বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের
তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে রায় ঘোষণার কথা থাকলেও আসামিপক্ষের এক আবেদনে
তা আর হয়নি।
বিচারক মো. জসিম
উদ্দিন রায়ের বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য ১৮ মে দিন রেখেছেন বলে জানিয়েছেন এ আদালতের
পিপি প্রবীর কুমার ভট্টাচার্য্য।
তিনি বলেন, মামলার
তিন আসামির একজন মো. হাসানের পক্ষে করা আবেদনে দাবি করা হয়, শিশু আরাফ মামলার বাদী
আবদুল কাইয়ুম ও গৃহিনী ফারহানা ইসলামের ‘সন্তান নয়’। এই যুক্তিতে ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন
করা হয়।
আসামি ফরিদ
আরাফের বাবা আবদুল
কাইয়ুম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরকে বলেন, মামলার রায় ‘বিলম্বিত করতে’ এ আবেদন করা হয়েছে।
“আমার ছেলে নাকি
আমার না! পুরো মামলার শুরু থেকে সব ধাপ পার হয়ে এখন রায় ঘোষণার সময় এটা কেমন আবেদন
আমি বুঝি না। আইনের বিষয়ে আমার তেমন ধারণা নেই। হয়ত রায় ঘোষণা বিলম্বিত করতে তারা এ
আবেদন করেছে।”
কাইয়ুম বলেন, “আমার
একটাই দাবি, আমরা যেন সন্তান হত্যার যথাযথ বিচার পাই।”
আদালতের পিপি প্রবীর
কুমার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আসামি হাসান উচ্চ আদালত থেকে যে জামিনে ছিলেন
তার মেয়াদ শেষ হয়েছে। তাই তার জামিন বাতিলের আবেদন করা হয়েছে।
“আসামি পক্ষের আবেদন
ও আমাদের আবেদনের বিষয়ে শুনানির জন্য ১৮ মে দিন ধার্য করেছেন আদালত।”
এর আগে গত ৩০ মার্চ
এ মামলায় রায় ঘোষণার দিন নির্ধারিত থাকলেও সেদিন বিচারকের ব্যস্ততার কারণে তা পিছিয়ে
নতুন দিন ঠিক করা হয়েছিল ২৮ এপ্রিল।
আসামি হাসান
বৃহস্পতিবার এ মামলার
তিন আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এদের মধ্যে মো. ফরিদ ও নাজমা বেগম কারাগারে আছেন।
আর মো. হাসান জামিনে আছেন।
২০২০ সালের ৬ জুন
বিকেলে নগরীর বাকলিয়া থানার মিয়াখান নগরে একটি ভবনের ছাদে পানির ট্যাংকে ফেলে হত্যা
করা হয় শিশু আরাফকে।
ওই ঘটনায় করা মামলায়
আসামি করা হয় মিয়াখান নগরের বাসিন্দা মো. ফরিদ, শিশু আরাফের পরিবার যে বাড়িতে ভাড়া
থাকত সেই ভবনের দারোয়ান মো. হাসান ও হাসানের মা নাজমা বেগমকে। আদালতে তারা স্বীকারোক্তিমূলক
জবানবন্দি দেন।
ঘটনার দিন বিকালে
মিয়াখান নগরে ভবনের সামনে গাড়ি রাখার জায়গায় খেলছিল শিশু আরাফ। মায়ের কাছে চানাচুর
খাওয়ার পর সে পানি খেতে চেয়েছিল। এ সময় আরাফের মা ফারহানা ইসলাম পানি আনতে ঘরের ভেতরে
যান।
তিনি ফিরে এসে দেখেন
ছেলে নেই। এ ফাঁকে আদর করার ছলে আরাফকে নিয়ে ভবনের ছাদে চলে যান নাজমা বেগম। সেখানে
পানির ট্যাংকে ফেলে আরাফকে হত্যা করা হয়।
হত্যার পর ভবনটির
বাসিন্দা নাজমা বেগম, তার ছেলে বাড়ির দারোয়ান হাসান ও তাদের পাশের ভবনের বাসিন্দা ফরিদকে
গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।
আসামি নাজমা বে গম
তখন নাজমা বেগম
আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে বলেছিলেন, বাড়িওয়ালাকে ফাঁসাতে
প্রতিবেশীর শিশুকে আদর করার ছলে পানির ট্যাংকে ফেলে হত্যা করেন ।
নাজমা জবানবন্দি
বলেছিলেন, ঋণগ্রস্ত হয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় অর্থের লোভ এবং পাশের ভবনের
বাসিন্দা ফরিদের প্রলোভনে বাড়িওয়ালাকে ফাঁসাতে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। ঘটনার সময় নাজমার ছেলে
হাসান (২৩) গেইট খুলে দিয়ে তাকে ছাদে উঠতে সহায়তা করেছিলেন।
১৯ নম্বর দক্ষিণ
বাকলিয়া ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী নুরুল আলম মিয়া ছিলেন আটতলা
ওই ভবনের মালিক। তাকে ‘মামলায় ফাঁসাতে’ ওই ভবনের বাসিন্দা কোনো শিশুকে হত্যা করতে নাজমাকে
২০ হাজার টাকার লোভ দেখান ফরিদ।
ফরিদ বিএনপি সমর্থিত
কাউন্সিলর প্রার্থীর অনুসারী ছিলেন। ঘটনার আগে কাউন্সিলর প্রার্থী ও ভবন মালিক নুরুল
আলম মিয়ার প্রচারে হামলার ঘটনায় ফরিদকে আসামি করা হয়েছিল। এ কারণে তিনি ক্ষুব্ধ ছিলেন।
একটি বেসরকারি ওষুধ
প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী আবদুল কাইয়ুম ও গৃহিনী ফারহানা ইসলাম দম্পতির একমাত্র
সন্তান ছিল আরাফ। ছেলে হারানো মা-বাবার দাবি, তাদের সন্তানের হত্যাকারীদের যেন সর্বোচ্চ
সাজা হয়।
এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে
২০ জনের সাক্ষ্য এবং আসামি পক্ষে ১০ জনের সাফাই সাক্ষ্য হয়েছে। তিন আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক
জবানবন্দি দিয়েছেন।
আরও খবর