শনিবার ভোর থেকে এ দুই ঘাটে বাড়িফেরা মানুষেরা আসতে শুরু করেন; বেলা বাড়লে লোকজনের ভিড়ও বাড়তে থাকে। যাত্রী ও যানবহনের চাপ বেশি পড়ায় অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ছুটছে লঞ্চ ও স্পিডবোটগুলো। আর ফেরিতে চাপ থাকায় ঘাট এলাকায় বড় হয়েছে গাড়ির লাইন।
যাত্রীদের মধ্যে বাড়ি ফেরার আনন্দের রেশ থাকলেও প্রচণ্ড গরমে কাঁধে-পিঠে ব্যাগ নিয়ে রাস্তা পার হওয়ার ধকলের স্পষ্ট ছাপও ছিল তাদের চোখে-মুখে ।
শিমুলিয়া:
বৃহস্পতিবার ছুটির ঘণ্টা বাজতেই এই ঘাটে যাত্রী ও যানবহনের চাপ বাড়তে থাকে; যা আরও বেড়ে যায় শুক্রবার সকাল থেকে। শনিবার ভোর থেকে মানুষের ভিড়ে ঠেসে যায় এ ঘাট।
যাত্রীরা বিভিন্ন ছোট-বড় যানবাহন, পিকআপ ও মোটরসাইকেল করে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে এবং হেঁটে শিমুলিয়া ঘাটে আসেন । কিন্তু ঘাটে ফেরি সঙ্কটে চরম বিপাকে পরেন যাত্রীরা।
ফেরিতে জায়গা না পেয়ে অনেক যাত্রী লঞ্চ বা স্পিডবোটে পাড়ি দিচ্ছেন পদ্মা। আবার অনেকেই শিমুলিয়া পর্যন্ত গাড়িতে এসে লঞ্চ বা স্পিডবোটে পদ্মা পাড়ি দিয়ে ওপর প্রান্তে গিয়ে আবার গাড়িতে উঠছেন। চাপ থাকায় লঞ্চ এবং স্পিডবোটগুলো অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে ঘাট থেকে ছেড়ে যাচ্ছে।
এই রুটে বাস, ট্রাক পিকআপ-মিনি কভার্ডভ্যান পারাপার বন্ধের নির্দেশনা থাকলেও ঘাট এলাকায় এ ধরনের শতাধিক যানবাহন অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে।
মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ও মাদারীপুরের বাংলাবাজার এবং শরীয়তপুরের মাঝিরকান্দি নৌপথে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৬ থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ৮৫টি লঞ্চ ও সকাল-সন্ধ্যা ১৫৫টি স্পিডবোট ও ১০টি ফেরি চলাচল করছে। এর মধ্যে রাতে চলছে ৭টি ফেরি। ঈদযাত্রায় ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি কমাতে শরীয়তপুরের জাজিরায় মাঝিরকান্দি (সাত্তার মাদবর) ঘাটে নতুন আরেকটি ফেরিঘাট চালু করা হয়েছে।
গাজীপুর থেকে ভোর ৫টার দিকে শিমুলিয়ায় এসেছেন বরিশালগামী প্রাইভেটকারের যাত্রী সখিনা আক্তার। তিনি বলেন, “পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ করতে গ্রামের বাড়ি যাব। ঘাটে এসেই যানজটে পড়েছি। বেলা ১০টায় ফেরিতে উঠার সিরিয়াল পেয়েছি।”
রওশন আরা নামে আরেক যাত্রী বলেন, “ছেলেদের নিয়ে ঢাকায় থাকি। শুধু দুটো ঈদেই ওদের নিয়ে গ্রামের বাড়ি যাই। বড় ছেলে অসুস্থ। ভোর থেকে গরমের মধ্য অপেক্ষা করছি। ছেলেরা ঢাকায় ফিরে যেতে চাইছে। আর কয়টা ফেরি বাড়ালে যাত্রী ভোগান্তি কম হত।”
মহামারীর কারণে দুই বছর বাড়ি যেতে পারেননি পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া এলাকার অভিষেক। সকাল সোয়া ১০টার দিকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঈদ করতে গ্রামে যাচ্ছি। সাত ঘণ্টা ধরে পদ্মা পাড়ি দেওয়ার অপেক্ষায় আছি। গরমে খুব ভোগান্তিতে পড়েছি। যদি সুস্থভাবে বাড়ি যেতে পারি, তাতেই খুশি আমি।”
মাওয়া পদ্মা উত্তর থানার ওসি আলমগীর হোসেন, প্রতিটি ফেরিঘাটের মুখে যানজট সৃষ্টি করছে মোটরসাইকেল। মোটর সাইকেলগুলো বিশৃঙ্খলভাবে চলাফেরা কারায় সঙ্কট বাড়ছে। এমনকি মোটর সাইকেলের চাপে ঘাটে ফেরি ভিড়ার পর ফেরিতে থাকা যানবাহনও নামতে পারছিল না। পুরো রাস্তা আটকে ছিল। এতে শুক্রবার চরম ভোগান্তি সৃষ্টি হয়। পরে শনিবার সকল মোটর সাইকেল ১ নম্বর ফেরি ঘাটে নিয়ে আসা হয়। এছাড়া ২,৩ ও ৪ নম্বর ঘাট দিয়ে যাত্রী ও হালকা যানবাহন পারা পার করা হয়।
ঘাটের পরিস্থিতি অন্যদিনের তুলনায় ভাল বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।
