প্রভাষক পদে আবেদনকারী
ওই বিভাগের সাবেক এক শিক্ষার্থীর অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট
সভায় এমআইএস বিভাগের দুজন প্রভাষকের নিয়োগ স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপ উপাচার্য
(প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর
ডটকমকে তিনি বলেন, “অভিযোগটা খতিয়ে দেখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলে পাঠানো
হয়েছে। সিন্ডিকেট সভায় যে দুজন প্রভাষকের নিয়োগ অনুমোদন দেওয়ার কথা ছিল, তা স্থগিত
করা হয়েছে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের
উপাচার্যের কাছে সম্প্রতি ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, ২০১৮ সালে শিক্ষক নিয়োগের
আগে বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আকরাম তাকে ‘অনৈতিক’ ও ঘৃণ্য প্রস্তাব দেন। তিনি রাজি না
হলে তখন তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
শিক্ষক সমিতির কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আকরাম এখন এমআইএস বিভাগের চেয়ারম্যান এবং জাতির পিতা
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ।
অভিযোগের বিষয়ে
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ডিন ও উপাচার্য বরাবর দেওয়া দুটি অভিযোগ পড়লে
দেখতে পাবেন, এটা আসলে নির্যাতনের অভিযোগ নয়; এটা চাকরি পাওয়ার অভিযোগ।
“গতকাল (মঙ্গলবার)
যদি তার সিলেকশন হত, তাহলে আজকে এ অভিযোগ করত না। ২০১৯ সালের অভিযোগ এখন কেন?”
এর আগে ওই শিক্ষার্থী
২০১৯ সালে ১০ মে তৎকালীন ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের
কাছে তার বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আকরামের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ দিয়েছিলেন। তখন
এর ‘সুরাহা’ হয়নি।
এবার একই বিভাগে
আবার শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়ার মধ্যে নতুন করে উপাচার্যের কাছে অভিযোগ করেন ওই শিক্ষার্থী।
সোমবার নিয়োগ বোর্ডের
সভায় সহকারী অধ্যাপক পদে দুজন এবং প্রভাষক পদে দুজনকে এমআইএস বিভাগে নিয়োগের সুপারিশ
করা হয়। মঙ্গলবার সিন্ডিকেট সভায় তা অনুমোদনের কথা ছিল।
এরই মধ্যে ওই শিক্ষার্থী
উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন, বিবিএ ও এমবিএ দুটাতেই প্রথম স্থান অর্জন করার পরও তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
তিনি ‘যৌন হয়রানির’
বিচার এবং মেধার মূল্যায়ন করে শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানান। অভিযোগটির অনুলিপি বিশ্ববিদ্যালয়ের
সব সিন্ডিকেট সদস্যদেরও দেওয়া হয়।
সিন্ডিকেট সভায়
উপস্থিত একজন সদস্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শিক্ষার্থীর অভিযোগটি মঙ্গলবার
অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম সভায় তুলে ধরেন। পরে প্রভাষক পদের নিয়োগ স্থগিত করে
অভিযোগ খতিয়ে দেখতে যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলে পাঠানো হয়।
ঢাবির চারুকলার ছাত্র-শিক্ষক মিলে ‘যৌন হেনস্থা’র অভিযোগ
উপাচার্যের কাছে
দেওয়া অভিযোগে ওই শিক্ষার্থী বলেন, প্রথমবার নিয়োগের বিষয়ে অধ্যাপক আকরাম হোসেনের
সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি ‘কুপ্রস্তাব’ দিয়েছিলেন। তখন কোনো রকমে তার রুম থেকে তিনি
বের হতে পারেন।
তার ভাষ্য, “আমি
সন্দেহ করছি, তার প্রস্তাবটিতে আমি রাজি না হওয়ায় মিথ্যা ইমেইলের অপপ্রচার করা হয়
এবং আমাকে বিভাগটির অন্য শিক্ষকদের কাছে হেয় প্রতিপন্ন করে নিয়োগে নেতিবাচক ইমেজ
তৈরি করা হয়। ঘটনার আকস্মিকতায় ভয়ে এবং অবিবাহিত থাকায় ঐ সময়ে আমি উক্ত ঘৃণ্য
ঘটনা কাউকে জানাতে পারিনি। ঘটনাটির প্রমাণ হিসেবে ভয়েস রেকর্ড রয়েছে।”
সম্প্রতি ম্যানেজমেন্ট
ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের প্রভাষক পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিতে দেওয়া হলে ওই শিক্ষার্থী
আবারও আবেদন করেন।
অভিযোগের বিষয়ে
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে অধ্যাপক আকরাম বলেন, “২০১৯ সালে আমি চেয়ারম্যানও ছিলাম
না এবং বোর্ড মেম্বারও ছিলাম না। আমি কীভাবে তাকে চাকরি দেব? এবার আমি চেয়ারম্যান এবং
বোর্ড মেম্বার ছিলাম। সেই বোর্ডে প্রো ভিসিসহ (শিক্ষা) আরও চারজন মেম্বার ছিল। সেখানে
টপ রেজাল্টধারীদের সিলেকশন করা হয়েছে।“
বিবিএ ও এমবিএ-
দুটোতেই প্রথম স্থান থাকার পরও কেন ওই শিক্ষার্থীকে নেওয়া হয়নি, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন,
“ডাবল ফার্স্ট তো সে শুধু একা নয়। ডাবল ফার্স্ট যৌথভাবে কয়েকজন থাকতে পারে। আমাদের
পদ কম। একাধিক ডাবল ফার্স্টের মধ্যে সিলেকশন বোর্ড যাকে যোগ্য মনে করেছে, তাকে ওই পদে
নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।”