ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতকে বিষয়টির ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য তলব করে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছে।
ল্যাভরভ রোববার ইতালীয় টিভি অনুষ্ঠানে এক সাক্ষাত্কারে ওই মন্তব্য করেন। তিনি ইউক্রেইনের ইহুদি প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির বিরুদ্ধেও নাৎসিবাদকে সমর্থনের অভিযোগ করেছেন।
ইউক্রেইনে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে দেশটিকে নাৎসি আদর্শের দেশ হিসাবে চিত্রিত করতে চেয়েছে রাশিয়া। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার দেশের সেই অবস্থানকে সমর্থন করতে গিয়ে ওই মন্তব্য করেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের নির্দেশে পরিচালিত নিধনযজ্ঞে ৬০ লাখ ইহুদি নিহত হয়। সেই হত্যাজ্ঞের স্মরণে ইসরায়েলের হলোকাস্ট দিবস উদযাপনের কয়েকদিনের মাথায় ল্যাভরভ হিটলারের ইহুদি যোগ থাকা নিয়ে কথা বললেন।
ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি নিজে ইহুদি হওয়ার পরও রাশিয়া কীভাবে ইউক্রেইনকে নাৎসিমুক্ত করার জন্য লড়ার দাবি করতে পারে-এমন প্রশ্নের জবাবে ল্যাভরভ সাক্ষাৎকারে বলেন: “জেলেনস্কি ইহুদি তো কী হয়েছে? তিনি ইহুদি হলেও তার নাৎসি যোগ উড়িয়ে দেওয়া যায় না। হিটলারও অর্ধেক ইহুদি ছিলেন। আমার বিশ্বাস তার শরীরেও ইহুদির রক্ত ছিল।”
‘সবচেয়ে খারাপ ইহুদি-বিদ্বেষীরা সাধরণত ইহুদিরা নিজেরাই হয়, বিজ্ঞ ইহুদিরা এমন কথাই বলে থাকেন” বলেও উল্লেখ করেন ল্যাভরভ।
এই মন্তব্যের পালটা জবাবে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়াইর লাপিদ বলেছেন, “রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্য অত্যন্ত অপত্তিকর এবং ক্ষমার অযোগ্য।”
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেটও ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, “এ ধরনের মিথ্যা কথার মানে হচ্ছে, ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ ইহুদি নিধনের সেই অপরাধের জন্য ইহুদিদের নিজেদের ওপরই দোষ চাপানো। আর এভাবে ইহুদিদের ওপর নিপীড়নকারীদেরকে এর দায়মুক্ত করে দেওয়া।”
“আজকের কোনও যুদ্ধই হলোকাস্ট নয় কিংবা হলোকাস্টের মতো নয়। রাজনৈতিক উদ্দেশে বা রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ইহুদি জনগণের হলোকাস্টের ব্যবহার অবিলম্বে বন্ধ হওয়া বাঞ্ছনীয়”, বলেন বেনেট।
হিটলারের দাদার পরিচয় তেমন জানা যায় না। তবে তিনি ইহুদি ছিলেন বলে শোনা যায়। যদিও এর কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ১৯৫৩ সালে ফ্র্যাঙ্ক তার যে স্মৃতিকথা প্রকাশ করেছিলেন, সেখানে তিনি বলেছেন, হিটলার তাকে তার ইহুদি বংশপরিচয় নিয়ে রটা গুজব তদন্ত করে দেখার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
ফ্রাঙ্ক বলেছেন, হিটলারের দাদা যে আদতেই ইহুদি ছিলেন সেই প্রমাণ তিনি উদঘাটন করেছিলেন। যদিও এই দাবিটি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব হিসাবেই চাউর হয়েছে এবং মূল ধারার ইতিহাসবিদরা বিষয়টি নিয়ে সন্দেহও প্রকাশ করেছেন।
হিটলারকে নিয়ে ল্যাভরভের মন্তব্যে ইসরায়েলে অবস্থিত রুশ দূতাবাস তাৎক্ষণিক কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি এবং মস্কো থেকেও কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
তবে ইসরায়েলের মতো ইউক্রেইনও ল্যাভরভের মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করে বলেছে, “এটি জঘন্য মন্তব্য।” ইসরায়েল, ইউক্রেইন, ইহুদিদের জন্য এবং জেলেনস্কির নিজের জন্যও এমন মন্তব্য আক্রমণাত্মক বলে এর সমালোচনা করেছে কিইভ।
ইউক্রেইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা টুইটে বলেছেন, “আজকের রাশিয়া যে অন্যান্য দেশকে পুরোপুরি ঘৃণা করে সেটিরই ন্যাক্কারজনক প্রকাশ ঘটাল তারা।”