বুধবার
বিকালে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের বিরোধিতা এবং মারামারির পর ব্যালট রাখার কক্ষে
অবস্থান নেন সমিতির বিদায়ী সহসভাপতি মো. অজি উল্লাহর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সমর্থক
আইনজীবীরা।
নিজেকে
নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটির নতুন আহ্বায়ক হিসেবে পরিচয় দিয়ে রাত ১০টায় ভোট
পুনর্গণনার ফল ঘোষণা করেন অজি উল্লাহ।
তিনি
জানান, আবদুর নুর দুলাল ২ হাজার ৮৯১ ভোট পেয়েছেন, অন্যদিকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী
রুহুল কুদ্দুস কাজল ২ হাজার ৮৪৬ ভোট পেয়েছেন। অর্থাৎ, দুলাল তার প্রতিদ্বন্দ্বী
কাজলের চেয়ে ৪৫ ভোট বেশি পেয়েছেন।
ফল
ঘোষণার পরই সমিতিতে সম্পাদকের কক্ষে চেয়ারে বসেন দুলাল। এ সময় আওয়ামী লীগ সমর্থক
আইনজীবীরা তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
একই
সাথে এই কক্ষে সম্পাদকের নামফলক পাল্টে রুহুল কুদ্দুস কাজলের বদলে আবদুন নূর
দুলালের নাম সাঁটানো হয়।
আবদুর নূর দুলাল।
রুহুল কুদ্দুস কাজল।
বিএনপি
সমর্থক আইনজীবীরা এই ভোট পুনর্গণনার বিরোধিতা করে আসছিলেন। বিকালে সমিতির সম্মেলন
কক্ষে ঢুকতে তারা অজি উল্লাহদের বাধা দিয়ে মারামারিও বাধে।
সমিতির
বিদায়ী সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন, অজি উল্লাহ
নির্বাচন পরিচালনায় উপ-কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে যে দাবি করছেন, তা বৈধ নয়।
সুপ্রিম
কোর্ট আইনজীবী সমিতির এবারের নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হয়েছিল গত ১৫ ও ১৫ মার্চ। সাত
সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির আহ্বায়ক ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ ওয়াই
মশিউজ্জামান।
১৭
মার্চ ভোট গণনা শেষে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সাদা প্যানেল
থেকে সভাপতি পদে মোমতাজউদ্দিন ফকিরসহ ছয়টি পদে জয়ী হয়েছে।
আর
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্যপরিষদের নীল প্যানেল থেকে সম্পাদক পদে রুহুল কুদ্দুস
কাজলসহ আটজন জয়ী হয়েছে।
মোমতাজ
ছাড়াও দুই সহ-সভাপতি পদে মো. শহীদুল ইসলাম ও মোহাম্মদ হোসেন এবং সদস্য পদে ফাতেমা
বেগম, শাহাদাত হোসাইন (রাজিব) ও সুব্রত কুমার কুণ্ডু ভোটে জয়ী হন।
আর
সম্পাদক কাজল ছাড়াও বিএনপি সমর্থক প্যানেল থেকে জয়ী দেখা যায় কোষাধ্যক্ষ পদে
মোহাম্মদ কামাল হোসেন, দুই যুগ্ম সম্পাদক পদে মাহফুজ বিন ইউসুফ ও মোহাম্মদ
মাহবুবুর রহমান খান এবং সদস্য পদে কামরুল ইসলাম, মাহদীন চৌধুরী, মো. গোলাম আক্তার
জাকির ও মো. মঞ্জুরুল আলম সুজনকে।
এখন
কাজলের পরিবর্তে দুলালকে বিজয়ী ঘোষণা করায় দুই প্যানেল থেকে বিজয়ী সাত জন করে
হবেন।
তবে
তখন আওয়ামী সমর্থক আইনজীবী প্যানেল পক্ষের সম্পাদক প্রার্থী ভোট পুনর্গণনার দাবি
