তার ভাষায়, আবাসিক এলাকায় ১ বিঘার মতো ওই জমিটি পরিত্যক্ত ছিল, তা এখন পুলিশের সম্পত্তি।
তেঁতুল তলায় থানা ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে খুশি কবিরসহ কয়েকজন অধিকারকর্মী ও পরিবেশবাদীর অনুরোধ শোনার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের একথা বলেন।
তুমুল আলোচনার মধ্যে তেঁতুল তলা মাঠের বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা সোমবার জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর পুলিশ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সেখানে থানা ভবনের পক্ষে যুক্তি দেখানোর পরদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যও ঘুরে গেল।
কলাবাগান আবাসিক এলাকায় (পান্থপথের দক্ষিণ পাশে) তেঁতুল তলায় শিশু-কিশোররা যেমন খেলত, তেমনি নানা সামাজিক অনুষ্ঠানও চলে আসছিল। স্থানীয়রা একে তেঁতুল তলা মাঠ হিসেবেই চেনে।
মাঠটি পুলিশ কলাবাগান থানা নির্মাণের জন্য বরাদ্দ নিলে তার প্রতিবাদে নামে ওই এলাকার বাসিন্দারা, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন উদীচীর কর্মী সৈয়দা রত্না।
গত রোববার পুলিশ ওই মাঠে প্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু করলে রত্না তার তরুণ ছেলেকে নিয়ে সেখানে গিয়ে ফেইসবুক লাইভ শুরু করলে তাদের ধরে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। অনলাইনে-অফলাইনে ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে ১৩ ঘণ্টা পর মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয় তাদের।
রত্নার মুক্তির দাবিতে সেদিন তেঁতুল তলায় যাওয়া খুশি কবির, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, স্থপতি ইকবাল হাবিব ও সঙ্গীতা ইমাম বুধবার সচিবালয়ে যান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে।
মন্ত্রীর কক্ষ থেকে বেরিয়ে খুশি কবির সাংবাদিকদের বলেন, “মন্ত্রীকে বলেছি নির্মাণকাজ বন্ধ করতে। তিনি পুলিশ কমিশনারকে বিষয়টি বলবেন বলে জানিয়েছেন।”
মন্ত্রীর কথায় আশ্বস্ত হয়েছেন কি না- সাংবাদিকরা জানতে চাইলে খুশি কবিরকে দ্বিধাগ্রস্ত দেখায়। তখন আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “কিছুটা।”
তেঁতুল তলা মাঠে সৈয়দা রত্নাকে পুলিশ আটক করেছে খবর পেয়ে রোববার সেখানে ছুটে গিয়েছিলেন খুশি কবিরসহ অধিকার ও পরিবেশবাদীকর্মীরা। ফাইল ছবি
মাঠ না থানা, আলোচনা করে সিদ্ধান্ত: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
শিশুদের খেলার জন্য কলাবাগান মাঠ তো আছেই: ডিএমপি
এরপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে সাংবাদিকরা বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যেটাকে তেঁতুলতলা মাঠ বলছেন, সেটা কখনও মাঠ ছিল না। এটা গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিত্যক্ত সম্পত্তি ছিল।
“আমরা শুনেছি। লোকালয়ের পাশে খালি জায়গা, এখানে বাচ্চারা খেলাধুলা করত। একটু আলাপচারিতার জন্য এই জায়গাটি ছিল। এখন সবাই এই জায়গা নিয়ে নানান কথাবার্তা বলছে।”
থানা ভবনের গুরুত্ব তুলে ধরে আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, “ঢাকা শহরে যে নতুন নতুন থানা ভবন হচ্ছে, বেশিরভাগই ভাড়া বাড়িতে। ভাড়া বাড়িতে থাকার কারণে আমাদের পুলিশ ফোর্স নানা ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন। সেজন্য এগুলোকে স্থায়ী স্থানে নেওয়ার জন্য আমরা নিয়ম অনুযায়ী ডিসির (জেলা প্রশাসক) কাছে ঢাকা শহরের কোন জায়গায় জমি অধিগ্রহণের জন্য বলেছিলাম।
