বুধবার ঢাকার ইস্কাটন লেডিস ক্লাবে জাতীয়তাবাদী যুবদলের ইফতার অনুষ্ঠানে
আলোচনা সভায় বক্তব্যে এই মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, “আজকে এমন একটা অবস্থা তৈরি
হয়েছে যে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আজকে সবচেয়ে
বেশি দরকার ছিল অপকর্মের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করা, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ
ব্যবস্থা নেওয়া। সেটা না করে আজকে সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, এই ব্যাপারে ভারতের
কাছে সাহায্য চাইবে।
“কতটা অযোগ্য হলে, কতটা ব্যর্থ হলে, কতটা নতজানু হলে
আজকে এই সরকার কুকর্ম করে যারা, সেই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে আজকে তারা
ভারতের কাছে সাহায্য চাচ্ছে।”
গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে র্যাব এবং এই বাহিনীর সাবেক
ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
এই নিষেধাজ্ঞা কাটাতে নানা উপায়ে চেষ্টা করছে সরকার। পররাষ্ট্রমন্ত্রী
এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, তারা এই নিষেধাজ্ঞা তুলতে ভারতের সহযোগিতা চেয়েছেন।
ইফতার অনুষ্ঠানে বক্তব্যে নিউ মার্কেট এলাকায় দোকানকর্মীদের সঙ্গে ঢাকা
কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের মামলায় বিএনপি নেতাদের আসামি করার নিন্দাও জানান ফখরুল।
তিনি বলেন, “সংঘর্ষে জড়িত ছাত্রলীগ,
প্রমাণিত সত্য। এই ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং বিএনপি নেতা-কর্মীদের
গ্রেপ্তার করা হয়েছে, মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে।”
এই অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে
ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন। যুবদলের ‘গুম’ হওয়া
নেতা-কর্মীর পরিবারকে তার পক্ষ থেকে ঈদ উপহারও দেওয়া হয় অনুষ্ঠানে।
যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরবের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সুলতান
সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান,
শাহজাহান ওমর, বরকত উল্লাহ বুলু, আহমেদ আজম খান, জয়নুল আবদিন ফারুক বক্তব্য রাখেন।
বিএনপি নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, যুবদলের
মোরতাজুল করীম বাদরু, এসএম জাহাঙ্গীর অনুষ্ঠানে ছিলেন।
নাগরিক ঐক্যের ইফতারে বিরোধী
নেতারা
মাহমুদুর রহমান মান্না নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্যের ইফতার অনুষ্ঠানে অংশ
নিয়েছেন বিএনপিসহ সরকারবিরোধী দলগুলোর নেতারা।
বুধবার রাজারবাগের হোয়াইট হাউজ রেস্তোরাঁয় এই ইফতারে অংশ নেন বিএনপি
নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান
মাহমুদ টুকু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, শামা ওবায়েদ, জহির উদ্দিন স্বপন, গণফোরামের মোস্তফা
মোহসিন মন্টু, জেএসডির আ স ম আবদুর রব, গণঅধিকার পরিষদের রেজা কিবরিয়া, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স
পার্টির সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, শাহাদাত
হোসেন সেলিম, জেএসডির শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল
ইসলাম বাবুল, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাগপার
খন্দকার লুতফুর রহমান, বিকল্পধারার নুরুল আমিন ব্যাপারী।
তবে জামায়াতে ইসলামীর কাউকে এই ইফতারে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
ইফতার অনুষ্ঠানে আলোচনায় খন্দকার মোশাররফ বলেন, “আজকের
আলোচনার বিষয়বস্তু এই সরকারের অধীনে নির্বাচন না। এর সাথে আমরাও একমত প্রকাশ করছি।
এই কথার সাথে আরও যুক্ত করতে চাই, আর এই সরকার না। বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন
তো না-ই, দেশের যে পরিস্থিতি যে অবস্থা তাতে এখন সময় এসেছে সরকারকে না বলা।”
জেএসডির সভাপতি আ স ম রব বলেন, “আমাদের
কথা স্পষ্ট, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। সেজন্য এদেরকে হটাতে আন্দোলনের
কোনো বিকল্প পথ নাই। তবে এই সরকারকে বিদায়ের পর কোন সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে, সেটা
আমাদের আগেই ঠিক করতে হবে।
“সেই সরকারটি অবশ্যই এমন সরকার হতে হবে, যারা নিরপেক্ষ
ও অবাধ একটি নির্বাচন করতে পারবে। সেজন্যই জেএসডি মনে করে, একটি জাতীয় সরকারের প্রয়োজনীয়তা
রয়েছে।”
‘এই সরকারের
অধীনে নির্বাচনকে না বলুন’ শীর্ষক এই আলোচনা সভায়
মান্না বলেন, “এই সরকার চলে যাওয়ার পরে যে সরকার
হবে সেটা, তো নির্বাচিত সরকার নয়। এই সরকার কেমন হবে? কেউ জাতীয় সরকার বলছেন, কেউ তত্ত্বাবধায়ক
সরকার বলছেন, কেউ বলছেন তদারকির সরকার।
“এ থেকে সরকার পক্ষে মিডিয়াগুলো মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি
ছড়াবার চেষ্টা করছে যে ওরা পরের সরকারের ব্যাপারে একমত নয়, ওদের ঐক্য হবে না। তাদের
জন্য আমরা একটা মেসেজ দিতে চাই, আমরা যে নামেই ডাকি না কেন, আমরা একটা অন্তর্বর্তীকালীন
সরকার চাই, সেই সরকার পরবর্তী নির্বাচনকে সুগম, স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারে।”