প্রায় একশ একর জুমের বাগান পুড়িয়ে দেওয়ার ওই ঘটনায় আইনানুগ
প্রতিকারের জন্য শুক্রবার এক যৌথ বিবৃতিতে নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছেন তারা।
পাশাপাশি দায়ীদের গ্রেপ্তার, ক্ষতিগ্রস্তদের নিরাপত্তা ও উপযুক্ত
ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং পাড়াগুলোতে ম্রো জনগোষ্ঠীর মানুষের দখলসত্ব নিশ্চিত করার দাবি
এসেছে বিবৃতিতে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের বরাতে ২৮ জনের ওই যৌথ বিবৃতিতে
বলা হয়, “জানা গেছে, বান্দরবানের লামা উপজেলার লাংকম ম্রো পাড়ায় একটি রাবার কোম্পানি
গত ২৭ এপ্রিল, ২০২২ মঙ্গলবার আদিবাসীদের প্রায় একশ একর জুমের বাগান আগুন দিয়ে পুড়িয়ে
দিয়েছে।
”ধান, আম, কলা, আনারসসহ পুরো বাগান পুড়ে গেছে। স্থানীয় সূত্রে
জানা গেছে, এ ঘটনায় আজ পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি এবং প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।”
এর আগে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড বান্দরবানের লামা
উপজেলার সরই ইউনিয়নে আদিবাসীদের প্রায় তিনশ একর জুম ভূমি দখল করেছে অভিযোগ করে বিবৃতিতে
বলা হয়, “এর প্রতিবাদ করলে বিভিন্ন সময় আদিবাসীদের বিরুদ্ধে এই কোম্পানি মিথ্যা মামলা
করেছে।”
বিবৃতিতে বলা হয়, “ম্রো পাড়ায় জুমের বাগান আগুন দিয়ে পুড়িয়ে
দেওয়ার ঘটনায় প্রশাসনের দৃশ্যমান পদক্ষেপ না থাকার বিষয়টি আমাদের গভীরভাবে হতাশ করেছে;
আমরা উদ্বিগ্ন।
”বাগান পুড়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত আদিবাসী পরিবারগুলোর শিগগিরই
খাদ্য সংকটে পরার আশংকা রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ন্যায়বিচারের লক্ষ্যে কোনো
প্রকার ব্যবস্থা কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে থেকে তাদের আশ্বস্তও করা হয়নি, যা
আমাদের বিক্ষুব্ধ করেছে।”
বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন- ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য,
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, রাশেদা কে চৌধুরী,
সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রামেন্দু মজুমদার, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে
ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী, মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম, উন্নয়নকর্মী খুশী
কবির।
এছাড়া সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ বিরোধী মঞ্চের সদস্য সচিব
নুর মোহাম্মদ তালুকদার, বাংলাদেশ কৃষক সমিতির সভাপতি এসএমএ সবুর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
অধ্যাপক এম. এম. আকাশ ও রোবায়েত ফেরদৌস, গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক
অ্যাডভোকেট জাহিদুল বারী, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ,
আইনজীবী অ্যাডভোকেট পারভেজ হাসেম, অ্যাডভোকেট জীবনানন্দ জয়ন্ত, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের
সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন, জাতীয় শ্রমিক জোটের কার্যকরী সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ বিবৃতিতে
সই করেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের
পরিচালক কামাল উদ্দিন দাবি করেন, ১৬০০ একর জায়গা সরকারের কাছ থেকে লিজ নিয়েছেন তারা।
এর মধ্যে চারশ একর জমি বাগান করার জন্য ‘পরিষ্কার’ করা হচ্ছিল।
”আমরা জঙ্গল পরিষ্কার করছিলাম, পরিষ্কার করতে গিয়ে পোড়াতেও
হয়। যেভাবে বাড়িঘর পোড়ানোর কথা বলা হচ্ছে, সেটা ঠিক নয়। বলা হচ্ছে, আমরা দখল করছি ওদের
জায়গা। কিন্তু দখলের প্রশ্নই আসে না। আমরাতো সরকারের কাছ থেকে লিজ নিয়েছি।”
তার দাবি, লিজের জায়গা থেকেই ২০০ একরের মত জায়গা ম্রো পরিবারগুলোর
জন্য ছেড়ে দিতে রাজি হয়েছেন তারা। কিন্তু সেখানকার পরিবারগুলোর ‘ভিন্নমতের কারণে’ বিষয়টির
সুরাহা হয়নি।
এদিকে আগুন দিয়ে জুম পোড়ানোর ঘটনায় বৃহস্পতিবার আদালতে মামলার
আবেদন করেছেন ভুক্তভোগী একজন ম্রো।
ওই ঘটনায় লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপক আরিফ হোসেনকে
পুলিশ শুক্রবার গ্রেপ্তার করেছে বলে পরিচালক কামাল জানিয়েছেন।
লামা থানার ওসি শহীদুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন,
আরিফ হোসেন ছাড়াও দেলোয়ার হোসেন নামে একজনকে সরই এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
জুম পোড়ানোর ঘটনার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ওইদিন ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে লামা উপজেলার এসিল্যান্ডকে
(সহকারী কমিশনার-ভূমি) ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছিল।
“পরে উনাকে প্রধান করে তদন্ত
কমিটি করা হয়েছে। কমিটি যে রিপোর্ট দেবে সে অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”