“ঢাকার কলাবাগানের কোনো জায়গায় দেওয়া যায় কিনা বলেছিলাম। জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ করে এই জায়গাটি বরাদ্দ দেন। সেই জায়গাটির যে মূল্য তা ঢাকা মহানগর পুলিশ জমা দেওয়ার পর ডিসি জায়গাটি হস্তান্তর করে দিয়ে যান। এটা ছিল মূলকথা।”
দুদিন আগে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার যে কথা বলেছিলেন, সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমাদের স্পষ্ট কথা, আমাদের জায়গা প্রয়োজন। কলাবাগানের একটি থানা ভবন প্রয়োজন। সেটার দিকে লক্ষ্য রেখে আমরা বলছি, এই জায়গাটা আমরা পেয়েছি, এর চেয়ে যদি ভালো, সুইটেবল জায়গা ওখানকার মেয়র সাহেব কিংবা অন্য কেউ যদি ব্যবস্থা করতে পারেন, তখন আমরা সেটা কনসিডার করব। আপাতত আমাদের থানার জন্য এটাই নির্দিষ্ট জায়গা, সরকারিভাবে এটা ব্যবস্থা হয়েছে।”
কোন আইনে রত্নাকে ১৩ ঘণ্টা থানায় আটকে রাখা হল, প্রশ্ন পুলিশকে
প্রতিবাদ করলেই কেন আটক হতে হয়, প্রশ্ন ১৯ নাগরিকের
খুশি কবিররা দেখা করে আসার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
তাহলে সেখানে নির্মাণ কাজ চলবে- প্রশ্ন করলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “নির্মাণ কাজ হবে কি হবে না, সেটা পরের কথা। জায়গাটি পুলিশের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। বরাদ্দ যেহেতু হয়েছে সেই জায়গাটি পুলিশের।
“কিছুক্ষণ আগে যারা আসছিলেন, তারাও আমাদের কাছে একটা আবেদন করেছেন, বিকল্প কিছু করা যায় কিনা, সেই পর্যন্ত স্থগিত রাখার জন্য। থানাও জরুরি দরকার, বাচ্চারা যারা কথা বলছে, তাদেরও একটা রিক্রিয়েশন দরকার। সেজন্য বলছিল আপাতত কনস্ট্রাকশনটা না করে আমরাও খুঁজি দেখি, এটাই তাদের আবেদন ছিল।
“আমি বলেছি, আমরা তো এখনই কনস্ট্রাকশনে যাচ্ছি না। খুঁজুন আমরা দেখব। আপনারা যদি এর চেয়ে ভালো অফার দিতে পারেন আমরা অবশ্যই দেখবো। এটাই বলা হয়েছে,” বলেন তিনি।
মাঠ-জলাশয় রক্ষা করে উন্নয়ন কাজ করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা মন্ত্রীকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হলে তিনি বলেন, “এখানে মনে হয় ২০ কাঠা জমি, খুব বড় জমি কিন্তু নয়, ফুটবল খেলার মাঠ এরকমও কিছু নয়, টেনিস খেলার মাঠ হবে দুটো, সেই রকমও কিছু নয়। এটা খুবই ছোট জায়গা। এটা আপনারা নিজেরাও বোঝেন।
“চিকন-লম্বালম্বি জায়গা, জায়গাটিও সুন্দর কিংবা ভালো অবস্থায় সেই রকমও কিন্তু নয়। তারা যেহেতু একটা আবেদন করে গিয়েছে আমরা দেখব। আমরা যদি এর চেয়ে স্যুইটেবল কিছু পাই, যেহেতু আমরা টাকা দিয়ে ফেলছি, সেটার কী হবে? সবকিছু আমরা আলোচনা করব।”
তেঁতুল তলা মাঠের দাবিতে বিশিষ্টজনসহ অনেকের সরব হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমিও বলতেছি, আমার থানা দরকার। সেটা তো পাবলিকের বুঝতে হবে। কারণ আমি যদি পাবলিককে সুরক্ষা না দিতে পারি, নিরাপত্তা না দিতে পারে। তখনও তো পাবলিক সেন্টিমেন্ট আমাদের বিপক্ষে আসবে। আর জায়গাটি তো আমরা নির্বাচন করিনি, জমিটি আমাদের অধিগ্রহণ করে দিয়েছে।”
মাঠের জন্য আন্দোলনকে যৌক্তিক মনে করছেন কি না- জানতে চাইলে কলাবাগানের পাশের এলাকার সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, “কঠিন কঠিন প্রশ্ন করলে তো আমি মুশকিলে পড়ে যাব।
“আমি বলব, এখন এটা পুলিশের সম্পত্তি। এখন একটি আবেদন আসছে, সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা চিন্তা-ভাবনা করব, এটা কী করা যায়।”
সীমানা প্রাচীর নির্মাণ স্থগিত রাখার জন্য ডিএমপি কমিশনারকে বলবেন কি না- জানতে চাইলে তিনি এবারও সরাসরি উত্তর এড়িয়ে বলেন, “আমি বলেছি, আমরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করব।”