বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই সার্চ ও ভিডিও সেবাদাতা কোম্পানী করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে গত দুই বছরে যে পাহাড়সম আর্থিক লাভের দেখা পেয়েছে, মহামারী থেকে উত্তরণের দ্বারপ্রান্তে এসে সেই ধারা বজায় রাখা কঠিন হয়ে উঠেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে রয়টার্স। এর মধ্যে কারণ হিসেবে মুদ্রাস্ফীতি ও পণ্য সঙ্কট বড় কারণ বলে উল্লেখ করেছেন বিশ্লেষকরা।
ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে পড়ে যাওয়া আয় ফের কখন উর্ধ্বমুখী হবে সেটি এখনই বলা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন অ্যালফাবেটের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা রুথ পোরাট। বিশেষ করে, মার্কিন ডলারের তেজীভাবের কারণে আয়ে সৃষ্ট ক্ষতের চেহারা আরো খারাপ হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
গেল দুই বছরে অ্যালফাবেটের শেয়ারমূল্য বেড়েছে প্রায় ৯০ ভাগ। এ বছরের আয় সংশ্লিষ্ট শঙ্কা মঙ্গলবার প্রকাশের পরপরই শেয়ারমূল্যে দুই দশমিক পাঁচ শতাংশ পতন ঘটেছে। এর আগেও অ্যালফাবেটের শেয়ার মূল্য শতকরা তিন দশমিক ছয় ভাগ কমেছে।
অ্যালফাবেটের এই আয় নিয়ে কৌতুহলউদ্দীপক তুলনা করেছেন অ্যাপটাস ক্যাপিটাল অ্যাডভাইজর্স-এর পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপক ডেভিড ওয়াগনার। তিনি বলছেন, গেল দুই বছরে অ্যালফাবেট বাজারে অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় অসম্ভব বিচ্ছিন্নভাবেই নিজেদের লাভ ধরে রেখেছে।
“একটা গরীব মহল্লার সবচেয়ে সুন্দর বাড়িটি তো আপনার হতেই পারে।”
অ্যালফাবেট বলছে, বছরের প্রথম প্রান্তিকে তাদের আয় ছয় হাজার আটশ এক কোটি ডলার দাঁড়িয়েছে যেটি গেল বছরের এইক প্রান্তিকের চেয়ে শতকরা ২৩ ভাগ বেশি হলেও এই প্রান্তিকে আয়ের লক্ষমাত্রার চেয়ে নয় কোটি ডলার বা এক শতাংশের একশ ভাগের একভাগ কম।
আর্থিক বিশ্লেষণী প্রতিষ্ঠান রেফিনিটিভ বলছে, ২০১৯ সালের চতুর্থ প্রান্তিকের পর এই প্রথম টার্গেট মিস করছে অ্যালফাবেট।
অপর বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান ‘ফ্যাক্টসেট’ বলছে, কেবল ইউটিউবের আয় বিবেচনায় নিলে এটি লক্ষ্য নির্ধারিত সাড়ে সাতশ কোটি ডলারের বদলে ছয়শ ৯০ কোটি ডলারে গিয়ে ঠেকেছে।
পোরাট বলছেন, এই প্রান্তিকেই শুরু হওয়া ইউক্রেইন যুদ্ধের বিশাল প্রভাব গিয়ে পরেছে ইউটিউবের আয়ে, বিশেষ করে রাশিয়ায় বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেওয়া এবং যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরপরই বিজ্ঞাপনী ব্র্যান্ডগুলোর ইউরোপজুড়ে বিজ্ঞাপনে খরচ বন্ধ করে দেওয়ার কারণে।
রাশিয়া থেকে আসা গুগলের আয় শতকরা মাত্র এক ভাগ হলেও এই যুদ্ধের প্রভাব হয়েছে বিশাল।
ইউটিউবে সরাসরি বিজ্ঞাপন দাতাদের কাছ থেকে পাওয়া আয়ের বৃদ্ধি কমে আসা এবং অ্যান্টিট্রাস্ট অভিযোগে অ্যাপস্টোরে ফি কমাতে বাধ্য হওয়াকেও কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন পোরাট।
গুগলের অন্য যে আর্থিক উৎস, যার মধ্যে রয়েছে অ্যাপ, হার্ডওয়্যার এবং গ্রাহক ফি সেখান থেকে আয় দাঁড়িয়েছে ছয় ছয়শ ৮০ কোটি ডলার, যেটি সাতশ ৩০ কোটি ডলার হবে বলে ধারণা ছিল।
অ্যালফাবেটের প্রান্তিক লাভ এক হাজার ছয়শ ৪৪ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। গুগলের শেয়ার মূল্য ২৫.৭৬ ডলার হওয়ার আশা থাকলেও সেটি এখন ২৪.৬২ ডলার।
বৈশ্বিক ৬০ হাজার ২০০ কোটি ডলারের বিজ্ঞাপন বাজারের শতকরা ২৯ ভাগ দখলে রেখে গুগল এবং সম্প্রতি হয়ে ওঠা অ্যালফাবেট টানা ১২ বছরের মতো শীর্ষ অবস্থান ধরে রাখছে বলে জানিয়েছে বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান ইনসাইডার ইন্টেলিজেন্স।