বাংলা গানের গণ্ডি পেরিয়ে বলিউডে একের পর এক হিট গানের সুবাদে ভারতীয় গণমাধ্যমের শিরোনামে ওঠে এসেছিলেন তিনি; এর মাঝেই তিনি ঢাকায় ফিরলেন কেন-প্রায় এক দশকেও সেই সমীকরণ মেলাতে পারেননি ভক্তরা।
দীর্ঘদিনের নীরবতা ভেঙে শুক্রবার গুলশানের একটি ক্লাবে সাংবাদিকদের সামনে এলেন এ রক তারকা; তাকে নিয়ে জমানো সব প্রশ্নের উত্তর দিলেন তিনি।
বলিউডে স্থায়ী না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে জেমস বলেন, “যদি ওখানে প্রফেশন করতে চাইতাম, তাহলে বাংলাদেশ ছেড়ে ওখানে থাকতে হতো। সেটা আমার পক্ষে সেটা সম্ভব না।”
২০০৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘গ্যাংস্টার’ সিনেমা দিয়ে বলিউডে যাত্রা করেন জেমস; তার গাওয়া ‘ভিগি ভিগি’র গানটি প্রকাশের পর ভারতীয় উপমহাদেশের শ্রোতাদের মাঝে আলোড়ন তুলেছিল।
একই বছর মোহিত সুরির পরিচালনায় ‘ও লামহে’ চলচ্চিত্রে ‘চল চালে আপনে ঘর’, ২০০৭ সালে অনুরাগ বসুর ‘লাইফ ইন অ্যা মেট্রো’ চলচ্চিত্রে ‘আলবিদা’ ও ২০১৩ সালে ‘ওয়ার্নিং’-এ ‘বেবাসি’ গানে কণ্ঠ দেন তিনি।
এরপর আর কোনো বলিউডের গানে পাওয়া যায়নি জেমসকে; তিনি এখন হিন্দি গানে না থাকলেও তার গানগুলো এখনও হিন্দি গানের শ্রোতাদের কাছে অমলিন।
বলিউড তারকাদের মধ্যে অনেকেই জেমসের গানের প্রতি মুগ্ধতার কথা জানিয়েছেন; বলিউডের তরুণ অভিনেতা বরুন ধাওয়ান এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, জেমসের গাওয়া ‘ভিগি ভিগি’ গানটি তার সবচেয়ে প্রিয়।
পশ্চিমবঙ্গের ব্যান্ড ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’র ‘পৃথিবীটা নাকি ছোট হতে হতে’র সুর এ গানে ব্যবহার করেছেন সুরকার প্রীতম চক্রবর্তী। লিখেছেন গীতিকার মায়ুর পুরী।
অনুরাগ বসু নির্মিত ‘গ্যাংস্টার’ ছবিতে অভিনয় করেছেন ইমরান হাশমি ভিগি ভিগি’, কঙ্গনা রানাউতসহ আরও অনেকে।
অ্যালবামের পাশাপাশি বাংলা চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন জেমস; ২০১৭ সালে সত্তা সিনেমায় ‘তোর প্রেমেতে অন্ধ আমি’ গানে কণ্ঠ দেন তিনি।
পরবর্তীতে একাধিক বাংলা চলচ্চিত্রের গানে জেমসকে পাওয়া গেলেও প্রায় এক যুগ ধরে কোনো অ্যালবাম কিংবা নগরবাউলের একক গান করেননি তিনি।
২০০৯ সালে ‘কাল যমুনা’ নিয়ে শেষবারের মতো শ্রোতাদের সামনে এসেছিলেন তিনি।
বিরতি ভেঙে এবার ‘আই লাভ ইউ’ শিরোনামে একক গান নিয়ে শ্রোতাদের সামনে আসছে চাঁদ রাতে; গানের কথা যৌথভাবে লিখেছেন জেমস ও বিশু শিকদার। গানের সুর ও সংগীত পরিচালনাও করেছেন জেমস।
বিরতির কারণ জানতে চাইলে জেমস বলেছেন, “এক যুগ হয়ে গেছে; এটা তের বছর কিংবা এগারো বছরও হতে পারত। আশেপাশের বন্ধু-বান্ধবরা বলছিল, নতুন গান করা উচিত। তখন পাত্তা দিইনি।
“কয়েকদিন ধরে মাঠে-ময়দানের দর্শকরা দাবি করেছে, নতুন গান লাগবে। ওদের কারণেই মনে হলো, একটা গান করা উচিত। ময়দানের দর্শক শ্রোতাদের জন্যই গানটা করলাম।”
বসুন্ধরা ডিজিটালের আয়োজনে কয়েকটি গান প্রকাশের পর একটি অ্যালবামেরও পরিকল্পনার কথা জানালেন এ রক তারকা।
ডিজিটাল মাধ্যমের প্রভাবে অ্যালবামের সেই রমরমা দিনগুলো প্রায় হারিয়ে গেলেও শ্রোতারা ফের অ্যালবামে ফিরছেন বলে ধারণা করছেন তিনি।
“আস্তে আস্তে সব ডিজিটাল হয়ে গেল, অ্যালবাম প্রকাশ করা একেবারেই বন্ধ হয়ে গেল। এখন শুধু স্ট্রিমিং চলছে। হার্ড কপি প্রায়ই বিলুপ্ত মনে হয়। আমি ও বসুন্ধরা ডিজিটাল অ্যালবাম আকারে বের করার উদ্যোগ নিয়েছি।
“অ্যালবাম আবার ফিরছে। রেকর্ড প্লেয়ারও বিক্রি হচ্ছে। এলপি আবার ভালো বাজার পাচ্ছে। সিঙ্গেল করার পর পুরোটা অ্যালবাম আকারে প্রকাশ করব।”
অ্যালবামের পাশাপাশি বাংলা চলচ্চিত্রের গানেও নিয়মিত হবেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে জেমস বলেন, “এখন বলতে পারছি না।”
চার দশকের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে যথাযথ সম্মান পেয়েছেন কি না?-এমন প্রশ্নের জবাবে জেমস বলেছেন, “অবশ্যই। আর কত। আমি মানুষের ভালোবাসায় মুগ্ধ।”
১৯৬৪ সালের ২ অক্টোবর নওগাঁয় জন্ম নেন জেমস। তার বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে; সংগীত জীবনে যাত্রাও হয়েছে বন্দরনগরী থেকেই।
১৯৮০ সালে ‘ফিলিংস’ ব্যান্ড গঠন করেন তিনি। ফিলিংস থেকে ‘ষ্টেশন রোড’, ‘অনন্যা’, ‘জেল থেকে বলছি’, ‘নগর বাউল’, ‘লেইস ফিতা লেইস’, ‘কালেকশন অব ফিলিংস’ শিরোনামে অ্যালবামগুলো প্রকাশ হয়।
পরে ‘ফিলিংস’ ভেঙে ‘নগর বাউল’ গঠন করেন তিনি। ‘দুষ্টু ছেলের দল’ ও ‘বিজলি’ শিরোনামে দুটির অ্যালবাম প্রকাশ করে ব্যান্ডটি।