সাধারণত মসজিদের সামনে বসে থাকা দোকানিদের কাছে পাওয়া যায়
৩০ থেকে ১শ’ টাকায় ছোট্ট একটা আতরের বোতল। কয়েকবার ব্যবহারের সেটার কথা বেমালুম ভুলে
যাওয়া হয়।
তবে যারা আতর নিয়ে সৌখিন তাদের কাছে জানা যায় আতরের বিভিন্ন
নাম। যেমন- ওউদ, মাসনুন, মাস্ক, কস্তুরি ইত্যাদি।
ঢাকার বায়তুল মোকাররম মার্কেটের আহসান আতর হাউজের মালিক
আব্দুল গফুর বলেন, “দামি এই আতরগুলোর দাম হয় তোলা হিসেবে। ক্রেতাদের সুবিধার জন্য তিন
ধরনের বোতল পাওয়া যায়।”
বড়টি হল ১২ মি.লি.লিটার যা এক তোলা। ছয় মি.লি.লিটার হল
আধা তোলা আর তিন মি.লি.লিটার হল কোয়ার্টার তোলা।
“ক্রেতার প্রয়োজন অনুযায়ী, বোতলে আতর ঢেলে বিক্রি করি।
আতরের সুগন্ধির ধরন হয় প্রধানত তিন প্রকারের। আতর বেজ, পারফিউম বেইজ আর ন্যাচারাল বেইজ,”
বলেন আব্দুল গফুর।
ক্রেতাদের পছন্দের ধারণা দিতে গিয়ে তিনি জানান, পারফিউম
বেইজ’য়ের আতরগুলো বেশি বিক্রি হয়। সব বয়সের মানুষই এগুলো কেনেন। তবে তরুণ ও মাঝবয়সি
মানুষ যারা কড়া সুগন্ধি পছন্দ করেন না, তারাই এগুলোর প্রধান ক্রেতা।
‘কুল ওয়াটার’ হল তেমন একটি আতর যার দেখা মিলবে সব দোকানেই।
মানভেদে দাম ভিন্ন হয় ঠিকই, তবে সুগন্ধের ধরনটা একই, তফাৎটা বোঝা যায় সুগন্ধের স্থায়িত্বে।
গরমের দিনের জন্য এই আতর খুবই ভালো। এখানে দাম ১ হাজার
২শ’ টাকা তোলা। অর্থাৎ তিন এমএল ৩শ’ টাকা। ১৫০ টাকাতেও এই আতর পাওয়া যায়।
এই ঘরানার অন্যান্য নাম হলো ‘এহসাহ আর অ্যারাবিয়া’, ‘দেয়ার
দে হারমাস’, ‘গ্রিক অ্যাভেন্টাস’, ‘ব্লু শেনেল’, ‘ব্লু ফর ম্যান’ ইত্যাদি।
এদের তিন এমএল’য়ের দাম ২শ’ থেকে ৬শ’ টাকা।
প্রধানত বিশ্বব্যাপি জনপ্রিয় অসংখ্য নামিদামি সুগন্ধির
অ্যালকোহল মুক্ত সংস্করণ হল এই পারফিউম বেইজ আতরগুলো।
আতর বেইজ’য়ের মধ্যে জনপ্রিয় একটি নাম হলো ‘অউদ’।
আব্দুল গফুর বলেন, “মজার ব্যাপার হল আমরা বাঙালিরা জানি
অউদ মানেই হল আগর কাঠ থেকে তৈরি হওয়া আতর। তবে দোকানিদের কাছে তা নয়।”
তার কথায়, “দোকানীদের কাছে অউদ মানে আতর, সব ধরনের আতর।
প্রকৃত আগর কাঠের আতর পেতে হলে আপনাকে নিতে হবে দেহনাল অউদ। এই দুরকম ধারণা থেকেই আসলে
অউদ আতরের দামের এত হেরফের মানুষকে দ্বিধাগ্রস্ত করে। আমাদের কাছে অউদ আছে মোট ১২ ধরনের।
দাম ৮শ’ টাকা তোলা থেকে ৬ হাজার ৫শ’ টাকা তোলা।”
তসবিহ
নানা ধরনের তসবিহর আয়োজন দেখা গেল বায়তুল মোকাররম মার্কেটের
আল ইসলাম ব্রাদার্সসে। সালাউদ্দিন রাজুর এই দোকানের সবচাইতে দামি তসবিহর নাম ‘ইয়েমেনি
