মঙ্গলবার দুপুরের তাদের জন্য উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। পরে তাদের হাতে ঈদের সালামি (বকশিস) তুলে দেওয়া হয়। ঈদে তারা নতুন জামা-কাপড় পরে শুভেচ্ছা বিনিময় করে।
শহরের টেপাখোলায় অবস্থিত সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রাধীন ফরিদপুর সরকারি শিশু পরিবারে (বালিকা) ১৭৫ জন শিশু-কিশোরী রয়েছে। বাবা-মা পরিবারহীন শিশু-কিশোরীদের থাকা-খাওয়া, লেখাপড়ার যাবতীয় ব্যবস্থা করা হয় এখানে। প্রথম শ্রেণি থেকে স্নাতক পর্যন্ত অধ্যয়নরত রয়েছে এখানকার মেয়েরা।
ঈদ উপলক্ষে ‘যেমন পার তেমন খাও’ (বুফে) আয়োজন করা হয়। আলাদা ট্রেতে পোলাও, মুরগির রোস্ট, গরুর মাংস, ডাল, সালাদ, দই, মিষ্টি, আইসক্রিম, সেভেন আপ সাজিয়ে রাখা হয়। সেখান থেকে যে যার মতো করে খাবার তুলে নিয়ে খায়। এ সময় শিশু ও কিশোরীরা আনন্দে মেতে ওঠে।
পরিবারটির একজন সদস্য এ বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থী মানসুরা। তার মা-বাবা নেই। শিশুকাল থেকে সে এখানেই রয়েছে বলে জানায়।
ঈদ কেমন কাটল জানতে চাইলে মানসুরা বলে, “খুব ভালো কেটেছে। ঈদের আগের দিন নতুন পোশাক দেওয়া হয়েছে। ঈদের দিন সকালে সেমাই, রুটি, খিচুরি খেতে দেওয়া হয়েছে। দুপুরে রয়েছে পোলাও, মাংস, দই, মিষ্টি। সবার সাথে মিলেমিশে ঈদ পালন করলাম।”
দশম শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী সামিয়া বলে, “সবাই মিলেমিশে থাকি। থাকা-খাওয়া, পড়ালেখা, খেলাধুলা সবই করতে পারি। ঈদ খুব আনন্দে কাটল। অনেক মজা করেছি। হাতে মেহেদি লাগিয়েছি, সেজেছি, নতুন পোশাক পরে সবার সঙ্গে গল্প করেছি। দুপুরের খাবার খেয়েছি। খাওয়ার পর মা (তত্বাবধায়ক) আমাদের সবাইকে বকশিস দিয়েছেন।”
ছোট বলে অন্যরা তাকে খুব আদর করে বলে জানায় প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী সানজিদা।
সে বলে, “বাড়ির কথা মনে নেই, এটাই আমার বাড়ি। আমি আমার বাড়িতেই ঈদ করেছি। মা-বোনদের সঙ্গে খুব মজা করেছি।”
পরিবারটির তত্ত্বাবধায়ক তাসফিয়া তাছরীন জানান, এখানে ১৭৫ জন মেয়ে শিশু ও কিশোরী রয়েছে। তাদের মধ্যে প্রথম শ্রেণি থেকে স্নাতকে পড়ছে এমন মেয়েরাও রয়েছে। যারা খুব ছোট বয়সে এখানে এসেছে এদের মধ্যে অনেকেই স্নাতকে পড়ছে, কেউ ম্যাটসে পড়ছে।
তিনি আরও বলেন, “এখানে কারোর বাবা-মা নেই। ওরা আমাকে আম্মা বলে ডাকে। পেশাগত দায়িত্ব পালনই শুধু নয়, মা হিসেবে ওদের আবদার পূরণ করার চেষ্টা করি। ঈদে অন্য শিশুরা যেমন আনন্দে কাটায় সেভাবে যেন ওরাও দিনটি কাটাতে পারে – সেজন্যই এত আয়োজন।”
শিশু পরিবারটির ব্যবস্থাপনার বিবরণ দিতে গিয়ে তত্ত্বাবধায়ক বলেন, এখানে থাকার জন্য উন্নতমানের শয্যা ব্যবস্থাসহ নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার পরিবেশন করা হয়। পড়ালেখার জন্য রয়েছে লাইব্রেরি, খেলাধুলার জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। সকলেই পড়ালেখা করে। পার্শ্ববর্তী নুরুল ইসলাম উচ্চবিদ্যালয়ে যায় তারা।
“এদিকে লজ্জ্বায় যদি কেউ কিছু বলতে না পারে তাদের জন্য রয়েছে ‘ইচ্ছাপূরণ’ বক্স। ইচ্ছার কথা কাগজে লিখে বক্সে রাখলে আমরা তার ইচ্ছাপূরণ করে থাকি,” যোগ করেন তিনি।
এ বিষয়ে ফরিদপুর সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নুরুল হুদা বলেন, “শিশু-কিশোরীরা আমাকে বাবা বলে ডাকে। নিজের সন্তানের মত করে ওদের লালন করি। অনেক সময় সরকারি বরাদ্দ না থাকলেও নিজের অর্থ দিয়ে ওদের আবদার মেটাই।”
পড়ালেখা শেষে অনেক শিক্ষার্থী স্বাবলম্বী হয়েছে বলে জানান ওই উপ-পরিচালক।