আসরের শেষ দিন বৃহস্পতিবার গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সকে ৭৮
রানে হারিয়েছে প্রাইম ব্যাংক।
বিকেএসপির ৩ নম্বর মাঠে ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে প্রাইম
ব্যাংক তোলে ৩৫৫ রান। এবারের লিগে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ এটি। সর্বোচ্চ প্রাইম
ব্যাংকেরই ৩৮৮, গত ২৭ মার্চ শাইনপুকুরের বিপক্ষে। সেদিন ১৪২ বলে ১৮৪ রানের ইনিংস খেলেছিলেন
এনামুল।
স্বপ্নের মতো কাটানো লিগের শেষটাও তিনি রাঙালেন দারুণ
ইনিংসে। ৮৫ বলে ৮ চার ও ৩ ছক্কায় করেন ৯৬ রান। তামিম করেন ১৩৭ রান। ১৩২ বলে ১৩ চার
ও ৬ ছক্কায় গড়া বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়কের ইনিংসটি।
বড় রান তাড়ায় শুরুর বিপর্যয় সামলে আল আমিন ৮৭ ও মেহরব
হাসান ৭১ রানের দারুণ ইনিংস খেলেন বটে, তবে গাজী গ্রুপের বাকি ব্যাটসম্যানদের কেউ পারেননি
দাঁড়াতে। ১৩ বল বাকি থাকতে গুটিয়ে যায় তারা ২৭৭ রানে।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রাইম ব্যাংকের দুই ওপেনারের
শুরুটা ছিল দুইরকম। প্রথম ওভারে বাউন্ডারি দিয়ে শুরুর পর ডানা মেলে দেন এনামুল। তামিম
নিজেকে রাখেন গুটিয়ে।
মাহমুদুল হাসানকে ছক্কায় উড়িয়ে এনামুল ফিফটি পূর্ণ করেন
৩৮ বলে। মন্থর ব্যাটিংয়ে পঞ্চাশ ছুঁতে তামিমের লাগে ৮৪ বল। ফিফটির পর থেকে অবশ্য দারুণ
গতিতে ছুটতে থাকেন তিনি। ফিফটির পরপরই ছক্কা মারেন হুসনা হাবিবকে। রকিবুল আতিকের টানা
তিন বলে মারেন দুটি চার ও একটি ছক্কা। পরের পঞ্চাশ করতে তার লাগে কেবল ৩৮ বল।
লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ২১তম সেঞ্চুরির পর আরও বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন তামিম। আল আমিনের অফ
স্পিনে টানা চার বলে মারেন তিনটি চার ও একটি ছক্কা। আরেক অফ স্পিনার আরাফাত সানি জুনিয়রকে
ওড়ান টানা দুটি ছক্কায়। পরের বলে আরেকটি ছক্কার চেষ্টায় ধরা পড়েন সীমানায়।
আগের ম্যাচে ২৩৪ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে দলকে ১০ উইকেটের
জয় এনে দিয়েছিলেন তামিম ও এনামুল। এবার তাদের জুটি ২১৫ রানের।
এনামুলেরও টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি মনে হচ্ছিল সময়ের ব্যাপার।
কিন্তু রকিবুল আতিকের বলে পা বাড়িয়ে
খেলতে গিয়ে ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে বোল্ড হয়ে যান তিনি। মাঝে মুমিনুল হক রান আউটে বিদায়
নেন ১৪ বলে ২০ রান করে।
আগের ম্যাচে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে লিস্ট ‘এ’ মর্যাদা পাওয়ার পর প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে এক আসরে হাজার রানের মাইলফলক
