ক্যাটাগরি

ইউক্রেইনে পুতিনের আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণার জল্পনা উড়িয়ে দিল ক্রেমলিন

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেইনে যে আগ্রাসন শুরু করেছে রাশিয়া, সেটিকে এতদিন যুদ্ধ নয় বরং ‘বিশেষ সামরিক অভিযানই’ বলে এসেছেন পুতিন।

কিন্তু পশ্চিমা রাজনীতিবিদরাসহ কিছু রুশ পর্যবেক্ষক ধারণা প্রকাশ করে বলেছেন, পুতিন আগামী সোমবার (৯ মে) ইউক্রেইনের বিরুদ্ধে পুরোদস্তুর যুদ্ধ ঘোষণা কিংবা জয় ঘোষণা করতে পারেন অথবা দুটোই করতে পারেন।

এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, “এর কোনও সুযোগ নেই। এটি বাজে কথা।” জাতীয় পর্যায়ে সেনাসমাবেশ করার সিদ্ধান্ত হতে পারে- এমন গুঞ্জনে মানুষজনের কান দেওয়া উচিত না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সাংবাদিকদেরকে পেসকভ বলেন, “এমন কথা সত্য নয়। এগুলো আজেবাজে কথা।”

৯ মে রাশিয়ার জন্য কেন গুরুত্বপূর্ণ?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিজয় দিবস ৯ মে। ১৯৪৫ সালের এই দিনে হিটলারের নাৎসি বাহিনীর পরাজয় ঘটে রাশিয়ায়। তারপর থেকেই রাশিয়া দিনটি স্মরণ করে আসছে।

প্রতিবছর এ দিনটি সামরিক কুচকাওয়াজ এবং রাশিয়ার মার্কসবাদীদের অবিসংবাদিত নেতা ভ্লাদিমির লেনিনের সমাধিতে সম্মান প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে পালন করা হয় মস্কোতে।

চাথাম হাউসের রাশিয়া-ইউরেশিয়া প্রোগ্রামের পরিচালক জেমস নিক্সি সিএনএন-কে বলেছেন, “দেশের ভেতরে জনগণকে দেখানো, বিরোধীদের ভয় দেখানো এবং তৎকালীন স্বৈরশাসককে সন্তুষ্ট রাখতে এই ৯ মে তৈরি করা হয়েছিল।”

পশ্চিমা কর্মকর্তাদের অনেকদিনের বিশ্বাস, পুতিন এই দিনের প্রতীকী তাৎপর্য এবং প্রচারমূল্যকে কাজে লাগিয়ে ইউক্রেইনে সামরিক অর্জন অথবা সর্বাত্মক যুদ্ধ, কিংবা দুটোই ঘোষণা করতে পারেন।

প্রতীকবাদে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের বিশেষ আকর্ষণ রয়েছে। এ কারণেই রাশিয়ার ‘পিতৃভূমি রক্ষা দিবস’ পালনের পরদিন ইউক্রেইনে সামরিক অভিযান শুরু করেছে মস্কো।

আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণার মানে কী?

আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণা করা হলে রাশিয়া নিজেদের রিজার্ভ বাহিনীকে পুরোপুরি মোতায়েন করতে সক্ষম হবে। এতে পুতিনের অভিযান জোরদার করার পথ সুগম হবে।

ক্রাইসিস গ্রুপের রাশিয়া বিষয়ক বিশ্লেষক ওলেগ ইগনাতভের মতে, পুতিনের হাতে অনেক বিকল্প আছে। “এরমধ্যে যুদ্ধের ঘোষণা সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতির একটি”।

ইউক্রেইন এখনও রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেনি। ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেইন রুশ আগ্রাসনের শিকার হওয়ার পর দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দেশে সামরিক আইন জারি করেন।

পুতিনের হাতে আরেকটি বিকল্প হল ‘মোবিলাইজেশন ল’ চালু করা। এ আইনের অর্থ হল, রুশ ফেডারেশনের বিরুদ্ধে কোনও আগ্রাসন বা আগ্রাসনের সরাসরি হুমকি কিংবা রুশ ফেডারেশনের বিরুদ্ধে সরাসরি সশস্ত্র সংঘাত শুরু হয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সামগ্রিকভাবে বা আংশিকভাবে সেনা সমাবেশ (মিলিটারি মোবিলাইজেশন) শুরু করার ক্ষমতা থাকা।

