ক্যাটাগরি

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ১০ হাজার শিশু পড়বে মিয়ানমারের পাঠ্যক্রমে

চলতি মাসেই এ শিশুদের তালিকাভুক্ত করার কাজ শেষ হবে জানিয়ে ইউনিসেফ এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করতে এ উদ্যোগ হবে গুরুত্বপূর্ণ একটি ‘মাইলফলক’।

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শিশুদের নিজের ভাষায় শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে ইউনিসেফ ও উন্নয়ন অংশীদাররা ‘মিয়ানমার কারিকুলাম পাইলট (এমসিপি) প্রকল্প চালু করে।

বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম এই শরণার্থী শিবিরে ৩ হাজার ৪০০টি কেন্দ্রে রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। এর মধ্যে ইউনিসেফের সহযোগিতায় ২ হাজার ৮০০টি কেন্দ্রে পড়ছে রোহিঙ্গা শিশুরা।  

এখন পর্যন্ত তাদের লেখাপড়া চলছে ‘লার্নিং কম্পিটেন্সি ফ্রেমওয়ার্ক অ্যাপ্রোচ’ এর আওতায়। এ ব্যবস্থায় ৪ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুরা লেখাপড়ার সুযোগ পাচ্ছে।

ইউনিসেফ বলছে, রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য লেখাপড়ার ভিত তৈরি করতে ‘জরুরি প্রয়োজনে’ এই ‘অআনুষ্ঠানিক পাঠ্যক্রম’ তৈরি করা হয়েছিল। আর পাইলট প্রকল্পে চালু হতে যাওয়া নতুন পাঠ্যক্রম হবে মিয়ানমারের জাতীয় পাঠ্যক্রমের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা।

এর মাধ্যমে রোহিঙ্গা শিশুরা মিয়ানমারের আনুষ্ঠানিক পাঠ্যক্রমের আদলে শেখার সুযোগ পাবে। নিজ দেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার ঘটতি তাতে কিছুটা হলেও পূরণ হবে।

এই কারিকুলামে শিক্ষা পেলে রোহিঙ্গা শিশুরা নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে প্রস্তুত হতে পারব বলে মনে করছে ইউনিসেফ।

বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী শিশুদের মধ্যে লেখাপড়ার ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে।

“ইউনিসেফ ও উন্নয়ন অংশীদাররা সেই আগ্রহের প্রতি সাড়া দিতে শরণার্থী শিবিরে কাজ করে যাচ্ছে।”

ইউনিসেফের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশে বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে স্কুলে যাওয়ার বয়সী রোহিঙ্গা শিশুর সংখ্যা প্রায় চার লাখ। তাদের মধ্যে তিন লাখ শিশু আশ্রয় শিবিরের স্কুলগুলোতে লেখাপড়া করছে। তুলনামূলক একটু বেশি বয়সের শিশুরাও নতুন পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে লেখাপড়ার সুযোগ পাবে।

মিয়ানমারের এই শিক্ষাক্রমে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ১০ হাজার শিশু লেখাপড়া করবে। সাধারণত ১১ থেকে ১৪ বছর বয়সীরা ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির আওতায় পড়ে। কিন্তু কয়েক বছর ধরে ক্যাম্পে থাকা শিশুই লেখাপড়ায় পিছিয়ে পড়েছে। তাই ষষ্ঠ থেকে নমব শ্রেণিতে লেখাপড়া করা শিশুদের বয়স দাঁড়িয়েছ ১৪ থেকে ১৬ বছর। 

ইউনিসেফ বলছে, পর্যায়ক্রমে নতুন এই পাঠ্যক্রমের বিস্তার ঘটানো হবে, যাতে ২০২৩ সালের মধ্যে স্কুলবয়সী সব শিশু মিয়ানমারের পাঠ্যক্রম অনুযায়ী লেখাপড়া করতে পারে। 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অনেক চেষ্টা করেও এক লাখ রোহিঙ্গা শিশুকে স্কুলে আনা যাচ্ছে না। স্কুলে না যাওয় শিশুদের কাছে পৌঁছাতে এবং তাদের স্কুলে নিতে যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, সেগুলো কাটিয়ে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ইউনিসেফ ও উন্নয়ন অংশীদাররা।

শেলডন ইয়েট বলেন, “এই শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিতে, তাদের অনাগত ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করতে আমাদের যথাসাধ্য করতে হবে। ইউনিসেফ রোহিঙ্গা শরণার্থী সম্প্রদায়, বাংলাদেশ সরকার এবং অংশীদারদের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবে যতক্ষণ না শরণার্থী শিশুর মানসম্মত শিক্ষার ব্যবস্থা করা সম্ভব না হয়।”