ক্যাটাগরি

হারানো বেড়াল

আম্মু, ওই বেড়ালটাকে ভালোবাসি আমি।

তাই নাকি? বেড়াল তোমাকে ভালোবাসে?

বাসে। আমার সঙ্গে খেতে চায়। রাতে ঘুমাতেও চায়।

তুমি বুঝলে কী করে?

বেড়াল নিজেই বলেছে। মিউ মিউ করে।

কখন বলেছে?

গতকাল সন্ধ্যায়।

তা আমি তো শুনলাম না।

আপনি শুনলে ধমক দেবেন, তাই চুপিচুপি বলেছে।

তাই নাকি! বেড়াল আমাকে ভয় পায়?

ভয় পায় না। মান্য করে। গত শুক্রবার মেহমানের সঙ্গে বেড়ালকে সেমাই খেতে দিয়েছিলেন, সেই থেকে মানে।

খুব ভালো। এখন বেড়ালকে খেতে দিয়েছ?

দিয়েছি। কিন্তু খাবে না। ওর খুব মন খারাপ।

কেনো?

তাসপিয়া বলল, দু’দিন পর ঈদ। আমরা সবাই ঈদ উৎসব করব। নতুন নতুন জামা-কাপড় পরবো। ফুপিদের বাসায় বেড়াতে যাব। আমাদের সঙ্গে বেড়াল যেতে পারবে না, তাই মন খারাপ করেছে।

বেড়ালের ফুপিদের বাসায় বেড়াতে যাবে বেড়াল। আমরা তো আটকে রাখিনি।

আচ্ছা আম্মু,
একটা কথা। সেই কবে বেড়ালটাকে বাবা নিয়ে এলো। এখনও একটা নাম রাখা হয়নি। ওকে বেড়াল বলে ডাকি আমরা। কেমন দেখায় সেটা। অনুষ্ঠান করে ওর নাম রাখা উচিত। নতুন পোশাকও কিনে দেওয়া হয়নি। কী পরে ও বেড়াতে যাবে? তাছাড়া ওর ভাইবোন কোথায় আছে তাও তো মনে হচ্ছে জানে না। একা হয়ে গেছে। কোথায় খুঁজে পাবে ফুপির বাসা? সব তো হারিয়ে ফেলেছে। না-হয় পথ ভুলে গেছে।

কিছুক্ষণ ভেবে মা বললেন,
এটা খুবই কষ্টের কথা।

আম্মু, বেড়ালটাকে যেখান থেকে বাবা এনেছে সেখানে ছেড়ে দিলে কেমন হয়? ও নিজের বাবা-মায়ের সঙ্গে ঈদ করুক। ফুপির বাসায় বেড়াতে যাক। ঘুরুক। আনন্দ করুক।

বেড়াল তো মানুষের মতো না মা। ওদের বংশ পরিচয়ও নেই। বাবা মায়ের সাথেও সম্পর্ক থাকে না।

টিভিতে যে দেখি জঙ্গলের ভেতর সব বেড়াল একসঙ্গে থাকে। খায়। ঘুমায়। অসুখ হলে একে অন্যের সেবা-যত্ন করে।

সেটা ঠিক। তবে এটা জঙ্গল না। মানুষের বাড়ি। এটাকে আমরা শখ করে পালি। যেভাবে রাখব সেভাবেই থাকবে।

আম্মু, বেড়ালের শখ নেই?

সেই শখ পূর্ণ করবে বেড়ালের বাবা-মা।

এখন আমরাই বেড়ালের বাবা-মা। আমাদের উচিত ওর শখ পূরণ করা।

এরপর মা তাসপিয়াকে বলে, চলো, ঘুমানোর সময় হয়েছে। এখন না ঘুমালে রাতে পড়তে পারবে না।

আম্মু, বেড়ালটাকে খাবার দিয়ে আসি।

তাসপিয়া বয়াম থেকে বিস্কুট নিয়ে বেড়ালের মুখের সামনে ধরে। শুয়ে শুয়ে আরামসে বিস্কুট খায় বেড়াল। সেই দৃশ্য মুগ্ধ হয়ে দেখে আর ভাবে, একটা বিস্কুটে ক্ষুধা মিটবে না। নিজের ভাগের দুধ বাটিতে নিয়ে বেড়ালের সামনে খেতে দেয়। দুধ দেখে দাঁড়িয়ে যায় বেড়াল। মিউ মিউ করে। তাসপিয়া বুঝতে পারে, বেড়াল খুশি হয়েছে।

ঈদের আমেজ শুরু হয়েছে। পরদিন ঈদ। সবাই ঠিক করে রেখেছে কে কোন ড্রেস পরবে। তাসপিয়ার মনে হলো, বেড়ালেরও একটা ড্রেস থাকা দরকার। তাহলে সবার মতো সে-ও ঈদের আনন্দে করতে পারবে। কিন্তু, তার কাছে যে টাকা নেই। বেড়ালকে ড্রেস কিনে দেবে কী দিয়ে। তাই সে নিজের পুরনো জামা বের করে একটার পর একটা বেড়ালের গায়ে পরায়। প্রায় সবগুলো সাইজে বড় হয়। চিন্তা করল, বড় জামা কেটে ছোট করে সেলাই করলেই বেড়ালের গায়ে লাগবে। বেড়ালের গায়ের মাপে একটা জামা কাটে। সেলাই করতে মায়ের কাছে যায় তাসপিয়া।

বেড়ালের গায়ে লাল রঙের জামাটি খুব মানিয়েছে। দেখে খুশি হয় তাসপিয়া। অবাক হয় তাসপিয়ার আব্বু! এই জামা কোথায় পেয়েছিস?

