এবার ঈদ উপলক্ষে
২৭ এপ্রিলের টিকেট বিক্রির মধ্য দিয়ে ঢাকা থেকে ট্রেনের আগাম টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছিল।
সে অনুযায়ী, বুধবারকে ট্রেনের ঈদযাত্রা শুরুর দিন ধরা হচ্ছে।
ঢাকা থেকে সারাদেশের
বিভিন্ন গন্তব্যের সব ট্রেন কমলাপুর স্টেশন থেকে ছাড়ে। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ডজন
খানেক ট্রেনের যাত্রা শুরুতে দেরি দেখা গেলেও কোনোটির যাত্রা এক ঘণ্টার বেশি বিলম্বিত
হয়নি।
ভোর ৬টায় রাজশাহীগামী
ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেন ছাড়ার মধ্য দিয়ে ঈদযাত্রা শুরুর কথা ছিল। প্রায় এক ঘণ্টা দেরিতে
সকাল ৬টা ৫৫ মিনিটে ছাড়ে ট্রেনটি।
কমলাপুর রেল স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ট্রেন আসতেই ব্যস্ত হয়ে উঠেন অপেক্ষায় থাকা যাত্রীরা। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি
আর এর আগেই সকাল
৬টা ২০ মিনিটে সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস স্টেশন চেড়ে যাওয়ায় সেটি হয়ে যায় ঈদযাত্রার
প্রথম ট্রেন।
পারাবত এক্সপ্রেস
ছেড়ে যাওয়ার পর সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে ছাড়ার কথা ছিল চিলাহাটিগামী নীলসাগর এক্সপ্রেসের।
ট্রেনটি ছাড়ে সকাল ৭টার পর।
সকাল ৭টার পর চট্টগ্রাম
অভিমুখী সোনার বাংলা এক্সপ্রেস প্লাটফর্ম থেকে ছেড়ে গেছে।
সকাল ৭টায় ছাড়ার
কথা থাকলেও তখনও প্লাটফর্মে অবস্থান করতে দেখা যায় কিশোরগঞ্জগামী এগারসিন্দুর প্রভাতী,
দেওয়ানগঞ্জ অভিমুখী তিস্তা এক্সপ্রেস ও চট্টগ্রাম অভিমুখী মহানগর প্রভাতী এক্সপ্রেসকে।
প্ল্যাটফর্মে ট্রেন আসতেই হুমড়ি খেয়ে পড়েন অপেক্ষারত যাত্রীরা। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি
খুলনাগামী সুন্দরবন
এক্সপ্রেসের ৮টা ১৫ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও আধা ঘণ্টা দেরিতে ৮টা ৪৫ মিনিটে ট্রেনটি
কমলাপুর ছাড়ে। রংপুর এক্সপ্রেসের ৯টা ১০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও তা ছেড়ে যায় সাড়ে
১০টায়।
ট্রেন দেরিতে ছাড়ায়
ক্ষোভ প্রকাশ করেন রংপুর এক্সপ্রেসে করে গাইবান্ধার যাত্রী রাইসুল ইসলাম সোহাগ।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর
ডটকমকে বলেন, “আমার ট্রেন ৯টা ১০ মিনিটে ছাড়ার
কথা। কিন্তু ট্রেন আসেই দেরিতে।”
ট্রেনগুলো দেরিতে
ছাড়ায় গরমে ভিড়ে যাত্রীদের হাঁসফাঁস করতে দেখা যায়।
স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে ঢাকা ছাড়ছে ঘরমুখো মানুষ। কমলাপুর রেল স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ট্রেনের অপেক্ষায় ঈদযাত্রীরা। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি
কমলাপুরের স্টেশন
ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার সাংবাদিকদের বলেন, “সকাল থেকে যে ট্রেনগুলো ছেড়ে গেছে,
এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের দিকে তিনটি ট্রেন একটু বিলম্বে ছেড়েছে। ট্রেনগুলোর লাইন জয়দেবপুর
থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত, সবগুলো সিঙ্গেল লাইন। সেখানে যতগুলো স্টেশন আছে, একটা স্টেশন
থেকে আরেকটা স্টেশনের দূরত্ব অনেক বেশি। যার কারণে ক্রসিং এবং ডিফারেন্সের কারণে যে
অ্যারেঞ্জমেন্টগুলো, সেগুলো একটু দেরি।
“একটা স্টেশন থেকে আরেকটা স্টেশনের
দূরত্ব ২৩ কিলোমিটার। এই ২৩ কিলোমিটারের লাইনে একটা ট্রেন না গেলে আরেকটা ট্রেন আসতে
পারে না, যেতেও পারে না।”
মাসুদ বলেন, “পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেনগুলোর শিডিউল
বিপর্যয় হতে পারে। এটা আমাদের মেনে নিয়েই কাজ করতে হবে। যতদিন পর্যন্ত ডাবল লাইন
না হবে ততদিন এই সমস্যাটা থাকবে। আশার কথা হলো, রেল মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে ডাবল লাইন
করার প্রকল্প হাতে নিয়েছে।”
পূর্বাঞ্চলে শিডিউল
বিপর্যয়ের শঙ্কা নেই দাবি করে তিনি বলেন, “পূর্বাঞ্চলে যে ট্রেনগুলো রয়েছে, সেগুলো যথাসময়ে ছাড়তে
পারব আশা করি।”
কমলাপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর ও উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সংগৃহীত ৩০টি মিটার গেজ ও ১৬টি ব্রডগেজ লোকোমোটিভের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন।
রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম
সুজন বুধবার কমলাপুর স্টেশনে ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর ও
উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সংগৃহীত ৩০টি মিটার গেজ ও ১৬টি ব্রডগেজ লোকোমোটিভের
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য।
তিনি অতিরিক্ত ট্রেন না
চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় লোকবল ও রেলওয়ে সিঙ্গেল লাইনকে কারণ হিসাবে দেখান।
সুজন বলেন, “আমাদের
বেশির ভাগ রেলওয়ে লাইন সিঙ্গেল লাইন। এ কারণে আমরা বেশি সংখ্যক ট্রেন পরিচালনা
করতে পারি না। কারণ একই ট্রেনে আসা যাওয়ার ক্ষেত্রে যে কোনো স্টেশনে আরেকটি
ট্রেনকে পাসিং দিতে হয়।”
রেলের লোকবলের অভাবের
বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, “কিন্তু বর্তমান সরকার আসার পরে লোকবলের অভাব পূরণের চেষ্টা করা
হচ্ছে। ইতোমধ্যে লোকবল নিয়োগের জন্য অনেকগুলো বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে। আশা করা
যাচ্ছে, অল্পদিনের মধ্যে সে ঘাটতি পূরণে সক্ষম হবে রেল।”
মন্ত্রী দাবি করেন, রেলের
প্রতি মানুষের আস্থা বেড়েছে।
“রেল এখন মানুষের আশা ও বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এই ঈদেও
সেটা দেখা গিয়েছে। এবার ঈদে মানুষ রেল কে প্রথম বাহন হিসেবে পছন্দ করেছে। যে
কারণে রেলের প্রতি এতদিন মানুষ যে আগ্রহবিমুখ ছিল, তা আবার ফিরে এসেছে।”
তিনি জানান,
যুক্তরাষ্ট্র থেকে মোট ৪০টি লোকোমোটিভ বা ইঞ্জিন আনা হচ্ছে। এর মধ্যে ১৬টি পৌঁছেছে,
বাকি ২৪টি আসার পথে।