শনিবার তারা এ বিষয়ে তদন্ত চেয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি দিয়েছেন।
বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) ইমেইলে শনিবার সন্ধ্যায় চিঠি পাঠানোর বিষয়টি জানায়।
ব্লাস্টের উপপরিচালক মাহবুবা আক্তার বলেন, ব্লাস্টের ইমেইল থেকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের সরকারি ইমেইলে শনিবার চিঠিটি পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, “গত ২৪ এপ্রিল ঢাকার কলাবাগান এলাকার তেতুলতলা মাঠ রক্ষায় সোচ্চার হওয়ায় উক্ত এলাকার বাসিন্দা সৈয়দা রত্না ও তার ছেলেকে দিনভর থানায় আটকে রাখা হয়। বিক্ষোভের মুখে রোববার
দিবাগত রাত প্রায় সাড়ে ১২টার দিকে কলাবাগান থানা থেকে দুজনকে মুক্তি দেওয়া হয়।”
গত রোববার পুলিশ ওই মাঠে প্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু করলে রত্না তার কিশোর ছেলেকে নিয়ে সেখানে গিয়ে ফেইসবুক লাইভ শুরু করলে তাদের ধরে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এ নিয়ে বিক্ষোভ ও সমালোচনার মধ্যে ১৩ ঘণ্টা পর মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয় তাদের।
ওই মাঠ নিয়ে আন্দোলন ও টানাপড়েন আর নানামুখী আলোচনার মধ্যে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী ওই মাঠ খেলার জন্য থাকবে বলে নির্দেশনা দেন।
এ সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় ওদিন উদীচীর কর্মী রত্না বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “বিষয়টি ভালোভাবেই দেখছি। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেওয়ায় এখন আর ভয় নেই।”
প্রধানমন্ত্রীর কানে আগে গেলে এতদূর গড়াত না: রত্না
তেঁতুলতলা মাঠে থানার ভবন হবে না, খেলার জন্যই থাকছে
তেঁতুল তলা কখনও মাঠ ছিল না, এখন পুলিশের সম্পত্তি: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
কলাবাগানের মাঠ রক্ষার আন্দোলনকারী রত্নাকে ১৩ ঘণ্টা পর ছাড়ল পুলিশ
কোন আইনে রত্নাকে ১৩ ঘণ্টা থানায় আটকে রাখা হল, প্রশ্ন পুলিশকে
প্রতিবাদ করলেই কেন আটক হতে হয়, প্রশ্ন ১৯ নাগরিকের
শনিবার বিশিষ্ট নাগরিকদের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশের সংবিধানে ৩৫(৫) অনুচ্ছেদ অনুয়ায়ী যেকোনো ব্যক্তির প্রতি নিষ্ঠুরতা নিষিদ্ধ। যদি আটককৃত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন নাবালক হন, তবে পুলিশ কর্মকর্তাকে শিশু আইন, ২০১৩ এর ৪৫ ধারায় প্রদত্ত বিধান মেনে চলতে হবে। সংবিধান অনুযায়ী শিশুদের প্রতি সকল ধরনের নিষ্ঠুর ও অবমাননাকর শাস্তিকে বেআইনি ঘোষণা করা হয়েছে।
“…কিন্তু কলাবাগান থানা কর্তৃক রত্নাকে আটকের পর তার শিশু সন্তানকে আটক করে এবং তার সাথে সারাদিন কাউকে সাক্ষাৎ করতে দেওয়া হয় নাই, যা অনৈতিক ও বেআইনি। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অমান্য করাও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।”
গত ৩১ জানুয়ারি তেঁতুলতলা মাঠে খেলতে যাওয়া কয়েক শিশুকে পুলিশ কান ধরে ওঠবস করায় বলেও গণমাধ্যমে খবর আসে। ওই ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে চার পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়।
দুই ঘটনারই তদন্ত দাবি করে চিঠিতে বলা হয়, “…শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে পুলিশ কর্তৃক সৈয়দা রত্না ও তার শিশুকে তুলে আনা এবং বেআইনিভাবে আটক, মুচলেকা নেওয়া ও হয়রানি করা এবং সারাদিন থানায় দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তাকে না পাওয়া প্রকৃত ঘটনা তদন্ত পূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
“পাশাপাশি কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠে খেলতে যাওয়া শিশুদের কান ধরে ওঠবস করানোর ঘটনারও তদন্ত পূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।”
ওই চিঠিতে সমর্থনকারীদের মধ্যে রয়েছেন- আইনজীবী জেড আই খান, মানবাধিকারকর্মী ড. হামিদা হোসেন, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সুলতানা কামাল, নারীপক্ষের শিরীন হক, নিজেরা করির খুশি কবীর, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, গণস্বাক্ষরতা অভিযানের রাশেদা কে চৌধুরী, টিআইবির ড. ইফতেখারুজ্জামান, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবি সমিতির (বেলা) সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ব্লাস্টের সারা হোসেন।