সোহানের স্বপ্নে নতুন রঙ চড়েছে এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের পারফরম্যান্সে। টেস্ট দলের হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে থাকায় খেলতে পারেননি সাতটি ম্যাচে। বাকি আট ম্যাচের পাঁচটিতেই খেলেন পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস। ৯৬.৬০ গড় ও ৮৬.৫৫ স্ট্রাইক রেটে করেন ৪৮১ রান। ম্যাচ জেতানো অসাধারণ এক সেঞ্চুরির সঙ্গে তার ফিফটি চারটি।
শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের শিরোপা জয়ে তার অবদান দারুণ। বিশেষ করে সুপার লিগে তিনিই ছিলেন দলের ত্রাতা। কয়েকটি ম্যাচে বিপর্যয়ে দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে দলকে নিয়ে গেছেন জয়ের বন্দরে।
তার ব্যাটিং এবার নজর কেড়েছে অনেকের। মুগ্ধ হওয়াদের মধ্যে আছেন মাশরাফি বিন মুর্তজাও। লিগ শেষে সংবাদমাধ্যমে মুখোমুখি হয়ে দেশের সফলতম অধিনায়ক বলেন, সোহানের পারফরম্যান্সকে মূল্যায়ন করা উচিত।
সুযোগের অপেক্ষায় আছেন সোহান নিজেও। গত বছর যদিও টি-টোয়েন্টিতে অনেক সুযোগ পেয়ে কাজে লাগাতে পারেননি। তবে অন্য দুই সংস্করণে সীমিত সুযোগেও ঝলক দেখিয়েছেন কিছুটা। এবার ঢাকা লিগে অসাধারণ ব্যাটিংয়ের পর ২৮ বছর বয়সী কিপার-ব্যাটসম্যানে স্বপ্ন, দলকে নিয়ে যাবেন নতুন উচ্চতায়।
“অনেক বড় আশা, বাংলাদেশ দলকে অনেক বড় জায়গায় দেখতে চাই। সিনিয়র যারা ছিলেন, তারা একটা জায়গায় বাংলাদেশ দলকে নিয়ে গেছেন। আমাদের লক্ষ্য থাকবে, আমরা যেন পরের ধাপে নিয়ে যেতে পারি। অবশ্যই বাংলাদেশের হয়ে অনেক বড় কিছু করার আশা।”
সেই লক্ষ্যে নিজেকে নতুন করে গড়ে তুলছেন সোহান। কিপিং নিয়ে কাজের পাশাপাশি ব্যাটিংয়েও দিচ্ছেন বাড়তি সময়। লিগ শেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি বললেন, ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরম্যান্সেই বড় স্বপ্ন দেখার সাহস তিনি পাচ্ছেন।
“গত দুই বছর ধরে অনেক বেশি পরিশ্রম করছি। যেহেতু মিডল অর্ডারে ব্যাটিং করি, সব সময়ই লক্ষ্য থাকে যেন শেষ করে আসতে পারি। দুই বছর ধরে ঘরোয়া লিগে যেভাবে খেলছি, অবশ্যই আশা থাকবে। হয়তো কম্বিনেশনের জন্য জাতীয় দলে অনেক সময় সুযোগ আসে না। তবে যদি সুযোগ আসে, তাহলে দলের জয়ে যেন অবদান রাখতে পারি, এভাবে খেলতে পারি, এটাই আশা থাকবে।”
উন্নতির ছাপ স্পষ্ট এবারের প্রিমিয়ার লিগে সোহানের ব্যাটিংয়ে। ক্রিজে গিয়ে তাড়াহুড়া করেননি। প্রবল চাপের মধ্যেও সময় নিয়েছেন। উইকেট বুঝে ইনিংস গড়েছেন, জুটি গড়ার চেষ্টা করেছেন। বাজে বল পেলেই কেবল বাউন্ডারি মেরেছেন।
আগে উইকেটে গিয়েই যাকে দেখা যেত ছটফট করতে, উদ্ভাবনী শট খেলে উইকেট বিলিয়ে আসতে, সেই সোহানের পরিবর্তন কীভাবে এলো, শোনালেন তিনি।
“গত দুই বছর ধরে বাবুল স্যারের (মিজানুর রহমান, বিসিবির কোচ) সঙ্গে ব্যাটিং টেকনিক নিয়ে কাজ করেছি। আমার মনে হয়, ব্যাটিং টেকনিকের পাশাপাশি মেন্টাল ফিটনেসটাও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এটা নিয়ে আমি কয়েকটা ক্লাসও করেছি। আমার মনে হয়, এটা সত্যিই কাজে লেগেছে। আমরা সবাই জানি, ক্রিকেটে স্কিলের সঙ্গে মেন্টালিও অনেক কিছু রিলেটেড থাকে। এমন কিছু কিছু জিনিস আমার কাজে এসেছে।”
“আধুনিক ক্রিকেটে পরিবর্তনটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সব সময় নিজের পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছি। আরও যে দুর্বলতা আছে, সেগুলো নিয়েও কাজ করব। এখন স্কিলের চেয়ে মানসিকভাবে দৃঢ় থাকা এবং মানসিকভাবে ফিট থাকা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গত পাঁচ-ছয় মাস ধরে আমি এটা নিয়ে কাজ করছি। আমি ঠিক করেছি, যত দিন ক্রিকেট খেলব, একটা রুটিন অনুযায়ী নিয়মিত আমার এটা নিয়ে কাজ করা উচিত এবং এটা করে যাব।”