গত দুই বছর করোনাভাইরাস মহামারীর বিধি-নিষেধের কারণে ঈদযাত্রা বাধা পড়ে। পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে ঢাকার বাইরে যেতে পারেননি অনেকেই। এবার জনচলাচলে বিধি-নিষেধ না থাকায় গত বৃহস্পতিবার রাত থেকেই থেকেই বাড়িতে যেতে ঢাকা ছাড়তে শুরু করে রাজধানীর মানুষ।
ঈদের পর বুধবার ঢাকার রাস্তায় রাস্তায় সকাল থেকেই অটোরিকশা, বাস দেখা গেলেও যাত্রী সঙ্কটে পড়েছিল এসব পরিবহন। বাসের হেলপারদের যাত্রীর জন্য হাঁকাহাকি করতে দেখা যায়।
সকালে এক পশলা বৃষ্টির পর রামপুরা, মৌচাক, মালিবাগ, কাকরাইল, বিজয়নগর, তোপখানা রোড, পল্টন, ফকিরাপুল, শাহজাহানপুর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, ব্যস্ততম এই সড়কগুলো যানজটের বালাই নেই, অলস সময় কাটাচ্ছেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা।
মোড়ে মোড়ে ভিড় করে আছে অটোরিকশা। মালিবাড় মোড়ে গিয়ে দেখা গেল পাঁচটি অটোরিকশা দাঁড়িয়ে আছে। এগুলোর চালক রহমতউল্লাহ, আবদুল রহমান, রিপনসহ অন্যান্যরা জানালেন, যাত্রী কম। সকাল সকাল রাস্তায় নেমেছেন তারা। তবে বেলা গড়ালেও লাভ হয়নি, একজনও যাত্রী পাননি বলে আক্ষেপ তাদের।
বিকালে লোকজন রাস্তায় বেরুলে ‘ভালো ইনকাম’র আশায় আছেন এই চালকেরা।
ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে মানা থাকলেও ঢাকার ছোটখাট রাস্তা বা অলিগলিগুলো রিকশার দখলে থাকে। এবারে এসব রাস্তাতেও বেলা ১০টা পর্যন্ত ভিন্ন পরিস্থিতি দেখা গেছে। রিকশা থাকলেও সংখ্যায় কম চলছে। আবার যাত্রী অভাবে অনেক চালক রিকশায় ঘুমিয়ে বিশ্রামও নিচ্ছেন।
রাজধানীর বেশিরভাগ রিকশা চালকের বাড়ি ঢাকার বাইরে। সারাবছর শেষে সাধারণত দুই ঈদে পরিবার পরিজনের সঙ্গে ঈদ করতে বাড়ি যান এই পেশার মানুষের।
রিকশাচালক মোমিন মিয়া বলেন, “রিকশা চালানোর বেশিভাগ লোক রংপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর, ময়মনসিংহ জেলার। তারা বেশিরভাগই ঈদে দেশে গেছে। এজন্য রিকশা কম।”
তবে বৃহস্পতিবারের মধ্যেই অনেকে ফিরে আসবেন বলেও জানান এই চালক।
সিএনজি চালিত অটোরিকশা, প্রাইভেট কার এবং গণপরিবহন চললেও যাত্রী সংকটে পড়েছে এসব পরিবহন
রাস্তা পেরুনো বিষয়টি যাদের কাছে ভীষণ ভীতির এবং ঝকমারি তাদের জন্য ঈদের ঢাকা পোয়াবারো। বিশেষ করে বয়স্ক মানুষদের জন্য রাস্তা পারপার বিপজ্জনকই।
শান্তিনগর মোড়ে ৭০ বছরের বৃদ্ধ রফিকুল ইসলাম বলেন, “ঢাকা শহরে এত গাড়ি-ঘোড়া যে, রাস্তা পার হতে গিয়ে বিপদ হাতে নিয়ে চলতে হয়। ঈদের পরদিন সকালে বেরিয়ে রাস্তায় যানবাহন একেবারেই কম দেখে নিরাপদে রাস্তা পার হয়েছি। রাস্তায় এই ফাঁকা অবস্থা দেখে আমি অবাকই হচ্ছি “
শুধুমাত্র ঈদ নয়, সারা বছরই এমন যানজটমুক্ত ঢাকা দেখার প্রত্যাশার কথাও জানান এই নগরবাসী।
বেলা কিছুটা বাড়লে গাজীপুর কিংবা এয়ারপোর্ট-উত্তরাগামী মিনিবাসগুলোয় কিছু যাত্রী দেখা গেছে। অনেকে আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ি ঘুরতে এসব গণপরিবহনক বেছে নিয়েছেন।
উত্তরায় যেতে পরিবার নিয়ে শান্তিনগর মোড়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন আব্দুর রহিম। তিনি জানান, এমনিতে বাসে ভিড়ের চোটে ওঠার সাধ্য থাকে না। এখন বাসগুলো ফাঁকাই যাবে এবং ভাড়াও সিএনজি চালিত অটোরিকশার চেয়ে কম, তাই বাসেই যাবেন তিনি।
“উত্তরা যেতে সিএনজি যে ভাড়া হাঁকায় তা আমার মতো মধ্যবিত্তের পক্ষে দেয়া সম্ভব নয়,” বলেন আব্দুর রহিম।
একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্য কর্মীর কাজ করেন সাবিহা খাতুন। তিনি জানালেন, কাফরুল থেকে মহাখালীতে অফিসের গাড়িতে করে তার কর্মস্থলে আসতে সময় লেগেছে ১০ মিনিট।
সাবিহা বলেন, “ঢাকা শহরটা যদি সারাটা বছর এমন থাকতো তাহলে কত ভালোই না লাগতো। প্রতিদিন সকালে উঠে অফিসে আসার জন্য রেডি হলে গাড়ি উঠলেও সময়মতো আসা যায় না যানজটের কারণে। আর যারা গণপরিবহনে চলাচল করে, তাদের যে কি দশা তা ভাবলে কষ্ট বাড়ে।”
ফকিরেরপুল বাজারের রহিম মোল্লা হতাশা প্রকাশ করে জানান, ফাঁকা ঢাকার এই নির্মলতা বেশিদিন থাকবে না।
“ঢাকার এই ফাঁকা চিত্র আজ-কালই আপনারা দেখবেন। এরপর আবার ঢাকা তার পুরনো চিত্রে ফিরে আসবে। এটাতে খুশি হওয়ার কিছু নেই।”
অন্যসময় ঢাকার রাস্তার বড় একটি অংশ দখল করে থাকা বাইক চালকদেরও কম দেখা গেছে ঈদের পর দিন। মালিবাগ ও কাকরাইলের মোড়ে যেখানে ১০ থেকে ১২টি বাইক সব সময় বসে থাকতো যাত্রী তুলতে, সেখানে দেখা গেছে মাত্র দুই থেকে তিনটা বাইক।
একজন বাইক চালক বলেন, “ঈদের ছুটিতে অনেকে গ্রামে গেছেন যেজন্য বাইক কম।”
বিভিন্ন জিনিস নিয়ে ফুটপাত দখল করে থাকা দোকানি বা ব্যবসায়ীরাও নেই। পল্টন মোড়ে ফুটপাতের হকারদের দোকানপাটগুলো পলিথিন দিয়ে ঢাকা দেখা গেছে।