ঘাটের পরিস্থিতি কেমন এমন প্রশ্নে শিমুলিয়ার বিআইডব্লিউটিসির সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘এই মুহুর্তে আমি বলব, ফেরির কোন ঘাটতি নেই। মোটরসাইকেল দিয়ে ঘাট জ্যাম হয়ে ছিল। এখন তাদের সরিয়ে একটা ঘাটে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘাটের যানজট নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে রয়েছে পুলিশ সদস্যরা। তারা বিষয়টা দেখছেন।
“তাছাড়া ঘাটে যারাই আসছেন তারা শৃঙ্খলা মানছেন না; এলামেলো ঢুকে যানজট বাঁধিয়ে দিচ্ছেন। এ কারণে অনেক সময় ফেরি থেকে গাড়ি নামতেও সমস্যা হচ্ছে। এর ফলে দীর্ঘ সময় ব্যয় হচ্ছে। কিন্তু পাবলিক বুঝতে চাইছে না এতে তাদের দুর্ভোই বাড়ছে।”
তিনি বলেন, “আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। কিন্তু কার আগে কে যাবে এই প্রতিযোগিতায় ঘাটে সমস্যা হচ্ছে।”
যাত্রীদের নির্বিঘ্নে বাড়ি ফেরাতে ট্রাফিক পুলিশ, নৌ পুলিশ, লৌহজং থানা পুলিশ, জেলা পুলিশ, কোস্টগার্ড, সিভিল ডিফেন্স ও আনসার সদস্যরা কাজ করছেন।
পাটুরিয়া:
মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ রুটে শনিবার সকাল থেকেই যাত্রী ও যানবহনের চাপ গত কয়েকদিনের তুলনায় বেশি দেখা গেছে। বেলা বাড়ার পর সেই চাপ আরও বাড়বে বলে ঘাট সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন।
ঘাট এলাকার ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মেরাজ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টি ফোরডটকমকে বলেন, “যানজট এড়াতে ছোট গাড়িগুলো ঘাটের ১২ কিলোমিটার আগে শিবালয়ের টেপড়া থেকে বাইপাস সড়ক দিয়ে পাঁচ নম্বর ঘাটের দিকে পাঠানো হচ্ছে। পাঁচ শতাধিক ছোট গাড়ি ওই সড়কে আটকে আছে। তবে ঘাট এলাকার পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে আছে। ছোট গাড়ির চাপ বেড়ে যাওয়ায় ৪ নম্বর ঘাটেও ছোট গাড়ি পারাপার শুরু হয়েছে।
কত কিলোমিটার এলাকায় গাড়ির জট জানতে চাইলে বলেন, “৩ কিলোমিটারের কম হবে।”
বিআইডব্লিউটিসির পাটুরিয়া কার্যালয়ের সহকারী ব্যাবস্থাপক আব্দুস সালাম বলেন, “আজ ২১টি ফেরি দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। ঘাট এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। লোড আনলোডে কোন সমস্যা নেই তাই ঘাট এলাকার পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে আছে। ”
পাটুরিয়া ও আরিচা ঘাটে ৩৩টি লঞ্চ চলছে। তার মধ্যে পাটুরিয়া ঘাটে ১৯টি লঞ্চ দিয়ে ও আরিচা ঘাটে ১৪টি লঞ্চ দিয়ে যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে বলে লঞ্চ ঘাট পরিচালক পান্না লাল নন্দী জানান।
তিনি বলেন, “শুক্রবার বৈরি আবহাওয়ার কারণে দুবার লঞ্চ চলাচল বন্ধ রেখেছিলাম। শনিবার ভোর সোয়া ৫টা থেকে ৩৩টি লঞ্চ দিয়ে যাত্রী পারাপার শুরু করি। লঞ্চ রাতে দুবার বন্ধ থাকায় সকালে যাত্রীর চাপ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। বেলা বাড়ার সাথে চাপ কিছু কমতেছে। “
শাহ পরাণ ফেরির ফরিদপুরগামী যাত্রী আলামিন বলেন, “মোটরসাইকেল নিয়ে ঢাকা থেকে আসছি। বড় যানজট দেখিনি। তবে সড়কে গাড়ির চাপ আছে।”
মমতাজ নেভিগেশন লঞ্চের গোপালগঞ্জগামী যাত্রী সরোয়ার হোসেন বলেন, “ধীরে স্বস্তিতে না ওঠে সবাই হুড়োহুড়ি করে লঞ্চে ওঠে। দ্রুত যাব বলে লঞ্চে যাচ্ছি।”
বিআইডব্লিউটিসির আড়িচা কার্যালয়ের ডিজিএম শাহ খালিদ নেওয়াজ বলেন, “ঘাটে গাড়ির চাপ নিয়ন্ত্রণে আছে। কেননা, ঘাট এলালায় কোনো যান জট তৈরি করতে দিচ্ছি না। ফেরিতে লোড ও আনলোড পুরাপুরি স্বাভাবিক। তবে বিকালের দিকে গার্মেন্টস ছুটি হলে একটা চাপ পড়বে বলে ধারণা করছি।”