বুধবার জাতীয় সংসদ ভবনে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে র্যাব ও শ্রম আইন নিয়ে বাংলাদেশের ওপর ‘যুক্তরাষ্ট্রের চাপের’ বিষয়টি নিয়ে আলোচনার কথা জানিয়ে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
ফারুক খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তারা লেবার রাইটস নিয়েও কথা বলছে। লেবার রাইটস নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নও কথা বলতে শুরু করেছে। এ দুটো বিষয় নিয়ে আমাদের চিন্তা করতে হবে।”
র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
স্থায়ী কমিটির সভাপতি বলেন, “যে অভিযোগগুলো রয়েছে সে বিষয়ে ফ্যাক্ট অ্যান্ড ফিগার দিয়ে ক্লারিফাই করতে হবে। জানাতে হবে এর কোনোটাই ইচ্ছাকৃতভাবে হচ্ছে না।”
র্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের চেষ্টায় বাংলাদেশের অগ্রগতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আমাদের বৈঠক হয়েছে সেখানে র্যাবের বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।
“পৃথিবীর যে কোনো দেশে এ ধরনের প্রেক্ষাপটে একটি দুটি ভুল হতেই পারে। মোটামুটি আমরা বোঝাতে সক্ষম হয়েছি যে, র্যাব অনেক ভালো কাজ করছে।
“যদি কোনো ভুল করে থাকে তার জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ফ্যাক্ট অ্যান্ড ফিগার দেওয়া হয়েছে।”
গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে গত ডিসেম্বরে র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক, বর্তমান পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমদসহ বাহিনীর সাত কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ওয়াশিংটন।
ফারুক খান। ফাইল ছবি
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে ওই নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল ঢাকা। ১৫ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের সঙ্গে টেলিফোনেও আলাপ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
সন্ত্রাসবাদ ও মাদক নির্মূলে র্যাবের ভুমিকার কথা তুলে ধরে ওয়াশিংটনে চলতি মাসের শুরুতে ব্লিংকেনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকেও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানান মোমেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে বন্ধুপ্রতীম দেশগুলোকে কাজে লাগানোর বিষয়ে ফারুক খান বলেন, আমরা আগের বৈঠকে দুই দেশের যাদের কমন বন্ধু তাদের কাজে লাগানোর কথা বলেছিলাম।
“পররাষ্ট্রমন্ত্রী আজ জানিয়েছেন ভারতের সাথে কথা বলেছেন। তিনি জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে কথা বলেছেন। জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।”
কূটনৈতিক অন্যান্য তৎপরতাও চলছে জানিয়ে স্থায়ী কমটির সভাপতি বলেন, “এছাড়া অন্যান্য দেশের ইনফ্লুয়েন্সের জন্য আমরা ডিপ্লোম্যাটিক চ্যানেলে আমরা কথা বলছি।”
বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়েনেরও (ইইউ) চাপ রয়েছে। যে কারণে ইইউর জিএসপি সুবিধা কমে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
ফারুক খান বলেন, “শ্রমিকদের বিষয়ে যে প্রশ্নগুলি আসতে পারে তা আরও গভীরে গিয়ে দেখতে হবে। কারণ আগামীতে তারা হয়তো লেবার ইস্যু নিয়ে আরও প্রশ্ন তুলতে পারে।
“ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথেও আমরা অব্যাহত আলোচনা চালিয়ে যেতে বলেছি। সেখানে আমাদের জিএসপি সুবিধাগুলি আছে তা কিছুটা কমতে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছি।”
গত ফেব্রুয়ারি মাসে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে মন্ত্রণালয় জানায়, শ্রম আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, মানবাধিকার ইত্যাদি বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ক্রমাগত চাপ দিচ্ছে বলে ‘প্রতীয়মান হয়’।
“যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি সুবিধা বাতিল করার পর বাংলাদেশ একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও দেশটি পুনরায় সে সুবিধা চালু করেনি।”
মন্ত্রণালয় বলছে, “গত ২০ বছরে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে কোনো দ্বিপাক্ষিক সফর হয়নি। তবে এ বছর বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে উচ্চ পর্যায়ের সফর আয়োজনের জোর কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।”
বৈঠকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
ফারুক খানের সভাপতিত্বে কমিটির সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এবং মো. হাবিবে মিল্লাত বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।
আরও পড়ুন:
র্যাব ও সাবেক-বর্তমান ৭ কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা
র্যাবের নিষেধাজ্ঞা তুলতে দীর্ঘ প্রক্রিয়া পার হতে হবে: মোমেন
র্যাবের নিষেধাজ্ঞা উঠতে সময় লাগবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
র্যাবের নিষেধাজ্ঞা ‘মুখে বললেই’ উঠবে না, ঢাকাকে বলেছে যুক্তরাষ্ট্র