বুধবার কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) আয়োজিত ‘ন্যায্যতা উপেক্ষা করে গ্যাস বাণিজ্য কার স্বার্থে’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
অনলাইনে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে দেশে গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে কাজ করা সংগঠনটি।
গোলাম রহমান বলেন, “গ্যাসের সংকট আমাদের অর্থনীতিকে স্থবির করে দিচ্ছে। জনদুর্ভোগের কারণ হচ্ছে। এরই মধ্যে গণশুনানি হয়ে গেছে। আমরা খুব আশান্বিত হয়েছি যে প্রধানমন্ত্রীর প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি সম্প্রতি গণমাধ্যমে বলেছেন- সরকার চায় না জ্বালানি তেলের দাম বাড়ুক। ক্যাবের পক্ষ থেকেও আমরা মনে করি এখন গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সময় নয়।”
অথচ এর মধ্যেই গ্যাসের দাম বাড়ানোর একটি প্রক্রিয়া চলছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “জনজীবন যখন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে বিপর্যস্ত সেসময়ে জ্বালানি তেল, গ্যাস অথবা বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি আগুনে ঘি ঢালা হবে বলে আমি মনে করি।”
সরকার না চাইলেও কার স্বার্থে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে- প্রশ্ন রাখেন ক্যাবের সভাপতি। সরকারকে দ্রুত এ প্রক্রিয়া বন্ধ করতে অনুরোধ করেন তিনি।
এমন প্রেক্ষাপটে যে কোনো সময় গ্যাসের দাম বাড়ানোর আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “না হলে দেখা যাবে, কোনো একদিন সকাল বেলা গ্যাসের দাম অনেক বৃদ্ধি পেয়ে গেছে।”
গোলাম রহমান বলেন, “এরই মধ্যে গণশুনানি হয়ে গেছে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) আইন অনুযায়ী তাদের কিন্তু ৯০ দিনের মধ্যে একটি সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সরকার যদি মূল্যবৃদ্ধি করতে না চায় তাহলে যে প্রস্তাবটি সরকারের সংস্থাগুলো বিইআরসিতে জমা দিয়েছে এবং প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। সরকার থেকে সে সমস্ত প্রস্তাবগুলো প্রত্যাহার করার জন্য সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে নির্দেশ দিলে সমস্যার সমাধান হবে।”
ক্যাব মনে করেন গ্যাসের দাম বাড়ানোর কোনো দরকার নেই বরং কমানো যেতে পারে দাবি করে তিনি বলেন, “পেট্রোবাংলা ১১৭ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে, যা নিতান্তই হাস্যকর। এসব কোম্পানি নিয়মিতভাবে লাভ করছে এবং বোনাসও দিচ্ছে। ইনসেনটিভ বোনাসও দিচ্ছে।
“বিইআরসির টেকনিক্যাল কমিটি গ্যাসের দাম বাড়ানোর যে সুপারিশ করেছে, সেখানে ২০ শতাংশ দাম বাড়ানোর কথা বলা আছে। কিন্তু ক্যাব হিসাব করে দেখেছে গ্যাসের দাম বাড়ানোর কোনো দরকার নেই বরং কিছুটা কমানো যেতে পারে।”
ক্যাবের সভাপতি বলেন, “ভোক্তারা বেশ সাশ্রয়ী মূল্যে গ্যাস পেয়েছেন এর কারণ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু তার দূরদর্শিতার কারণে বিদেশি কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে সমস্ত গ্যাস ফিল্ড কিনে নিয়েছিলেন। তাই আমরা সাশ্রয়ী মূল্যে গ্যাস পাচ্ছি। কিন্তু পরবর্তী সময়ে আমরা যেটা দেখছি যে দেশের গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধি করা হচ্ছে না বা এর উপর কেমন যেন একটি অনীহা আছে।
“আবার দেশীয় কোম্পানিকে গ্যাস উৎপাদন করতে সক্ষম না করে বিদেশি কোম্পানিকে দিয়ে গ্যাস উত্তোলন করার প্রচেষ্টাও আমরা দেখেছি।”
দেশে গ্যাসপ্রাপ্তির সুযোগ কেন কাজে লাগানো হচ্ছে না সেটিও তাকে অবাক করেছে বলে জানান তিনি।
“পৃথিবীতে পাঁচটি কুপ খনন করলে একটিতে গ্যাস পাওয়া যায়। আর বাংলাদেশে তিনটি কুপ খনন করলে একটিতে গ্যাস পাওয়া যায়। এখানে গ্যাস পাওয়ার সুযোগ অনেক বেশি। এ সুয়োগ আমরা কোনো কাজে লাগাচ্ছি না। আমাদের কাছে এটা একটি গোলাক ধাঁধার মত, যোগ করেন গোলাম রহমান।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরুল ইমাম, ক্যাবের জ্যেষ্ঠ সহ সভাপতি অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম, সহ সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ূন কবির ভূঁইয়া।