করে লিখিত আবেদন জানালে ফল ঘোষণা আটকে যায়।
এরপর
ফল ঘোষণা না করে মশিউজ্জামান সমিতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন বলে খবর আসে।
মোমতাজউদ্দিন ফকির।
বদরুদ্দোজা বাদল।
এরপর
এক মাসের বেশি সময় ধরে এটি ঝুলে থাকার মধ্যে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করেন সমিতির
বিদায়ী কমিটির সভাপতি অজি উল্লাহ।
তিনি
দাবি করেন, গত ১২ এপ্রিল সমিতির কার্যকরি কমিটির মেয়াদের শেষ এক সভায় তাকে আহ্বায়ক
করে সাত সদস্যের একটি নির্বাচন উপকমিটি করা হয়েছে।
সংবাদ
সম্মেলনে অজি উল্লাহ বুধবার সমিতিতে গিয়ে সম্মেলন কক্ষে থাকা ব্যালট পেপার
পুনর্গণনা করার ঘোষণা দেন।
এর
প্রতিক্রিয়ায় বিদায়ী সম্পাদক ও এবারেও প্রার্থী কাজল বুধবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন
করেন, অজি উল্লাহ নির্বাচন পরিচালনায় উকমিটির আহ্বায়ক হিসেবে যে দাবি করছেন তা
সঠিক নয়। গত ১২ এপ্রিল সমিতির কোনো সভাও অনুষ্ঠিত হয়নি।
এরপর
বিকালে অজি উল্লাহর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা সমিতিতে ঢুকতে গেলে সেখানে
বিএনপি সমর্থকরা বাধা দিলে দুই পক্ষের হাতাহাতি হয়, কিল-ঘুষিও চলে। খবর পেয়ে
পুলিশও যায় সেখানে।
এরপর
অজি উল্লাহরা ঢুকে পড়ে ভোট পুনর্গণনা শুরু করলে বিএনপি সমর্থকরা বাইরে অবস্থান
নেয়। তারা কক্ষের কাচও ভাংচুর করে।
সুপ্রিম কোর্ট বারের ভোটের ফল ঘোষণা নিয়ে হাতাহাতি, কিল-ঘুষি
বিকালে দুই পক্ষের আইনজীবীরা মুখোমুখি হলে হাতাহাতি ও কিল-ঘুষিও চলে।
রাতে
অজি উল্লাহরা ফল ঘোষণার পর তবে তার নেতৃত্বে নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটি গঠন ও ফল
ঘোষণাকে অবৈধ বলে দাবি করেন রুহুল কুদ্দুস কাজল।
তিনি
সাংবাদিকদের বলেন, “ফলাফল
সম্পূর্ণ অবৈধ। নতুন যে নির্বাচন উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে, তাদের এ কমিটি গঠন করার কোনো
ক্ষমতা নাই। কারণ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বিগত কার্যকরী কমিটিতে ১৩ জন সদস্য।
সাতজন মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্বাচন উপকমিটি গঠন করা যায় না।”
মশিউজ্জামানের
নেতৃত্বাধীন উপকমিটি সর্বসম্মতিক্রমে গঠিত হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “কিন্তু অবৈধভাবে উপকমিটি
করে তালা ভেঙে ব্যালট পেপার ছিনতাই করে এবং সম্পাদকের কক্ষ দখল করে আওয়ামী লীগের মনগড়া
ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। এ ফলাফল আমি প্রত্যাখ্যান করছি।”
অন্যদিকে
আবদুন নূর দুলাল তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “সত্যের জয় হয়েছে। এর বেশি আর কিছু বলব না।”
সমিতির
২০২২-২৩ মেয়াদের এ নির্বাচনের ভোটার ছিল মোট ৮ হাজার ৬২৩ জন। এর মধ্যে গত মাসে দুই
দিনে ভোট দেয় ৫ হাজার ৯৮৩ জন।