এবারের ঢাকা লিগে
এনামুল শুধু দেশের সবাইকেই ছাড়িয়ে যাননি, গড়ে ফেলেছেন বিশ্বরেকর্ডও। ১৫ ম্যাচে ৩ সেঞ্চুরি
ও ৯ ফিফটিতে তার রান ১ হাজার ১৩৮। গড় ৮১.২৮, স্ট্রাইক রেট ৯৮.৬১। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ
লিস্ট ‘এ’ মর্যাদা পাওয়ার পর এক আসরে ৮১৪ রানের বেশি আগে কখনোই করতে পারেননি কেউ। লিস্ট
‘এ’ ক্রিকেটে এক টুর্নামেন্টে হাজার রানের কীর্তি বিশ্ব ক্রিকেটেই নেই আর।
জাতীয় দলে এনামুল
যখন সবশেষ টানা সুযোগ পান, অধিনায়ক ছিলেন মাশরাফিই। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে দেশের মাঠে
ত্রিদেশীয় সিরিজে টানা চার ম্যাচ খেলানো হয় এনামুলকে। সুযোগটি তিনি কাজে লাগাতে পারেননি।
ওই বছরের জুনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে তিন ম্যাচ সিরিজের সবকটিতে তাকে রাখা হয় একাদশে।
এবারও তিনি ব্যর্থ।
পরে ২০১৯ বিশ্বকাপের
পরপর শ্রীলঙ্কা সফরে মাশরাফি না থাকলেও একটি ম্যাচে এনামুলকে আবার সুযোগ দেওয়া হয়।
সেবারও লুফে নিতে পারেননি তিনি। এরপর আর মেলেনি সুযোগ।
এমন পারফর্ম করা
একজনকে জাতীয় দলে ফেরানোর প্রসঙ্গ বারবার উঠে আসাই স্বাভাবিক। লিগের শেষ দিনে মিরপুরে
গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে এই কথাই বললেন মাশরাফি।
“জাতীয় দলকে লক্ষ্য
করলে লিগ থেকে একজন কিংবা দুইজনের নাম সামনে আনা যায়। সেটি যদি করেন, বিজয় (এনামুল)…।
আমি আগের দিনও বলেছি, আজও বলছি, বিজয় অসাধারণ ব্যাটিং করেছে। ডমিনেট করে ব্যাটিং
করছে।”
“বিজয়কে আমি মনে
করি, বিবেচনা করার এখনই সময়। একজন মানুষ যদি ১১০০ রান করে সুযোগ না পায়, তাহলে তার
আর নিজেকে প্রমাণের জায়গা থাকে না। এই পুরস্কারগুলো ওদের পাওয়া উচিত।”
একই প্রসঙ্গে মাশরাফি
বললেন নুরুল হাসান সোহানের কথাও। এবারের লিগ অসাধারণ কেটেছে এই কিপার-ব্যাটসম্যানেরও।
শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবের শিরোপা জয়ের ম্যাচ পর্যন্ত লিগে ৭ ম্যাচ খেলে তার রান
ছিল ১১৭ গড়ে ৪৬৮! দলের বিপর্যয়ে অসাধারণ কয়েকটি ম্যাচ জেতানো ইনিংস তিনি উপহার দিয়েছেন।
মাশরাফির মতে, এনামুল-সোহানদের
জাতীয় দলে আনার পথ খোঁজা দরকার এখনই।
“ক্রিকেটে একটা বড়
ব্যাপার বয়স। সোহান, বিজয় এরা এখন যে বয়সে আছে, ২৮ থেকে ৩২ বছর বয়সে একটা পর্যায়
থাকে ক্রিকেটারদের পারফরম করার। এখন কিন্তু ওরা ওই বয়সে রয়েছে। এখানে শুধু অভিজ্ঞতা
আছে, সিনিয়র খেলোয়াড়- এসব চিন্তা না করে, কোনো না কোনোভাবে এদের যদি কিছু ম্যাচে
সুযোগ দেওয়া যায়, আমার মনে হয় এরা ভালো করবে। কারণ, এই বয়সের পর ওই স্পিরিট আর ওদের
থাকবে না।”
বাস্তবতা ও প্রক্রিয়া
ভালো করেই জানা আছে মাশরাফির। সম্ভাবনাময়দের কেউ কেউ জায়গা পাবে হাই পারফরম্যান্স
ইউনিটে, কেউ হয়তো ‘এ’ দলে। জাতীয় দলের বাইরে থাকাদের বাংলাদেশ টাইগার্সেও রাখা হতে
পারে। তবে এনামুলকে তিনি এখনই একটা সংস্করণে জাতীয় দলে দেখতে চান।
“একজন হয়তো ৬০০
বা ৭০০ রান করেছে, তার আশেপাশে ৪৫০, ৫০০ করে কেউ আছে। আরেকটা আছে হাজারের উপর রান করা…
এটা তো অনেক বড় পার্থক্য। এই পার্থক্যের মূল্যায়ন করা উচিত।”
“টি-টোয়েন্টি এমন
একটা সংস্করণ যেখানে, বিজয়কে এখনই সেট করার সুযোগ আছে। এটা আমার মতামত, এমন না যে,
অন্য কাউকে এটা মেনে নিতে হবে। একেক সংস্করণে যে দুজনই ওপেনার থাকে তা না, তৃতীয় ওপেনারও
