বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বললেন, “এবার তো প্রচণ্ড গরমের মধ্যে ঈদ। গরমে বাচ্চার জন্য কোন পোশাকটা আরামদায়ক হবে, সেটাই দেখছি। সুতির জামা খুঁজছি।”
নুসাইবার বাবা পারভেজ আলম জানালেন, গত দুই ঈদে করোনাভাইরাসের ভয়ে বাচ্চাকে নিয়ে মার্কেটে আসেননি তারা। এখন সে রঙ চেনে, পছন্দের রঙের জামাই তার চাই।
মহামারীর মধ্যে গত দুই বছর পোশাকের ব্যবসায় ছিল মন্দা। সংক্রমণ আর বিধিনিষেধ কমে আসায় ঢাকার বিপণীবিতানগুলোতে এবার কেনাবেচা বেড়েছে। বড়দের সঙ্গে বাচ্চারাও আসছে ঈদের জামা কিনতে।
আর গরমের কথা চিন্তা করে চাকচিক্য আর বাহারি নকশার চেয়ে গরমে স্বস্তিদায়ক পোশাকের দিকেই মনোযোগ দিচ্ছেন অভিভাবকরা।
ঢাকার বিপণীবিতানগুলো ঘুরে দেখা গেল, মেয়েদের ঘারারার পাশাপাশি, কুর্তি, ঘাগড়া, সুতি আর গেঞ্জি কাপড়ের ফ্রক এবং ছেলেদের পাঞ্জাবি, কাবলি পাঞ্জাবি এবং গরমের জন্য টিশার্টের চাহিদা বেশি।
আবার শিশুদের মনোযোগ আকৃষ্ট করতে ভারতীয় গান আর সিনেমার নমে ‘কাঁচা বাদাম’, ‘পুষ্পা’, ‘কেজিএফ-টু’সহ বিভিন্ন নামের পোশাক দোকানে ঝুলিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
নিউ সুপার মার্কেটে কালো সাদা নামের দোকানটিতে বাচ্চাদের পোশাকই বেশি বিক্রি হয়। রোজার শুরু থেকেই সেখানে ভিড় রয়েছে বলে জানালেন ম্যানেজার মোহাম্মদ হৃদয়।
তিনি বলেন, “আমাদের দোকানে বাচ্চাদের পোশাকই বেশি। আর এবার ঈদে মা-বাবারা তাদের সন্তানদের জন্য কেনাকাটা একটু বেশিই করছেন। রোজার শুরু থেকেই চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে আমাদের। কিন্তু ব্যাপারটা ভালোই লেগেছে।”
গত দুই বছরের সঙ্গে মেলালে এবার ঈদে ভিড় বাড়লেও মহামারীর আগের বছরগুলোর তুলনায় তেমন লাভ করতে পারেননি বলে জানালেন সাজনী ফ্যাশনের মালিক ইশা।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ক্রেতারা আসছেন ঠিকই, কিন্তু আগের মত সেই আমেজ নেই, বেচাবিক্রিতেও সেই লাভ নেই। যারা আসছেন, তারা বাচ্চাদের কাপড়ই বেশি দেখছেন।”
ঢাকার নিউ মার্কেটে জামাকাপড়ের দোকানগুলোর পাশাপাশি জুতার দোকানগুলোতেও বাচ্চাদের জুতার চাহিদা বেশি। সামর্থ্য অনুযায়ী ক্রেতারা পোশাকের সঙ্গে মিল রেখে বাচ্চাদের জন্য জুতা কিনছেন।
নিউমার্কেটের পল্লবী সুজ থেকে ১০ বছর বয়সী ছেলের জন্য একজোড়া স্যান্ডেল কিনেছেন ইয়াসমিন ইসলাম।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বাচ্চার জন্য একজোড়া স্যান্ডেল কিনলাম। এর আগে শার্ট প্যান্টও কিনেছি, আর একটা পাঞ্জাবি। ঈদ তো বাচ্চাদের জন্যই। ওরা খুশি হলেই আমরা খুশি।
