বৃহস্পতিবার বিকাল সোয়া ৫টায় চট্টগ্রাম চট্টগ্রাম রেল স্টেশন থেকে চাঁদপুরের
উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া মেঘনা এক্সপ্রেসের যাত্রী মহসিন মুখের হাসি দিয়েই তার ঈদ যাত্রার
আনন্দের অনুভূতি প্রকাশ করলেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত দুই ঈদে বাড়ি যেতে পারিনি। এবারে
তাই আগে থেকেই টিকিট করে রেখেছিলাম। সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে ট্রেনে অনেক ভিড় হবে এ
চিন্তা মাথায় রেখেই আগেভাগে চলে আসি। স্টেশনে অনেক ভিড় হলেও নিজের সিট পেয়ে আমি ও আমার
পরিবারের সদস্যরা খুশি।”
মহামারীর ধাক্কা কাটিয়ে চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ঈদের খুশি
ভাগ করে নিতে ছুটতে শুরু করেছেন নিজ নিজ বাড়ির উদ্দেশে। এবারে ঈদের ছুটি বেশি হওয়ায়
এবং কোনো বিধিনিষেধ না থাকায় তাদের বাড়ি ফেরার আনন্দ অনেক বেশি।
ব্যাংক ছাড়া সরকারি-বেসরকারি বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেষ কর্মদিবস ছিল বৃহস্পতিবার।
সেই হিসেবে চট্টগ্রাম থেকে দূরপাল্লার বিভিন্ন ট্রেন এবং বাস কাউন্টারগুলোতে ঘরমুখো
যাত্রীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেছে চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে। দুপুর থেকেই বিভিন্ন গন্তব্যে
ট্রেনের যাত্রীদের ভিড় দেখা যায়। এবারে ট্রেনে ঝুলে বা ছাদের ওপর যাত্রীদের দেখা যায়নি।
সন্ধ্যা পর্যন্ত চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ট্রেন ছেড়েছে সঠিক সময়ে।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ টিকিট ছাড়া যাত্রী এবং ছাদে ওঠা থেকে বিরত রাখতে কঠোর নজরদারি
রাখে। একইসাথে ঘরমুখো যাত্রীদের চাপ সামলাতে ঢাকামুখী দুটি আন্তঃনগর ছাড়া বাকি ট্রেনগুলোতে
নির্ধারিত আসনসংখ্যার বিপরীতে ২০ শতাংশ ‘স্ট্যান্ডিং টিকিট’ সরবরাহ করছে।
বৃহস্পতিবার বিকালে চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি প্লাটফরম
জুড়ে ঘরমুখো বিভিন্ন বয়েসী মানুষের ভিড়। আসন নিশ্চিত করতে দরজা দিয়ে ওঠার পাশাাপশি
অনেকেই জানালা দিয়ে ট্রেনে উঠছেন। টিকিট ছাড়া অনেক যাত্রী ছাদে ওঠার চেষ্টা করলে রেলের
নিরাপত্তাকর্মীরা তাদের নামিয়ে দিচ্ছেন।
বিকাল সোয়া ৫টায় চাঁদপুরগামী মেঘনা এক্সপ্রেস ছেড়ে যাবার আগে যাত্রী মোহাম্মদ
সুমন বলেন, ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় গত বছর পরিবারের সদস্যদের সাথে ঈদ করতে চট্টগ্রাম
থেকে কভার্ডভ্যান, ভ্যানগাড়ি ও সিএনজি অটো রিকশা করে চাঁদপুরের বাড়িতে গিয়েছিলাম।
পেশায় গার্মেন্টসকর্মী সুমন বলেন, “এবারে মহামারি নেই, বিধিনিষেধও নেই, গার্মেন্টস
ছুটিও দিয়েছে অনেকদিন। সে কারণে আগেভাবেই বাড়িতে যাচ্ছি। সেখানে ছেলে-বৌয়ের সাথে ঈদ
করতে পারব। যাত্রীর চাপে এই গরমে একটু কষ্ট হলেও খুব আনন্দ লাগছে।”

স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম স্টেশনে চাঁদপুরগামী ট্রেনে উঠতে মানুষের ভিড়। ছবি: সুমন বাবু
প্রকৌশলী আবদুল হালিমও পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে চাঁদপুরে বাড়িতে
যাচ্ছেন। তিনি বলেন, গত বছর ঈদে বাড়ি যাওয়া হয়নি। এবার টিকিটও পেয়েছি, ভাল লাগছে।
এবারে ঈদ যাত্রায় পূর্ব রেলের পক্ষ থেকে প্রতিদিন মেইল, এক্সপ্রেস ও আন্ত:নগর
