আরও একবার ব্যাটিং বিপর্যয়, আরও একবার দলের ত্রাতা সোহান।
রান তাড়ায় আরেকটি অসাধারণ অপরাজিত ইনিংস খেলে দলকে জেতালেন এই কিপার-ব্যাটসম্যান। গত
আসরের চ্যাম্পিয়ন আবাহনী লিমিটেডকে হারিয়ে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে প্রথম শিরোপার স্বাদ
পেল শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব।
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার আবাহনীর ২২৯ রান
টপকে শেখ জামালের জয় ৪ উইকেটে। ৭৮ রানে ৫ উইকেট হারানো দলটি সোহানের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে
জিতে যায় ৩ ওভার বাকি রেখেই।
দক্ষিণ
আফ্রিকা থেকে ফেরার পর সোহানের ব্যাটে যেন রানের জোয়ার বইছে।
এদিন তিনি অপরাজিত ৮১ বলে ৮১ রান করে। লিগে এটি তারা টানা
চতুর্থ ৭০ ছোঁয়া ইনিংস। পাঁচ দিন আগে মিরপুরেই রূপগঞ্জ টাইগার্সের বিপক্ষে খাদের কিনারা
থেকে সোহান দলকে জিতিয়েছিলেন ১৩২ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলে।
শিরোপা
নিশ্চিত করার হাতছানিতে মাঠের বাইরের প্রস্তুতি ছিল আগে থেকেই। ব্যান্ড নিয়ে হাজির
হয়েছিলেন সমর্থকরা। শুরু থেকেই মাঠে ছিল উৎসবের আবহ। আঙুলের চোট নিয়েও শিরোপা উৎসবে
শামিল হতে এসেছিলেন অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ। তাদের হতাশ হতে হয়নি
সোহান ও জিয়াউর রহমানের চমৎকার জুটিতে।
এক
সময়ে বেশ চাপে পড়া দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান এই দুই জনে। ২৬ বলে দুই ছক্কা ও চারটি
চারে ৩৯ রানে অপরাজিত থাকেন জিয়া। শেখ জামালের ঘরের ছেলে হয়ে যাওয়া সোহান আট চার ও
দুই ছক্কায় করেন ৮১।
প্রথম
চার ব্যাটসম্যানের সবাই দুই অঙ্কে গেলেও কেউ বড় করতে পারেননি ইনিংস। ২০ ছোঁয়ার আগেই
বিদায় নেন সৈকত আলি, সাইফ হাসান, অধিনায়ক ইমরুল ও অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম।
সোহান
ব্যাটিংয়ে যাওয়ার একটু পরেই বিদায় নেন রবিউল ইসলাম রবি। ৭৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে
থাকা দলকে পথ দেখান সোহান ও পারভেজ রসুল। এক-দুই করে সচল রাখেন রানের চাকা, বাজে বলে
মারেন বাউন্ডারি।
নাজমুল
হোসেন শান্তকে ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় লিটন দাসকে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন রসুল। ভাঙে
৭২ রানের জুটি। ক্রিজে গিয়েই বোলারদের ওপর চড়াও হন জিয়া। ৬০ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়ে সোহানও
বাড়ান রানের গতি।
এই
সময়ে এলোমেলো বোলিং করে তাদের কাজ অনেকটাই সহজ করে দেন আবাহনীর বোলাররা। নিজেদের
জোনে প্রচুর বল পেয়ে ৩ ওভার বাকি থাকতেই ম্যাচ শেষ করে দেন সোহান ও জিয়া।
এর
আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে টপ অর্ডারের ব্যর্থতায় শুরুতেই চাপে পড়ে যায় আবাহনী।
আক্রমণাত্মক শুরু করা মোহাম্মদ নাঈম শেখকে বিদায় করে শুরুর জুটি ভাঙেন ভারতীয় অলরাউন্ডার
রসুল।
ক্রিজে
অনেকটা সময় থাকলেও ছন্দ পাননি লিটন। ১৯ বলে ৪ রান করে জিয়ার বলে তিনি হন বোল্ড। এরপর
শান্তকে ফিরিয়ে আবাহনীর বিপদ আরও বাড়ান জিয়া।
থিতু
হলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি আফিফ হোসেন। সাইফ হাসানের অফ স্পিনে হয়ে যান এলবিডব্লিউ।
৪৪ বলে খেলা তার ২৯ রানের ইনিংসে দুটি চারের পাশে ছক্কা একটি।
একটি
করে ছক্কা ও চার মেরে বিদায় নেন মোসাদ্দেক হোসেন। পঞ্চাশ ছুঁয়েই থামেন তৌহিদ হৃদয়।
যুব বিশ্বকাপজয়ী এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান চারটি চারে ৭০ বলে করেন ৫৩।
২৯তম
ওভারে ক্রিজে গিয়ে শেষ পর্যন্ত থাকলেও পঞ্চাশ ছুঁতে পারেননি জাকের আলি। ৭০ বলে চারটি
চারে করেন ৪৭।
শেষ
দিকে ঝড় তুলে আবাহনীকে ২৩০ পর্যন্ত নিয়ে যান সাইফ উদ্দিন। এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার
৫ ছক্কায় ৩৩ বলে করেন ৪৪।
এই
রান নিয়ে দারুণ লড়াই করলেও সোহানের চমৎকার ইনিংসের জন্য পেরে ওঠেনি আবাহনী। ম্যাচ
শেষে শেখ জামালের কিপার-ব্যাটসম্যান জানান, আরেক ম্যাচ হাতে থাকলেও মোসাদ্দেকদের
বিপক্ষেই শিরোপা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন তারা।
এই
মৌসুমে অধিনায়ক হিসেবে দুটি শিরোপা জিতলেন ইমরুল কায়েস। বিপিএলের পর প্রিমিয়ার লিগের
ট্রফিও উঠল বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের হাতে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আবাহনী লিমিটেড:
৫০ ওভারে ২২৯/৬ (নাঈম শেখ ১৬, লিটন ৪, শান্ত ৮, হৃদয় ৫৩, আফিফ ২৯, মোসাদ্দেক ১৫, জাকের
৪৭*, সাইফ উদ্দিন ৪৪*; জিয়াউর ১০-১-৩৬-২, রাসুল ১০-২-৪০-১, রবিউল ৬-০-২০-০, সাইফ ৪-০-১৯-১,
সুমন ৭-০-৪৭-১, মৃত্যুঞ্জয় ৪-০-২৫-০, সানজামুল ৯-০-৪০-১)
শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব:
৪৭ ভয়ারে ২৩২/৬ (সৈকত ১৭, সাইফ ১৫, ইমরুল ১৫, মুশফিক ১৬, সোহান ৮১*, রবিউল ৩, রাসুল
৩৩, জিয়াউর ৩৯*; সাইফ উদ্দিন ৮-১-৩৬-২, তানভীর ১০-৩-২৩-১, তানজিম ১০-০-৬৭-১, শহিদুল
৭-১-৪১-০, মোসাদ্দেক ৮-০-৩৫-১, আফিফ ১-০-৭-০, শান্ত ৩-০-২৩-১)
ফল: শেখ জামাল ধানমন্ডি
ক্লাব ৪ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ:
নুরুল হাসান সোহান