শুক্রবারের সকালটা অন্যদিনের মত আর একটা সাধারণ সকাল ছিল না প্রান্তিক এসব আদিবাসী ৫৭টি পরিবারের জন্য। কেননা ভোরে উঠেই স্কুল প্রাঙ্গণে তারা দেখা পেয়েছেন ‘ঈদ উপহারের’।
তবে তারা জানেন না কে বা কারা পাঠিয়েছেন এ উপহার। রাতে বা ভোরের কোনো এক সময় হাটহাজারির প্রত্যন্ত ওই পাড়ার স্কুলের সামনে একটি টেবিলে লুঙ্গি, শাড়ি ও থ্রি পিস রেখে যান অজ্ঞাত সেই উপহারদাতা। কারও আসা যাওয়া টের পায়নি পাড়ার বাসিন্দারা।
মনাই ত্রিপুরা পাড়ার সরদার শচীন ত্রিপুরা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্কুলের সামনের একটা টেবিলে শাড়ি কাপড়, লুঙ্গি এসব কেউ একজন রেখে গেছেন। পরে পাড়ার সবাই যার যার পছন্দ মত কাপড় নিয়ে গেছে।
“ঈদের উপহার পেয়ে আমরা খুব খুশি। যে বা যারাই দিক তাদের জন্য অনেক আশীর্বাদ। আমরা খুব আনন্দিত। কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই।”
ওই পাড়ার বাসিন্দা ৫৭টি পরিবারের স্বামী ও স্ত্রীদের মধ্যে উপহার সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ফরহাদাবাদ ইউনিয়নে অবস্থিত এ পাড়া। চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়ক থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরবর্তী দুর্গম পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করেন এসব আদিবাসীরা।
এখানকার ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর বাসিন্দাদের মূল পেশা কৃষিকাজ ও পাহাড়ে কাঠ কাটা। এতদিন এ পাড়ার সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র সড়কটি ছিল মাটির। এতে বাসিন্দাদের ভয়ানক দুর্ভোগ পোহাতে হত।
২০১৮ সালে হাটহাজারীর ইউএনও মো. রুহুল আমিন উদ্যোগ নিয়ে পাড়াটির উন্নয়ন কাজ শুরু করেন।
নতুন ঘরে উঠল ওরা ছয় ত্রিপুরা পরিবার
জনপ্রশাসন পদক পাচ্ছে হাটহাজারী ইউএনও কার্যালয়
সেসময় পর্যায়ক্রমে মনাই ত্রিপুরা পাড়ার বাসিন্দাদের জীবনমান উন্নয়নে রাস্তা নির্মাণ, সৌর ও পল্লী বিদ্যুতের ব্যবস্থা, বিদ্যালয়, টিউবওয়েল, শৌচাগার স্থাপন, খেলার মাঠ উন্নয়ন, মন্দির নির্মাণ, মন্দিরভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম, পূজায় সরকারি বরাদ্দ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
সরকারের নজরে আসার পর ২০১৯ সাল থেকে এ পাড়ার শিক্ষার্থীদের বড় অংশ ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষাবৃত্তি’ পাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অর্থায়নে ‘বিশেষ এলাকার জন্য উন্নয়ন সহায়তা শীর্ষক কর্মসূচি’র আওতায় সেখানে পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে থাকা বাসিন্দাদের মধ্যে ১২টি পরিবারকে পাকা ঘর নির্মাণও করে দেওয়া হয়।
‘আমার গ্রাম-আমার শহর’ (সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন) প্রকল্পের আওতায় এসব কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়।
শচীন ত্রিপুরা বলেন, “আগের ইউএনও রুহুল আমিন দৃষ্টির আড়াল থেকে আমাদের আলোতে এনেছেন। আগে আমরা যেভাবে ছিলাম এখন অনেক ভালো আছি। উনার কারণেই আমাদের পাড়াকে মানুষ চেনে।”