মিলিয়ে ১২টি ট্রেন চলাচল করছে। মূলত চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা, সিলেট, ময়মনসিংহ, চাঁদপুরের
উদ্দেশে ট্রেন ছেড়ে যায়।
এছাড়া পূর্ব রেলের অধীন নোয়াখালী থেকে ঢাকার উদ্দেশে একটি এক্সপ্রেস ট্রেন
ছাড়ে। এর বাইরে চট্টগ্রামের নাজিরহাট ও দোহাজারি রুটে লোকাল ট্রেন চলে প্রতিদিন।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে সোম বা মঙ্গলবারে ঈদ হতে পারে হিসেব করেই এবারের ছুটি নির্ধারণ
করা হয়েছে। সেই সাথে শুক্র ও শনিবারের সাপ্তাহিক ছুটি ও রোববার মে দিবসের সরকারি ছুটি
মিলিয়ে এবারে লম্বা বন্ধই মিলেছে চাকরিজীবীদের। লম্বা ছুটি হিসেব করে বৃহস্পতিবারই
চট্টগ্রামবাসীর বড় একটি অংশ শহর ছেড়েছে।
পূর্ব রেলের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা ইতি ধর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে
বলেন, “আজ থেকেই ট্রেনে করে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে। যাত্রীদের নিরাপদ
যাত্রা নিশ্চিত করতে রেল কর্তৃপক্ষ সবধরণের ব্যবস্থা নিয়েছেন। প্রতিদিন ১২টি ট্রেন
ছাড়ার কথা। বিভিন্ন আন্তঃনগর ট্রেনের সাপ্তাহি ছুটি থঅকলেও ঈদ যাত্রায় তা থাকছে না।”
বৃহস্পতিবার সব ট্রেন নির্ধারিত সময়ে ছেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখনও শিডিউল
ঠিক আছে। যাত্রীদের চাপ থাকায় সুবর্ণ ও সোনারবাংলা এক্সপ্রেস ছাড়া অন্য সব ট্রেনে আসনের
বিপরীতে ২০ শতাংশ স্ট্যান্ডিং টিকিট দেওয়া হচ্ছে।
শুক্র ও শনিবারে বিভিন্ন গন্তব্যে ট্রেনে আরও চাপ বাড়বে বলে ধারণা দেন তিনি।
নগরীর দামপাড়া, স্টেশন রোড, সিনেমা প্যালেস ও একে খান এলাকায় বিভিন্ন দূরপাল্লার
বাসেও ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভিড় দেখা গেছে। তবে কোথাও কোন সমস্যার কথা জানা যায়নি।
নগরীর দামপাড়া এলাকার সৌদিয়া কাউন্টারের ইনচার্জ জুয়েল দাশ বলেন, “বিভিন্ন
দূরপাল্লার পথে আমাদের পর্যাপ্ত বাস রয়েছে। যাত্রীদের চাহিদার বিপরীতে আমরা টিকিটও
দিচ্ছি। মহাসড়কে এখনো তেমন বড় কোন সমস্যা নেই।”
তবে খুলনা, সাতক্ষীরা, বেনাপোল, বরিশালসহ বিভিন্ন রুটের বাসের সময়ের সমস্যা
হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “ওইসব রুটে ফেরি পারাপারের ওপর সময় নির্ভর করে। সেসব
রুটে কিছুটা দেরি হচ্ছে।”
ঈদ উপলক্ষে বাড়তি নয়, আগের মতোই ভাড়া নেয়া হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।
সোহাগ পরিবহনের দামপাড়ার ম্যানেজার আবদুল্লাহ বলেন, যাত্রীর চাপ খুব বেশি নেই।
তবে এদিনের (বৃহস্পতিবার) বেশিরভাগ টিকিটই বিক্রি হয়ে গেছে।
সিটি গেইট এলাকার শ্যামলী কাউন্টারের কর্মী ইলিয়াছ বলেন, “আমরা বাড়তি কোনো
ভাড়া নিচ্ছি না। আগাম টিকেট নিয়ে যাত্রীরা বাসে উঠছেন। তবে আসন খালি থাকলে যাত্রী নিচ্ছি।”
দূরপাল্লার মানুষের ঈদযাত্রা শুরু হলেও চট্টগ্রামের অভ্যন্তরীণ রুটের বাসযাত্রায়
ভিড় ছিল তুলনামূলক কম। চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট, শাহ আমানত সেতু, বাস টার্মিনাল এলাকাতে
মানুষের ভিড় ছিল। তবে অনেকেই পরিবারের সদস্যদেও অনেককেই বাড়ি পাঠানোর জন্য এলেও নিজে
যাচ্ছেন না। শনি ও রোববারে অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রীদের ভিড় বাড়বে।