বাচ্চার জন্য ঈদের পাঞ্জাবি কেনার ক্ষেত্রেও গরমে স্বস্তির বিষয়টা মাথায় রেখেছেন ইয়াসমিন। বললেন, “যেহেতু বাবার সাথে নামাজ পড়তে যাবে, আর এবার যা গরম! সেজন্য একটা সুতির পাঞ্জাবি কিনেছি ছেলের জন্য।”
ঢাকার মৌচাক মার্কেটেও ঈদের কেনাকাটায় শিশুদের পোশাকের দোকানগুলোতে তুলনামূলক ভিড় বেশি। এই মার্কেটেও ‘কাঁচা বাদাম’, ‘পুষ্পা’, ‘কেজিএফ-টু’সহ বিভিন্ন নামের পোশাকের পসরা সাজানো হয়েছে।
মৌচাক মার্কেটের সুপ্রিয় ফ্যাশনের মালিক মাহবুব আলম জানান, কোভিড পরিস্থিতির দুইবছর পর ক্রেতা সমাগম বাড়লেও লাভ তেমন হচ্ছে না। তবে রমজানের শেষ দিকে এসে বাচ্চাদের ঈদ পোশাক কেনার জন্য ক্রেতাদের ভিড় খানিকটা বেড়েছে।
“২০ রোজার পর থেকে দোকানে ক্রেতার চাপ একটু বেশি। বাচ্চারাও তাদের বাবা মায়েদের সাথে আসছে জামা কিনতে। বেশ একটা উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে।”
আরমানী কালেকশনের মালিক আমিনুল ইসলামের ভাষ্য, তাদের দোকানে নবজাতক থেকে শুরু করে ১২ বছর বয়সী শিশুদের জন্য বিভিন্ন দামে পোশাক বিক্রি হচ্ছে। তবে উচ্চবিত্তদের চেয়ে মধ্যবিত্ত এবং নিম্নমধ্যবিত্ত ক্রেতার সংখ্যাই বেশি।
“ঈদ তো সবার জন্যই। এই চিন্তা মাথায় রেখেই আমাদের দোকানে বিভিন্ন প্রাইসরেঞ্জে বাচ্চাদের পোশাক রেখেছি।”
অভিজাত বিপণীতে ‘জমেনি কেনাকাটা’
অভিজাত বিপণিবিতানগুলোর তুলনায় সাধারণ বিপণীবিতানগুলোতেই ক্রেতাদের ভিড় ও বিক্রি এবার ভালো।
ঢাকার বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে নামকরা ব্র্যান্ডের শিশুদের পোশাকের দোকানগুলোতে তেমন ক্রেতা নেই, বলছেন বিক্রেতারা।
এই বিপণীবিতানে শিশুদের পোশাকের জন্য পরিচিত ব্র্যান্ড শৈশব। করোনাভাইরাস মহামারীর আগে ঈদের মৌসুমে এই দোকানে ক্রেতাদের চাপ সামলানো মুশকিল ছিল। এবার ঈদে খুব একটা ক্রেতাসমাগম নেই বলে জানালের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার তুষার মাহমুদ।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “দুই বছর একটা গ্যাপের পর এ বছর যতটুকু আশাবাদী ছিলাম, সে পরিমাণে ক্রেতা এবার নেই। রমজানের প্রথমদিকে একটু ভিড় ছিল, ভেবেছিলাম শেষ পর্যন্তও এই ধারাটা থাকবে। শেষের দিকে এসে বরং ভিড় কমে গেছে।”
বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের নিচতলায় বাচ্চাদের পোশাকের দোকানে ক্রেতাসমাগম তুলনামূলক বেশি দেখা গেল। সেখানে কিডসরাস নমের একটি দোকানে বাবা মায়ের সঙ্গে কেনাকাটা করতে এসেছে ১১ বছরের হুমাইরা ফারদিন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে সে বললো, “ঈদে আমার বন্ধুরা সবাই মিলে ঠিক করেছি ঘারারা ড্রেস কিনব। গত ঈদে বাইরে যেতে পারিনি। এবার বন্ধুদের সাথে ঘুরব।
“আজকে বাবা একটা ঘারারা কিনে দিল। এখন একটা জুতো কিনতে যাচ্ছি।”