উত্তর কোরিয়ার নাগরিকদের সেন্সরবিহীন তথ্যে প্রবেশাধিকার দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যুক্তরাষ্ট্রের ‘লুমেন’। অলাভজনক সংস্থাটি সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, “হ্যাকিংয়ের ব্যপ্তি এখনও ছোট হলেও, উত্তর কোরিয়ার আইনে সাম্প্রতিক পরিবর্তনগুলো থেকে ইঙ্গিত মেলে কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে বড় সমস্যা হিসেবেই দেখছে।”
আর ফোন হ্যাকিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান আসছে কাজের স্বার্থের চীনে যাওয়া আইটি কর্মীদের কাছ থেকে। রয়টার্স জানিয়েছে, সফটওয়্যার আউটসোর্সিং খাতে কাজ করতে চীনে যান বেশিরভাগ উত্তরে কোরিয়ান আইটি কর্মী।
স্মার্টফোনের জনপ্রিয়তা বেড়েছে উত্তরে কোরিয়ায়। তবে, বৈশ্বিক ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থায় প্রবেশাধিকার আছে খুব স্বল্প সংখ্যক মানুষের। দেশটির ডিভাইসগুলোতে সরকারি অ্যাপ রাখা বাধ্যতামূলক। নিজস্ব অ্যাপ ছাড়াও নানাভাবে সাধারণ নাগরিকদের ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর নজর রাখে উত্তর কোরিয়ার সরকার।
জার্মানভিত্তিক আইটি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ‘ইআরএনইউ’-এর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে উত্তর কোরিয়ার স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেট পরীক্ষা করে দেখেছে লুমেন। এ ছাড়াও দেশটি থেকে পালিয়ে আসা দুজনের সঙ্গে কথা বলেছে সংস্থাটি। দেশত্যাগের আগে তারা ফোন হ্যাকিংয়ে সক্ষম বলে দাবি করেছেন।
রয়টার্স জানিয়েছে, ইন্টারনেট থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় উত্তর কোরিয়ার নাগরিকদের হাতে সরকারি তথ্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় কার্যকর হামলা চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান বা আনুসাঙ্গিক উপাদান নেই– এমন ধারণা কে ভুল প্রমাণ করেছে লুমেনের গবেষণা।
স্মার্টফোনের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে পাশ কাটানোই দেশত্যাগী নাগরিকদের হ্যাকিংয়ের উদ্দেশ্য ছিল বলে উঠে এসেছে রয়টার্সের প্রতিবেদনে। ফোন হ্যাক করে অন্যথায় অনুমোদনহীন অ্যাপ, ফটো ফিল্টার এবং মিডিয়া ফাইল ইনস্টল করেছেন তারা।
লুমেনের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, সাধারণ ব্যবহারকারীদের স্মার্টফোনে ‘ট্রেস ভিউয়ার’ নামের একটি অ্যাপ ইনস্টল বাধ্যতামূলক করে রেখেছে উত্তর কোরিয়ার সরকার। অ্যাপটি যে কোনো সময়ে ইচ্ছামতো ব্যবহারকারীর স্মার্টফোন কর্মকাণ্ডের স্ক্রিনশট তুলে রাখে। ওই স্ক্রিনশটগুলো পরবর্তীতে দেখার বা মুছে দেওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না ব্যবহারকারীর।
তাই, ফোন হ্যাক করে ‘ট্রেস ভিউয়ার’-এ প্রবেশ করে স্ক্রিনশট মুছে দেওয়া হলে পুরনো ফোনের দামও বেড়ে যায়। নাগরিকরা ফোনে কোনো ‘বেআইনি’ কর্মকাণ্ড করছেন কি না, ‘ট্রেস ভিউয়ার’-এর মাধ্যমে সেদিকেই নজর রাখে উত্তর কোরিয়ার সরকার।
লুমেন জানিয়েছে, দেশত্যাগীদের ব্যবহৃত হ্যাকিং কৌশলগুলো মোকাবেলা করতে ফোনের ইউএসবি ইন্টারফেইসকে অকার্যকর করে দিতেন উত্তর কোরিয়ার সরকারি প্রকৌশলীরা।
এ ছাড়াও দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর সম্প্রতি ওয়াই-ফাই সংযোগ ব্যবস্থা চালু হয়েছে দেশটিতে। রয়টার্স জানিয়েছে, সিমকার্ড, পাসওয়ার্ড এবং অন্যান্য ডিভাইসের মাধ্যমে দেশটির সরকার নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে যেন ওয়াই-ফাই সংযোগ কেবল অনুমোদিত কাজেই ব্যবহার যায়।