ক্যাটাগরি

বিএনপির সময়ে রেল ‘মুখ থুবড়ে পড়ে’: প্রধানমন্ত্রী

বুধবার নতুন ৩০টি মিটারগেজ এবং ১৬টি ব্রডগেজ
লোকোমেটিভের (ইঞ্জিন) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে কথা বলেন তিনি।

গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী
বলেন, বাংলাদেশে নৌপথ, সড়কপথ বা বিমানপথ থাকলেও রেলপথ সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ।

“কিন্তু সেই রেলকেই… সব থেকে দুঃখের
বিষয়, বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে এই রেল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়। মূলত আমাদের বিআরটিসি
বন্ধ করার পরিকল্পনা, রেল বন্ধ করার পরিকল্পনা… এই সব বিষয়ে কিন্তু
পরামর্শ দিয়েছিল বিশ্ব ব্যাংক।”

শেখ হাসিনা বলেন, “গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের
মাধ্যমে রেলের ১০ হাজার কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়। অনেক রেল লাইন বন্ধ করে দেওয়া
হয়। রেল আসলে মুখ থুবড়ে পড়ে।”

১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর রেলের
উপর সবচেয়ে ‘বড় আঘাত’ এসেছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর
রহমানকে হত্যার পর সংবিধান লঙ্ঘন করে যারা অবৈধভাবে সরকার গঠন করেছিল, তারা স্বাধীনতার
পর থেকে দেশের যে উন্নয়ন হচ্ছিল, সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখেনি।

রেল নিয়ে আলাদা মন্ত্রণালয় করার কারণ ব্যাখ্যা
করে শেখ হাসিনা বলেন, “আওয়ামী লীগ যখন সরকারে আসে, তখন আমরা চেষ্টা করেছিলাম রেলকে
আবার নতুনভাবে গড়ে তোলা এবং মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সুগম করার। আর দ্বিতীয় বার
যখন আমি সরকারে আসি, তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিই, রেলকে পৃথক মন্ত্রণালয় করব।

“কারণ পৃথক মন্ত্রণালয় না করলে আলাদা বাজেট
পাব না, আলাদাভাবে প্রজেক্ট নিতে পারব না, কাজ করতে পারব না। তাই ২০০৯ সালে সরকারে
আসার পর এই সিদ্ধান্ত নেই এবং ২০১১ সালে আমি রেল মন্ত্রণালয় গড়ে তুলি।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যখন রেলকে আধুনিক করতে
নানা ধরনের উদ্যোগ নিল সরকার, তখন বিএনপি অগ্নি সন্ত্রাস শুরু করেছিল, যা সত্যিই দুঃখজনক।
এই যে নতুন রেলগুলো যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে, সেই রেলে আগুন দেওয়া হলো। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে
পুড়িয়ে বহু রেল আমাদের রেল লাইনসহ বিএনপি পুড়িয়ে দিয়েছিল। এটা নাকি তাদের আন্দোলন।

“আমি জানি না মানুষকে পুড়িয়ে মারা বা চলন্ত
বাস, গাড়ি অথবা রেলে আগুন দেওয়া, লঞ্চে আগুন দেওয়া এটা কোন ধরনের আন্দোলন। এটা তো এক
ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড।।”

বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,
“অবশ্য তারা তো ক্ষমতাদখলকারীদের হাতে ক্ষমতায় বসে প্রতিষ্ঠিত পার্টি। জনগণের মধ্য
থেকে তো উঠে আসেনি। তাই জনগণের কল্যাণের দিকে তাদের দৃষ্টি থাকে না। ক্ষমতার লোভটাই
তাদের বড়।

“কারণ মানি লন্ডারিং, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ
সৃষ্টি, বাংলা ভাই সৃষ্টি এইগুলোই তো তাদের কাজ ছিল। তারা দেশের মানুষের কল্যাণে কিছু
করেনি।”

বাংলাদেশ ভৌগলিক সীমানার দিক থেকে ছোট হলেও
ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়ায় অল্প খরচে যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনের জন্য রেলের গুরুত্বের কথা
তুলে ধরেন সরকারপ্রধান।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের অনেক অঞ্চল এখনও রেললাইন
দেখেনি। সেই সব অঞ্চলে, যেমন বরিশাল বিভাগে রেল লাইন নির্মাণের জন্য সরকার ইতোমধ্যে
উদ্যোগ নিয়েছে।

“তবে এটা আমাদের দেখতে হবে যে আমাদের নদী
নালা খাল বিলের দেশ। আমাদের মাটিও অনেক নরম। সেইটা বিবেচনা করে কীভাবে কতটুকু কোন কোন
জায়গায় আমাদের রেল লাইন করা দরকার সেগুলো আমরা বিবেচনা করেছি।

“ইতোমধ্যে আমরা যেমন পদ্মা সেতু নির্মাণ
করে সেখানে আমরা রেল লাইন সংযোগ করে দিচ্ছি আর পদ্মা সেতুর সাথে রেল লাইন সংযোগ হলে
যেমন ভাঙ্গার থেকে আমরা যশোর পর্যন্ত ফরিদপুর হয়ে সেই রেল সংযোগ করে দিচ্ছি, যা যশোর
থেকে খুলনা হয়ে একেবারে মংলা পোর্ট পর্যন্ত সংযোগ স্থাপন হচ্ছে।”

পাশাপাশি পদ্মা সেতুর ভাঙ্গা থেকে পায়রা
পর্যন্ত, অর্থাৎ বরিশাল হয়ে পটুয়াখালী পর্যন্ত রেলের অ্যালাইনমেন্ট ঠিক করা হয়েছে জানিয়ে
শেখ হাসিনা বলেন, “এখানে প্রায় ১৮টার মতো উপজেলা, আটটি জেলার সংযোগ হবে। সেভাবে একটা
রেল অ্যালাইনমেন্ট করা হয়েছে। কিন্তু এটার ফিজিবিলিটি এখনও স্টাডি হচ্ছে যে, এখানে
রেল কীভাবে স্থাপন করা যায়।”

দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের
কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “এটা করতে পারলেও আমি মনে করি, আমাদের দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষ,
যে অঞ্চলের মানুষ এই জলবায়ুর অভিঘাতে সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে যাচ্ছে সেখানে আমরা ব্যাপক
উন্নয়ন প্রকল্প নিয়েছি।

“এই জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে যাতে
ওই অঞ্চলের মানুষ রক্ষা পায় এবং তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা যাতে সুগম হয়।”

রেলমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন, রেলপথ
মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ.বি.এম ফজলে করিম চৌধুরী, রেলপথ
মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন কবীরসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কমলাপুর রেলওয়ে
স্টেশনে এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

আরও খবর

বাঁশিতে ফুঁ দিয়ে ৪৬ রেল ইঞ্জিন উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রীর