কিন্তু দলে থাকে। ওখানে যদি সেরা পারফরমারকে রাখা হয়… চোট, অসুস্থতা বা ফর্মহীনতার
জন্য একজন না খেললে, সেরা ছন্দে থাকা খেলোয়াড়কে আমরা পেতে পারি।”
টি-টোয়েন্টিতে এনামুল
সবশেষ বাংলাদেশ দলে খেলেছেন সেই ২০১৫ সালে, টেস্টে ২০১৪ সালে।
সোহান টেস্ট স্কোয়াডে
এখন থাকেন নিয়মিতই। গত বছর খেলেছেন ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি। তবে একাদশে নিয়মিত সুযোগ
হয় না তারও। ওয়ানডে খেলতে পেরেছেন ক্যারিয়ারে মোটে তিনটি। ২০১৬ সালে নিউ জিল্যান্ড
সফরে দুটি ম্যাচ খেলে করেছিলেন ২৪ ও ৪৪, গত বছর জিম্বাবুয়ে সফরে একটি ম্যাচে সুযোগ
পেয়ে ৩৯ বলে অপরাজিত ৪৫। ব্যাটিং গড় তার ৫৬.৫০, স্ট্রাইক রেট প্রায় ১০৪।
গত বছর টি-টোয়েন্টিতে
অবশ্য জাতীয় দলে পর্যাপ্ত সুযোগ তাকে দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হয় ব্যাট হাতে ভালো
করতে। এবার ৫০ ওভারের সংস্করণে ঢাকা লিগে তার পারফরম্যান্স বিবেচনায় নেওয়া উচিত বলে
মত তার।
“এনামুল ও সোহান,
দুজনই ছিল অসাধারণ। সোহান হয়তো এক হাজার রান করেনি, কিন্তু চাপের সময়ে যে রানগুলো
করেছে, ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্স করেছে, এগুলো বিবেচনা করা উচিত। আমি আবারও বলব
যে, বয়স। এখন ওদের পারফরম করার বয়স, এখন ওদের সুযোগ দেওয়া উচিত।”
নিজেকে নিয়ে এমন
কোনো দাবি নেই মাশরাফির। নিজের ও দলের পারফরম্যান্স নিয়ে স্বস্তি আছে। লেজেন্ডস
অব রূপগঞ্জকে রানার্স আপ হওয়ায় নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। লিগের দুই ম্যাচ বাকি থাকা পর্যন্তও
দল ছিল শিরোপা লড়াইয়ে। মাঝারি মানের দল নিয়ে এতদূর আসতে পারাটাই তার সন্তুষ্টির জায়গা।
“আমার কাছে মূল চ্যালেঞ্জ
ছিল দল নিয়ে। আমার কাছে দলকে ভালো অবস্থানে নিয়ে যাওয়াই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
আমাদের থেকেও ভালো ভালো দল ছিল। যাদের থেকে আমরা একটু ওপরে আসতে পেরেছি।”
তার নিজের বোলিং
পারফরম্যান্সও যথেষ্ট নজর কাড়ার মতোই। চোটের কারণে টুর্নামেন্টে তার খেলা নিয়েই জেগেছিল
শঙ্কা। তবে ভারতে চিকিৎসক দেখিয়ে আসার পর ঠিকই নেমে যান মাঠে। ১৪ ম্যাচে ২৯.৭৫ গড়ে নেন ২০ উইকেট। সেরা ৩৮ রানে
৪ উইকেট।
তার চোখে নিজের
সেরা পারফরম্যান্স প্রাথমিক পর্বে আবাহনীর বিপক্ষে ৬৩ রানে নেওয়া ৩ উইকেট। তৌহিদ হৃদয়েকে
ফিরয়ে শতরানের জুটি ভাঙার পর সেদিন বিদায় করেন থিতু হয়ে যাওয়া মোসাদ্দেক হোসেনকে।
পরে নেন জাকের আলির উইকেট।
“খেলোয়াড় হিসেবে
পারফরম করলে অন্যরকম একটু শান্তি তো লাগে। অন্যরকম ভালো লাগা থাকে, সেটা অবশ্যই
লাগছে। হয়তো বা আরেকটু ভালো করতে পারতাম যদি ফিট থাকতাম। যেটা হয়েছে, সেটাও ভালো
হয়েছে।”
“আবাহনীর বিপক্ষে
ওই ম্যাচটায় ভালো বোলিং করেছি। মাঝ পর্যায়ে এসে ওরা ওদের জুটি হচ্ছিল, তখন ৩ উইকেট
পেলাম। ম্যাচটা জিতলাম। ওইটা আমার কাছে বেশি ভালো লেগেছে।”
বোলিং পারফরম্যান্স
খারাপ নয়, সঙ্গে প্রেরণাদায়ী নেতৃত্ব তো ছিলই। তবে বয়স তো কম হলো না, পেরিয়ে গেছে ৩৮।
একটা সময় তো থামতেও হয়। মাশরাফি যদিও এখনই শেষ বলতে চান না। তাকিয়ে থাকবেন তিনি সামনের
ঘরোয়া আসরে।
“আমার সময় খারাপ
যায় না, ট্রেনিং করতে পারি আমি। ট্রেনিং করি। আমার তো অন্য কাজও আছে, এর পাশাপাশি
ট্রেনিং করব। যদি কোনো সুযোগ আসে ক্রিকেট খেলার, আমি খেলব। সেটা মিলতে হবে, আমি
যে ফরম্যাটে খেলি সেটার মধ্যে আসতে হবে। সেটা আসার আগ পর্যন্ত তো বলা যাচ্ছে না।”