আকিক, দাম ১০ হাজার টাকা।
ক্রিস্টালের তৈরি তসবিহ মিলবে ৩ হাজার ৫শ’ থেকে ৫ হাজার
টাকার মধ্যে। দুটোতেই পুঁতিগুলো গাঁথা থাকে ধাতব চেইনে।
‘আকিক’ ও ‘ক্রিস্টাল’ কম দামিও পাওয়া যায়, আসে ভারত থেকে।
আকিক’ মিলবে ৫শ’ টাকায় আর ‘ক্রিস্টাল’ ৬শ’ টাকা। ব্যবহারের সঙ্গে এগুলোর রং নষ্ট হয়ে
যাবে। আবার রং উঠবে না কিন্তু দামে কম এমন আকিক কিংবা ক্রিস্টাল’য়ের তসবিহগুলো নিতে
হলে গুনতে হবে ১ হাজার টাকা।
মুক্তার তসবিহ মিলছে ৫শ’ টাকায়। প্লাস্টিকের তৈরি বিশাল
বড় পুঁতির তসবিহগুলো মাজারের তসবিহ নামে পরিচিত, দাম ২৫০ টাকা।
প্লাস্টিকের সাধারণ মানের ছোট-বড় পুঁতির তসবিহগুলোর দাম
হবে ৩০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকার মধ্যে। কাঠের তসবিদগুলোর দাম ২৫০ টাকা শুরু করে ৪ হাজার
টাকা। ইলেক্ট্রনিক তসবিহ ৩০ টাকা।
জায়নামাজ ও
টুপি
বায়তুল মোকারর মার্কেটের পাশেই টুপি আর জায়নামাজের দোকান
বসিয়েছেন আহমেদ বাশির সম্রাট।
তিনি বলেন, “মাঝারি সাইজের মখমল কাপড়ের জায়নামাজগুলোকে
বলা হয় তুর্কি জায়নামাজ। এগুলোই সবচাইতে বেশি বিক্রি হয়। দাম ২৫০ টাকা থেকে ৫শ’ টাকা।
এগুলোর মধ্যে একটি চওড়া সাইজ আছে, সাইজ ৮০/১২০, এর কাপড়টাও তুলনামূলক মোটা। দাম ৭শ’
টাকা পর্যন্ত গড়ায়।”
ভালোমানের বিভিন্ন ব্রান্ডের জায়নামাজগুলোর দাম শুরু হয়
৬শ’ টাকা থেকে, ১ হাজার ৫শ’ টাকা পর্যন্ত দাম হয়। এই জায়নামাজগুলোর মখমলের। মান ভালো
হওয়াতে নিয়মিত ব্যবহারেও পায়ের চাপে মখমল দেবে যায় না। আর এগুলো বেশি নরম হয়।
কয়েকটিতে আবার কম্পাস দেওয়া থাকে পশ্চিম দিক বোঝার জন্য।
ওপরে কাপড় আর ভেতরে ফোম দেওয়া জায়নামাজও আছে। এগুলো সাধারণত
আসে চীন থেকে। দাম ৫শ’ থেকে ৯শ’ টাকা।
নানা পদের টুপি আছে এখানে। ঝিকিমিকি পাথরখচিত টুপি, বিয়ের
জন্য এগুলো অনেকে নেন বলে জানান সম্রাট। দাম ১ হাজার ২শ’ থেকে ১ হাজার ৫শ’ টাকা।
বোম্বেগুরা টুপিতে থাকে জরির কাজ। দাম একই রকম। মিশরি টুপি
বা ক্বারি টুপির দাম ১ হাজার ৫শ’ থেকে ১ হাজার ৭শ’ টাকা।
বাহারি রংয়ের সুতা দিয়ে হাতে বোনা টুপির নাম সিন্ধি টুপি,
দাম ২ হাজার ৫শ’ টাকা। থাইল্যান্ডের টুপি আবার বেশ লম্বা, রং সাদা, দাম ১ হাজার ২শ’
টাকা। হাতের কাজ করা গোল পাকিস্তানি টুপির দাম ১ হাজার টাকা।
সবসময় পরার জন্য আছে গোল সাদা টুপি, নাম মালিকি টুপি, দাম
২৫০ থেকে ৫শ’ টাকা। নেট আর লেইস দিয়ে বানানো পাতলা টুপিগুলো ২শ’ টাকা থেকে শুরু।