ব্যবসায়ীরা বলছেন, সেমাইয়ের মূল কাঁচামাল হল ময়দা। রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, সরবরাহেও সঙ্কট রয়েছে। তাতে বেড়ে গেছে ময়দার দাম; সঙ্গে তেলের দামও চড়েছে। তাই দেশের কোম্পানিগুলো সেমাইয়ের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মহাখালী কাঁচাবাজার এবং মিরপুরের বেশ কয়েকটি বাজার ও দোকান ঘুরে দেখা গেছে, বনফুল প্রিন্স, কিষোয়ান এবং বিডি ফুডসের প্রতিকেজি লাচ্ছা এবং শন বা লম্বা সেমাইয়ের দাম গত ঈদুল ফিতরের তুলনায় বেড়েছে।
এসব কোম্পানির ২০০ গ্রামের লাচ্ছার প্যাকেট এ বছর ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়।
মিরপুর-৬ এর আল্লাহর রহমত স্টোরের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ হাশেম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কোম্পানিগুলো তাদের কাছ থেকে গত বছরের তুলনায় ১০ টাকা করে বেশি রাখছে।
“গত বছর আমরা প্রিন্স, বনফুল কিষোয়ান কোম্পানির ২০০ গ্রামের লাচ্ছার প্যাকেট বিক্রি করেছি ৩৫ টাকায়। কিন্তু এবার কোম্পানিগুলো বেশি দাম রাখছে। আমাদেরও তাই বাড়াতে হয়েছে।”
হাশেম বলেন, অলিম্পিয়াসহ আরও কিছু কোম্পানি প্রিমিয়াম কোয়ালিটির কিছু সেমাই সরবরাহ করে। এসব সেমাইয়ের প্যাকেট হয় ৫০০ গ্রামের।
“গত বছর এই কোয়ালিটির সেমাই ৬০০ টাকায় বিক্রি করতে পারলেও এবার ১০০ টাকা বেড়ে ৭০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। প্রতি কেজিতে দাম ২০০ টাকা করে বেড়ে গেছে।”
এই ব্যবসায়ী বলেন, “কোম্পানির লোকজন আমাদের বলছে, সেমাই তৈরির প্রায় সকল কাঁচামাল আমদানিনির্ভর। ইউক্রেইন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ববাজারে ময়দার দাম বেড়ে গেছে। ভোজ্যতেলের দামও অনেক বেশি। তাই এবার সেমাইয়ের দাম বেড়ে গেছে।”
কম আয়ের মানুষের সাধারণত প্যাকেট না কিনে খোলা লাচ্ছা সেমাই কেনেন, এবারে সেই খোলা সেমাইয়ের দামও কেজিতে ৫০ টাকা বেড়েছে বলে জানান ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হাশেম।
গত বছর খোলা সেমাই ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এবার বিক্রি করতে হচ্ছে ২০০ টাকায়।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সেখানেও বিক্রেতারা ২০০ গ্রামের প্রতি প্যাকেট লাচ্ছা সেমাই ৩৭ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি করছেন। বিক্রেতারা বলছেন, কোম্পানি বাড়িয়েছে, তাই তারাও দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন।
বি বাড়িয়া স্টোরের মালিক শমসের মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিনি গত বছর বিডিফুডসের ২০০ গ্রামের লাচ্ছা সেমাই প্যাকেট বিক্রি করেছেন ৩০ টাকায়। কিন্তু এবার কোম্পানি বেশি দাম রাখায় ৪০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।
“গত বছর প্রতি কেজি ঘি এক হাজার টাকায় বিক্রি করেছি, এবার সেটা বিক্রি করতে হচ্ছে ১১০০ টাকায়,” বলেন এই ব্যবসায়ী।
তবে সেমাই রান্নার বাকি অনুসঙ্গ যেমন চিনি, কিসমিস বাদামসহ অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়েনি বলেন জানান মোহাম্মদ হাশেম।
মিরপুরের রূপনগরের মোহাম্মদী স্টোরের ক্যাশিয়ার মো. সোহেল জানান, তিনিও বনফুল, প্রিন্স এবং কিষোয়ানসহ এই মানের কোম্পানির সেমাই প্রতি প্যাকেট বিক্রি করছেন ৪৫ টাকায়।
ঈদের আর বাকি না থাকলেও এবার সেমাই বিক্রি কম বলে জানান সোহেল।
নুডলস এবং অন্যান্য
ঈদের সময় নুডলসেরও কিছু চাহিদা থাকে জানিয়ে সোহেল বলেন এখন নুডলসের দামও কিছুটা বেড়েছে। দুমাস আগেও প্রাণ, ম্যাগি ও বসুন্ধরা গ্রুপের ৫০০ গ্রাম ওজনের ৮ প্যাকেট নুডলস পাওয়া যেত ১২৫ টাকায়, এবার সেটির দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪০ টাকা।
তিন মাস আগে ৪০০ গ্রামে কুলসন ম্যাকারনি পাস্তা ৬০ টাকায় কেনা যেত, এখন ১৫ টাকা বেড়ে হয়েছে ৭৫ টাকা।
তবে দামে স্থিতিশীল রয়েছে চিনি। প্রতিকেজি খোলা চিনি ৮০ টাকা এবং প্যাকেট চিনি প্রতিকেজি ৮৫ টাকায় বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। আর মানভেদে কিসমিস পাওয়া যাচ্ছে কেজিতে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়।
ঈদে চাহিদা বেশি থাকে বলে প্রতি বছর দাম বাড়ে পোলাওয়ের চালের। রোজার শুরুর পর এক মাসের ব্যবধানে খোলা ও প্যাকেটের চালের দাম ধাপে ধাপে কেজিতে বেড়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা।
রাজধানীর এসব বাজারে ভালো মানের খোলা পোলাউয়ের চাল কেজিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়। আর প্যাকেটের পোলাওয়ের চাল কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়।
গত দুই মাসের ব্যবধানে ফুলক্রিম গুঁড়াদুধের দাম বেড়েছে কেজিতে ৪০ টাকা। ৫০০ গ্রাম গুঁড়াদুধের দাম দাঁড়িয়েছে ৩৬৫ টাকা।