এমন দিনে ঝিলের মনোরম পরিবেশে ওয়াটার ট্যাক্সিতে চড়ে আর গাছের ছায়ায় বসে গল্প আর আড্ডায় দিন কেটেছে রাজধানীর হাজারও মানুষের। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সরগরম ছিল পুরো ঝিল পাড়; একদল যাচ্ছেন তো দলে বেধে ছোট বড় সব বয়সের আরেক দল আসছেন।
ঢাকার স্থায়ীদের বাসিন্দাদের পাশাপাশি যারা ঈদের ছুটিতে পরিবার নিয়ে বাড়ি যেতে পারেননি কিংবা মেসে বা হোস্টেলে বসবাসকারী কর্মজীবী, শিক্ষার্থী কিংবা ঈদে ঢাকায় আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে আসা সব রকমের মানুষের দেখা মিলেছে সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর বেড়ানোর প্রাণকেন্দ্র হয়ে ওঠা হাতিরঝিলে।
ঝিলের গুলশান, এফডিসি ও রামপুরা প্রান্ত থেকে নৌকা বা স্পিড বোটে চড়ে ভ্রমণের সুযোগ ছিল। তবে রামপুরা থেকে এফডিসি যাওয়ার সড়কের পুরো অংশজুড়ে বিনোদনপ্রেমীদের দেখা গেছে ঝিলের পাশে বসে গল্প আর আড্ডায় মাততে। এলোমেলো ঘুরে বেড়ানো আর ছবি বা সেলফি তোলা ব্যক্তিরাও নজর কেড়েছেন।
ঢাকায় ঈদ পালন করা মানুষের বিনোদন ও ঘুরাফেরার অন্যতম লক্ষ্য এখন হাতিরঝিল। ঈদ ছাড়াও জলসিঁড়ি-উদ্যান আর রেস্টুরেন্টের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা এই বিনোদন কেন্দ্রে মানুষের ভিড় লেগেই থাকে।
ঈদ উপলক্ষে হাতিরঝিলে ওয়াটার ট্যাক্সির সূচিতেও আনা হয়েছে পরিবর্তন। ঝিলের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছেড়ে যাওয়া স্পিড বোটগুলো ঈদের দিনসহ পরবর্তী দুদিন যাত্রী পরিবহন করবে না; শুধু বিনোদনপ্রেমীদের জন্য এগুলো ভেসে বেড়াবে।
বোট সার্ভিসের কর্মী সজল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, হাতিরঝিলের গুদারাঘাট, পুলিশ প্লাজা, রামপুরা ও এফডিসি প্রান্ত থেকে লোকভর্তি হয়ে আধঘণ্টার জন্য ঝিলে ঘুরে আবার আগের জায়গায় আসছে বোটগুলো। আগের মত একপ্রান্ত থেকে শুরু করে আরেক প্রান্তে গিয়ে থাকছে না। এ সময়টুকু ঘুরে বেড়াতে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৮০ টাকা।
আগে গুলশান গুদারাঘাট থেকে এফডিসি প্রান্তে যেতে জনপ্রতি খরচ ছিল ৩০ টাকা। ঈদের এই তিন দিনে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ঝিল ভ্রমণের ব্যবস্থা চলবে বলে কর্মীরা জানান।
দুপুরের পর থেকে ঝিলের পুলিশ প্লাজা প্রান্তের নৌকাঘাট, রেস্তোরাঁগুলোও বেশ জমজমাট হয়ে উঠেছে। যদিও রোজা, বৈশাখের খরতাপ আর ঈদের ছুটি মিলিয়ে লম্বা সময় অনেকটাই নিরব ছিল ঝিলের পাড়।
বোটে চড়ার জন্য লাইনে অপেক্ষমাণ উত্তরবাড্ডার স্থায়ী বাসিন্দা সাহানা আক্তার জানান, ঈদের দিন দুপুরের পর দুই শিশু সন্তান আর স্বামীসহ কিছুটা সময় ঘুরে ফিরে কাটাতে বাড়ির কাছে হাতিরঝিলকে বেছে নিয়েছেন। কাছে হওয়ায় আসা যাওয়ার ঝক্কিও কম।
রামপুরা ডিআইটি প্রজেক্ট থেকে আসা আল আমিন পেশায় ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের কর্মী। কাজের ব্যবতার কারণে এবার ভোলায় গ্রামের বাড়িতে যেতে পারেননি। তাই ছোট দুই ছেলেকে নিয়ে স্ত্রীসহ চলে এসেছেন হাতিরঝিলে।
মহামারীর চোখ রাঙানি পেরিয়ে ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি
“আমাদের অফিসে সবার একসঙ্গে ঈদের ছুটিতে যাওয়ার সুযোগ থাকে না। এবার আমি থেকে গেছি। ছুটির দিনেও ডিউটি করছি। কাজের ফাঁকে পরিবার নিয়ে কিছুক্ষণের জন্য এখানে এলাম।
“যেকোনো সময় ডাক পড়লে অফিসের কাজে চলে যাওয়া লাগতে পারে,” বলেন আল আমিন।
নিম্ন আয়ের মানুষ ছাড়াও মধ্যবিত্ত শ্রেণির অনেক মানুষকে দেখা গেছে হাতিরঝিলের বিভিন্ন প্রান্তে পরিবার নিয়ে আড্ডা দিতে। সন্ধ্যার পর থেকে গাড়ি নিয়ে আসা তরুণ-তরুণীদের সংখ্যা বাড়তে দেখা গেছে।
এদিন বিকালের অনেকটা সময়জুড়ে কিশোর আর তরুণ বয়সীদের বন্ধুবান্ধব নিয়ে দল বেঁধে ঘুরতে আর হৈ হুল্লোড় করতে দেখা গেছে। তাদের অনেকেই জানালেন বন্ধুদের নিয়ে অনেকটা সময় ‘এটাসেটা’ করে সময় কাটিয়েছেন হাতিরঝিলে।
প্রাইভেটকার নিয়ে গুদারাঘাট প্রন্তে এসে থামা মোহন মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার সাথে স্ত্রী, দুই মেয়ে ও ছোট ছেলে রয়েছে। দুপুরের পর থেকে হাতিরঝিলে দুই চক্কর দিয়েছি। অন্যান্য প্রান্তে পার্কিংয়ের ভালো সুযোগ না পেয়ে এ ঘাটে এসে থামলাম নৌকা ভ্রমণের জন্য।
“ঢাকায় বিভিন্ন রকম বিনোদনকেন্দ্র থাকলেও প্রকৃতিক পরিবেশ পাওয়া যায় কেবল হাতিরঝিলে। এছাড়া চিড়িয়াখানারও একটা ভিন্ন আবেদন রয়েছে। তবে এবার ঈদের দিনে ভিড়বাট্টা কম হওয়ায় বেশ স্বস্তিতে ঘুরেছি আমরা। এখন একটুখানি বোটে উঠার ইচ্ছে আছে।”