রোববার সকাল থেকে পদ্মা পাড়ি দিতে দক্ষিণাঞ্চলের প্রবেশদ্বার শিমুলিয়ায় ঘরমুখোদের উপচেপড়া ভিড় শুরু হয়। সেই সঙ্গে মোটরসাইকেলে চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ঘাট কর্তৃপক্ষকে। শিমুলিয়া থেকে বাংলাবাজার ও মাঝিরকান্দি নৌপথে এখন ১০টি ফেরি দিয়ে পারাপার করেও কুলানো যাচ্ছে না।
বিআইডব্লিউটিসির মুন্সীগঞ্জের সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম বলেন, “শুধু মোটরসাইকেলের জন্য ঘাটে মাঝে মাঝে যানজট ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। তবে আমরা আশা করি যত গাড়ি আসুক, যত মানুষ আসুক ঈদে ঘরমুখোদের নির্বিঘ্নে পারাপার করতে পারব।”
এদিকে ফেরি সঙ্কটের কারণে প্রচণ্ড গরমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘাটে দাঁড়িয়ে থেকে নাকাল হচ্ছেন যাত্রীরা; ফেরি দেখা মাত্রই হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন তারা। যাত্রীদের সঙ্গে হাজার হাজার মোটরসাইকেল উঠছে ফেরিতে। একটি ফেরিঘাট শুধু মোটরসাইকেল পারাপারের জন্য রাখা হলেও, প্রতিটি ঘাট দিয়েই পার হচ্ছে। ফেরিগুলোকে শুধু মোটরসাইকেল আর যাত্রী নিয়ে পদ্মা পার হতে দেখা গেছে।
এদিকে কাল বৈশাখী ঝড়ের শঙ্কায় শনিবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে লঞ্চ বন্ধ থাকায় ফেরিতে চাপ পড়ে; বাড়ি যেতে হাজার হাজার মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে ফেরিতে। এতে বিশৃঙ্খলা তৈরি হলে রাতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রীদের। রোববার ভোর সাড়ে ৫টা থেকেই লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল শুরু হলে সেগুলো চাপ আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন বলেন, “আমার মনে হয়, ঈদযাত্রায় অনেক ব্যক্তিগত মোটরসাইকেলও ভাড়ায় ব্যবহৃত হচ্ছে। সেজন্য মোটসাইকেলের পরিমাণটাও এবার বেশি। তাছাড়া মোটসাইকেলে অল্প সময়ে যাওয়া যায়। এছাড়া ট্রাফিক জ্যামে ভোগান্তিও কিছুটা কম হয়। তাই অনেকেই মোটরসাইকেল বেছে নেয়। এজন্য এই ঘাটে মোটরসাইকেলের চাপটা বেশি।”
রোববার সকাল থেকে যাত্রী ও যানবাহন পারাপারে লঞ্চ, স্পিডবোট ও ফেরি বিরামহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ৮৫টি লঞ্চ ও ১৫৫টি স্পিডবোট দিয়ে পারাপার করানো হচ্ছে। তাছাড়া ঘাটে অন্তত ৪ শতাধিক গাড়ি পারাপারের অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে। ঘাট এলাকায় যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।
এদিকে লঞ্চ ঘাটেও যাত্রীদের চাপ রয়েছে চোখে পড়ার মতো। শিমুলিয়া থেকে যাত্রী বোঝাই করে বাংলাবাজার ও মাঝিরকান্দি ঘাটে যাচ্ছে লঞ্চ ও স্পিডবোটগুলো। পরে ঘাটে নেমে সেখান থেকে বিভিন্ন যানবাহনে যাত্রীরা ঘরে ফিরছে।
শারীয়তপুরগামী যাত্রী আলেক শেখ বলেন, “ঘাট এলাকায় শৃঙ্খলা কিছুটা ভালো থাকলেও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঘাট পর্যন্ত আসতে যাত্রীদের পোহাতে হচ্ছে সীমাহীন দুর্ভোগ। বাড়তি ভাড়া দিয়ে আসতে হচ্ছে ঘাট এলাকায়। মাওয়া চৌরাস্তায় বাস থেকে নামিয়ে দেয়। ফলে প্রখর রোদের মধ্যে রোজা রেখে প্রায় ৩/৪ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে আসতে হচ্ছে শিমুলিয়া ঘাটে।
বিআইডব্লিউটিসি’র শিমুলিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. ফয়সাল আহমেদ জানান, সকাল থেকেই যাত্রী ও যানবাহনের অত্যধিক চাপ রয়েছে। তবে আমাদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় পারাপার চলছে। ঘাটে প্রায় দুইশ পিকআপ ভ্যান পাপারের জন্য দাঁড়িয়ে রয়েছে। তবে এখন সেগুলো পারাপার করা হচ্ছে না। যাত্রী, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল পারাপারের জন্য ফেরিঘাটগুলো নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
মাওয়া ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর (আইসি) জিয়াউল হায়দার জানান, ঈদে ঘরমুখো যাত্রীরদের নিরাপত্তা দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর রয়েছে। ঘাটে যাত্রীদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে।