ভাইরাসের বিধিনিষেধ এখন আর সেভাবে নেই। একটা বৃহস্পতিবার ছুটি নিতে পারলেই ঈদে টানা নয় দিনের ছুটি। কর্মজীবীদের ভাগ্যে এমন সুযোগ কমই জোটে। তাই গ্রামমুখো মানুষের পাশাপাশি পর্যটন শহরগুলোর যাত্রী সংখ্যাও এবার অনেক।
বাংলাদেশ আউটবাউন্ড ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের হিসেবে এ বছর ঈদের ছুটিতে ২০ লাখের মত মানুষ দেশের ভেতরে এবং বাইরে বিভিন্ন গন্তব্যে যাচ্ছেন বেড়াতে।
অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইকবাল মাহমুদ বাবলু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের হিসেবে কেবল ভারতেই যাচ্ছে চার থেকে সাড়ে চার লাখ লোক। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, মালদ্বীপেও যাচ্ছেন অনেকে। এদের সংখ্যাও লাখ ছাড়াবে।”
তিনি জানান, অল্প কিছু ভ্রমণপিপাসু এবার ভিয়েতনামেও যাচ্ছেন। ওমরাহ করতে সৌদি আরবে যাচ্ছেন অনেকে।
তবে ফ্লাইটের টিকেটের দাম নাগালের মধ্যে থাকলে এ সংখ্যা আরও অনেক বাড়ত বলে মনে করেন ইকবাল মাহমুদ।
“এ বছর ফ্লাইটের ভাড়া অত্যন্ত চড়া। সে কারণে ট্যুর অপারেটররা যুৎসই প্যাকেজ অফার করতে পারেননি। টিকেটের দাম কম থাকলে ট্যুর অপারেটররা অনেক লোভনীয় অফার দিতে পারতেন।”
ইকবাল মাহমুদ জানান, এক সময় শ্রীলঙ্কাতেও অনেকে বেড়াতে যেতেন। সেখানে পরিস্থিতি ভালো না হওয়ায় এবার মানুষের আগ্রহ নেই।
ভারতীয় ভিসা আবেদন জমা দিতে দীর্ঘ লাইন
ভারতের ভিসা নিতে ভিড়
মহামারীর কারণে ভ্রমণ ভিসায় ভারতে যাওয়ার সুযোগ বন্ধ ছিল দুই বছর। এখন আবার ভারত ভ্রমণের সুযোগ মেলায় গত মাসখানেক ধরেই ভিসা সেন্টারগুলোতে উপচে পড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে।
ভোররাত থেকেই অনেকে ভিসার জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছেন। চাপ সামলাতে বাড়তি সময় খোলা রাখতে হচ্ছে ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্রগেুলো।
তাদের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ১৩ এপ্রিল থেকে পুরো রমজান জুড়ে তাদের কেন্দ্রগুলো সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। এর মধ্যে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভিসা আবেদন জমা নেওয়া হচ্ছে।
বেসরকারি চাকরিজীবী তাশরিফ হোসেন বলেন, ১৭ এপ্রিল তারা আটজন ভারতের ভিসার জন্য আবেদনের প্রস্তুতি নিয়ে ভোর ৬টায় যমুনা ফিউচার পার্কে ভারতীয় ভিসা সেন্টারে যান। গিয়ে দেখেন তখনই কয়েকশ মানুষ দাঁড়ানো। অথচ ফিউচার পার্কের দরজাই তখনো খোলেনি।
সকাল ৮টার দিকে ভিসা সেন্টারের কাজ শুরু হয়। তবে এরপর আর বেশি সময় লাগেনি। সাড়ে ১০টার মধ্যেই তাদের আটজনের আবেদন জমা দেওয়ার কাজ শেষ হয়।
শারমীন আক্তার নামে আরেকজন জানালেন, ছুটিতে দার্জিলিং-গ্যাংটক যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে ভারতের ভিসা নিয়েছেন তারা। কিন্তু তাদের বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ী সীমান্ত দিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি। অনুমতি দেওয়া হয়েছে উড়োজাহাজে, গেদে অথবা আখাউড়া বন্দর হয়ে যাওয়ার। তাতে শেষ দুই দিনের বাড়তি জার্নি করতে হবে, তারপরও তারা যাচ্ছেন।
প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করতে বুধবার ঢাকা ছেড়ে যান অনেক মানুষ। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি
দেশের প্রস্তুতি
লম্বা ছুটি সামনে রেখে দেশের পর্যটন জেলাগুলোতেও হোটেল-রিসোর্ট ব্যবসায়ীদের মধ্যে সাজসাজ রব।
রাঙামাটির আসাসিক হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মঈনুদ্দিন সেলিম বলেন, “করোনাভাইরাস মহামারীতে হোটেলগুলো দুঃসহ সময় পার করেছে। অনেকেই হোটেল বন্ধ রেখেছিল। আশা করছি এই মৌসুমে সবাই ঘুরে দাঁড়াবে। সবাই সেই প্রস্তুতিই নিয়ে রাখছে।”
তিনি জানান রাঙামাটি শহরে তাদের ৫৩টি আবাসিক হোটেল আছে, যেখানে আছে প্রায় পাঁচ হাজার অতিথির রাখার ব্যবস্থা।
রাঙামাটি পর্যটন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ুয়া বলেন, টানা ছুটির কারণে বিপুলসংখ্যক পর্যটক এবার ভ্রমণে যাবেন বলেই তারা আশা করছেন।
তার মোটেল-কটেজে ৮৮টি রুম আছে। সেগুলোতে দেড় শতাধিক পর্যটক থাকতে পারেন। এর মধ্যে ৪৪টি ইতোমধ্যে বুক হয়ে গেছে। বাকিগুলোর বুকিংও হয়ে যাবে বলে তিনি ধারণা করছেন।
ছুটিতে পর্যটকের ঢলের জন্য প্রস্তুত কক্সবাজারও। কক্সবাজার কলাতলী হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মহিম খান বলছেন, ঈদের ছুটিতে বিপুল পরিমাণ পর্যটকের ভীড় হবে বলে তারা ধারণা করছেন। ইতোমধ্যে ৬০ শতাংশ হোটেল-মোটেলের বুকিং হয়ে গেছে।