এই আইনের মাধ্যমে রুশ ফেডারেশন বহিঃশত্রুর আগ্রাসন বা হুমকির শিকার হলে রাশিয়ার সরকার কেবল সর্বাত্মকভাবে তার সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করাই নয়, বরং দেশের অর্থনীতিকেও যুদ্ধের কাজে লাগানোর সুযোগ পাবে।

চাথাম হাউসের রাশিয়া-ইউরেশিয়া প্রোগ্রামের পরিচালক নিক্সির মতে, যুদ্ধে এ পর্যন্ত রুশ বাহিনীর কমপক্ষে ১৫ হাজার সেনা নিহত হয়েছে এবং মস্কো ইউক্রেইনে তাদের লক্ষ্য পূরণ করতে চাইলে শক্তি আরও বাড়ানোর প্রয়োজন পড়বে।


 ইউক্রেইনে শিগগিরই আনুষ্ঠানিক ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা করতে পারেন পুতিন
 

বিশ্লেষক ইগনাতভ বলেন, এ অবস্থায় ইউক্রেইনে ব্যাপকভাবে সেনা মোতায়ন করা বা সর্বাত্মক যুদ্ধের জন্য বড় ধরনের পরিকল্পনা করতে হবে রাশিয়াকে। যেমন- সশস্ত্র বাহিনীতে বর্তমান সেনাদের জন্য বাধ্যতামূলক নিয়োগ বাড়ানো, যুদ্ধে যাওয়ার বয়সী যারা সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়েছে তাদেরকে দলে ভেড়ানো এবং রিজার্ভ সেনাদের ডাকা।

তবে এটি পুতিনের সরকারের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি বয়ে আনতে পারে বলে মনে করেন ইগনাতভ। তিনি বলেন, “এটি গোটা ক্রেমলিনের গতানুগতিক ধারা বদলে দিতে পারে।” তার মতে, রাশিয়া এমন পদক্ষেপ নিলে প্রমাণ হয়ে যাবে যে, পুতিনের ইউক্রেইন আগ্রাসন পরিকল্পনা অনুযায়ী এগুচ্ছে না।

তাছাড়া, “এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে ইগনাতভ বলেন, ইউক্রেইনে পুরো মাত্রায় সেনা মোতায়ন করলে রাশিয়ার ধুঁকতে থাকা অর্থনীতিও মারাত্মভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। উপরন্তু, এ সিদ্ধান্তের ফলে রাশিয়ার ভেতরে পুতিনের জনসমর্থনেও ধস নামতে পারে।

অন্য কী হতে পারে?

৯ মে পুতিন সর্বাত্মক যুদ্ধের ঘোষণা না দিলেও বিজয় দিবসের বিবৃতিতে অন্য ঘোষণা দিতে পারেন। কী সেই ঘোষণা?

বিশ্লেষকদের মতে, অন্যান্য বিকল্পর মধ্যে রয়েছে- পূর্ব ইউক্রেইনের বিচ্ছিন্নতাবাদী অঞ্চল লুহানস্ক এবং দোনেৎস্ক দখল, দক্ষিণের ওডেসায় বড় ধরনের অভিযান চালানো কিংবা দক্ষিণের বন্দরনগরী মারিউপোলের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা দেওয়া।

আবার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় নগরী খেরসনকে ‘গণপ্রজাতন্ত্র’ ঘোষণা করে এটি দখলে নেওয়ার পরিকল্পনা পুতিন করতে পারেন এমন আভাসও পাওয়া যাচ্ছে।

বিশ্লেষক ইগনাতভ বলেন, “তিনি (পুতিন) ইউক্রেইনে রুশ বাহিনীর কিছু বিজয়ের ঘোষণা দিতে পারেন। আর এর মধ্য দিয়ে তিনি স্মরণীয় ৯ মে দিনটিকে নিজের জনসমর্থন বাড়ানোর কাজে লাগাতে পারেন।”

তবে যা-ই হোক, রাশিয়া এবং দেশটির প্রেসিডেন্ট পুতিন কী করবেন সে বিষয়ে ধারণা করা কঠিন বলেই উল্লেখ করেছেন এই বিশ্লেষক।

এ ব্যাপারে তিনি বলেন, “কয়েকজন উপদেষ্টার পরামর্শে সমস্ত সিদ্ধান্ত একজনই (প্রেসিডেন্ট পুতিন) নিয়ে থাকেন।”