আব্বুকে জামা বানানোর সব গল্প বলে তাসপিয়া। আব্বু মেয়ের মাথায় আদর করে হাত বুলায়। এরপর কোলে নিয়ে কপালে চুমু খায়। সেই সঙ্গে মেয়ের বুদ্ধির প্রশংসাও করে।

ঈদের পরদিন তাসপিয়া বেড়াতে যাবে ফুপির বাসায়। সঙ্গে যাবে বাবা-মা। তাহলে বেড়াল থাকবে কোথায়? তাসপিয়া সঙ্গে নিতে চায়। মা চায়, বেড়ালকে খাবার দিয়ে খাঁচায় বন্দি করে রেখে যেতে। একথা শুনে তাসপিয়া খুব মন খারাপ করে। তাসপিয়া মাকে বলে বেড়াল হলেও তো বেড়াতে পারবে। আমাদের সঙ্গে নিয়ে যাব।

বেড়াল অন্যের বাসায় নেওয়া ঠিক না। তোমার ফুপু আর ফুপা রাগ করতে পারেন। বললেন মা।

তাসপিয়া খুব মন খারাপ করে। বেড়াল সঙ্গে করে নেবেই সে। না নিলে কিছুতেই যাবে না। শেষে মা-বাবাও রাজি হন। খুশি হয় তাসপিয়া।

বেড়ালকে লাল জামা পরিয়ে কোলে নিয়ে বসে আছে তাসপিয়া। বলে ফুপিদের বাসা থেকে ফিরে তোমার নাম রাখব। এজন্য অনুষ্ঠানও হবে। অনেক অতিথি আসবে। অনুষ্ঠানে সবাইকে দাওয়াত দেব। খুব আনন্দ হবে। বেড়াল চোখ বুঝে তাসপিয়ার কথা শোনে। ফুপির বাসায় গিয়ে তুমি শান্ত থাকবে। একটুও দুষ্টুমি করবে না। মামুন আর তামান্নার কোনো কথা শুনবে না। শিহাব আর শাওনের কাছ থেকে সবসময় দূরে থাকবে, কেমন!

মা-বাবার সঙ্গে রওয়ানা হয় তাসপিয়া। সঙ্গে আছে দুই ভাই শিহাব ও শাওন। তাসপিয়া বাম হাতে ধরে আছে মায়ের আঙুল। ডান হাতে বেড়ালের গলার রশি। প্রথমে রিকশা তারপর সিএনজি করে ফুপির বাসায় পৌঁছে তারা। পৌঁছতে গিয়ে সন্ধ্যা হয়ে যায়। রাতে খেতে বসবে তখন দেখল বেড়াল নেই। তাসপিয়া কান্না শুরু করে দেয়। কিছুতেই থামছে না। রাতে ঘুমাতে পারে না তাসপিয়া। রাত পোহাতেই আশপাশে খোঁজ করে। কোথাও নেই বেড়াল। সবাই অবাক! কোথায় গেল বেড়ালটা? তাসপিয়ার মন খারাপ। ঠিক মতো খাওয়া-দাওয়া করে না। মামুন ও তামান্নার সঙ্গেও কথা বলে না।

দু’দিন পর তাসপিয়া আম্মুর সঙ্গে যে পথ ধরে গিয়েছে সেই পথেই বাসায় ফিরছিল। ফেরার পথে আশপাশে তাকায়। যদি বেড়ালটাকে পায়। কোথাও নেই বেড়াল। তাসপিয়ার মনে একটাই চিন্তা, কোথায় যেতে পারে! একবার মাকে সন্দেহ হয়। আরেকবার ফুপাতো ভাই মামুনকে। আম্মুকেও সন্দেহ হয়। তবু রাস্তার দু’পাশে খুঁজতে খুঁজতে বাসায় ফেরে।

বাসার দরজায় তালা লাগানো। দরজার উপরে ভেন্টিলেটর। সেখানে বসে মিউ মিউ করছে একটি বেড়াল। তাসপিয়া খুশিতে হাততালি দেয়। মাকে জড়িয়ে ধরে। বেড়াল নিচে নেমে আসে। তাসপিয়া দেখল, এটি আগের বেড়াল নয়। তখন আবার তাসপিয়ার মন খারাপ হয়। মা বলেন, মন খারাপ করো না। এটাকেই পালব আমরা। তবু তাসপিয়ার মুখে হাসি ফোটে না। সেই বেড়ালটার কথা খুব মনে পড়ে।

কিডজ পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!