ছোঁয়া এনামুল আসর শেষ করলেন ১৫ ইনিংসে ৩ সেঞ্চুরি ও ৯ ফিফটিতে ১ হাজার ১৩৮ রান করে।
এনামুলের বিদায়ের পর তেমন কিছু করতে পারেননি নাসির হোসেন
(২০), ইয়াসির আলি (১৩)। মিঠুন ২টি করে চার-ছক্কায় ২৬ বলে করেন ৩৯ রান। শেষ দিকে করিম
জানাতের ১০ বলে ২০ রানের সৌজন্যে সাড়ে তিনশ ছাড়ায় সংগ্রহ।
রান তাড়ায় দ্বিতীয় ওভারেই আরাফাত সানি জুনিয়রকে হারায়
গাজী গ্রুপ। রুবেল হোসেনের বলে এলবিডব্লিউ হন তিনি। ডানহাতি এই পেসার পরে বিদায় করেন
আরেক ওপেনার মেহেদি মারুফকেও। রকিবুল হাসানের বাঁহাতি স্পিনে মাহমুদুল হাসান বোল্ড
হলে গাজী গ্রুপের স্কোর দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ৬৮।
সেখান থেকে শতরানের জুটিতে দলকে এগিয়ে নেন আল আমিন ও মেহরব।
আল আমিন ফিফটি করেন ৬৪ বলে, মেহরবের লাগে ৭২ বল।
দুই জনই অবশ্য বিদায় নেন করিম জানাতের পরপর দুই ওভারে।
৯১ বলে ১৪ চারে ৮৭ রান করে আল আমিন এলবিডব্লিউ হলে ভাঙে ১৪৭ রানের জুটি। বোল্ড হওয়া
মেহরবের ৮৫ বলে ৭১ রানের ইনিংসটি গড়া ২ চারে।
এরপর নিয়মিত উইকেট হারায় গাজী গ্রুপ। অধিনায়ক আকবর আলী
১৪ বলে করেন ১৯ রান।
৫০ রানে ৩ উইকেট নিয়ে প্রাইম ব্যাংকের সফলতম বোলার তাইজুল
ইসলাম। রুবেলও নেন ৩ উইকেট, ৬৭ রান দিয়ে। করিম জানাত ও রকিবুলের প্রাপ্তি ২টি করে।
টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ও সেরা উইকেট শিকারী
দুই জনই প্রাইম ব্যাংকের। ব্যাটিংয়ে এনামুলের ধারাকাছে নেই কেউ। শিরোপা জেতা শেখ
জামালের ভারতীয় অলরাউন্ডার পারভেজ রাসুলের (২৮) চেয়ে একটি উইকেট বেশি নিয়েছেন বাঁহাতি
স্পিনার রকিবুল।
প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব সুপার লিগ শেষ করল ২০ পয়েন্ট
নিয়ে তিন নম্বরে থেকে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
প্রাইম ব্যাংক
ক্রিকেট ক্লাব: ৫০ ওভারে ৩৫৫/৭ (এনামুল ৯৬, তামিম ১৩৭, মুমিনুল
২০, মিঠুন ৩৯, নাসির ২০, ইয়াসির ১২, করিম ২০, শাহাদাত ৮*; জয়নুল ৪-০-২৭-০, মাহমুদুল
১০-১-৩৮-০, আতিক ১০-০-৭১-০, মাহবুব ৭-০-৫৪-৩, হাবিব ১০-১-৮৩-২, আরাফাত সানি জুনিয়র
৮-০-৬২-১, আল আমিন ১-০-২০-০)
গাজী গ্রুপ
ক্রিকেটার্স: ৪৭.৫ ওভারে ২৭৭ (মারুফ ২৭, আরাফাত সানি জুনিয়র ০,
মাহমুদুল ২৪, আল আমিন ৮৭, মেহরব ৭১, আকবর ১৯, জুবারুল ১৫, মাহবুব ৭*, হাবিব ৭, আতিক
৪, জয়নুল ০; করিম ৮-০-৪৮-২, রুবেল ৯-০-৬৭-৩, রকিবুল ৯.৩-১-৪২-২, নাসির ১০-১-৪৪-০, ইয়াসির
০.৩-০-৫-০, তাইজুল ৯.৫-০-৫০-৩, এনামুল ১-০-১৪-০)
ফল:
প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব ৭৮ রানে জয়ী
ম্যান অব দা
ম্যাচ: তামিম ইকবাল