটে আসতে থাকে। চোখের পলকে আমাদের চোখের সামনে দিয়ে মাটি কাটার মেশিন, মেশিনের সঙ্গে পাতলাদা,
পানি আর নানা ধরনের মাছ ছুটে আসছে। সাগরের পাতা জাল মেশিন, পাতলাদা, মাছ আর পানিসহ নিমিষে ছুটে উজানগাওয়ের খালের মধ্যে পড়ে যায়।

হায় হায় কী হলো? টিয়া চিৎকার করে, পাতলাদাকে বাঁচা।

আমরা মাছ ধরা বাদ দিয়ে উজানগাও খালের জলে পাতলাদাকে খুঁজছি। গভীর অন্ধকার রাত। খালে গভীর কালো জল। কোথায় পাবো পাতলাদাকে? সকালের দিকে পাতলাদাকে আধমরা অবস্থায় আবিষ্কার করি খালের পাড়ে, নরম কাদায় পড়ে আছে। ডাক্তার ডাকা হয়েছে, এখনও জ্ঞান ফেরেনি।

কিডজ পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!