ক্যাটাগরি

গ্যাস বন্ধ: লাকড়ির চুলায় ঈদের মেহমানদারি

গ্যাস বিতরণকারী কোম্পানিগুলো আগে থেকে সতর্ক করলেও অনেকেই তা যথাসময়ে জানতে পারেননি বলে ভোগান্তিতে পড়ার কথা অভিযোগ আকারে জানিয়েছেন অনেকে।

আগে থেকে না জানার কারণে তাদের কাছে রান্নার গ্যাস চলে যাওয়াটা ছিল আকস্মিক। ফলে এসব এলাকার খাবারের কষ্টে পড়েছেন অনেকেই।

গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল) জানায়, টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা-যমুনা (বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্ত) জিটিসিএল-৩০ ইঞ্চির ব্যাসের একটি পাইপে সংস্কার এবং গাজীপুরে দুটি স্থানে বাল্ব প্রতিস্থাপনের জন্য মঙ্গলবার রাত ১০টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার জন্য ঢাকার আমিন বাজার, হেমায়েতপুর, সাভার, সাভার ইপিজেড, আশুলিয়া, মানিকগঞ্জ, ধামরাই এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে।

অন্যদিকে উত্তরবঙ্গে রাজশাহী বিভাগের কয়েকটি জেলায় একই সময় গ্যাস বন্ধ রয়েছে।

সাভার এলাকার গৃহিণী রোকসানা আক্তার বলেন, নিয়মিত গ্যাস পেলেও ঈদের পরের দিন সকালে রান্না করতে গিয়ে দেখি চুলা জ্বলছে না। আত্মীয়-স্বজন আসবে, ভালো কিছু রান্না করতে হবে। কিন্তু বুঝতে পারছি না কি করব। ফ্ল্যাট বাসায় থাকার কারণে বিকল্প ব্যবস্থাও করতে পারছি না।

“হোটেল রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকায় মিষ্টান্ন তো দূরের কথা নিয়মিত খাবার দাবারই কঠিন হয়ে পড়েছে।“

গ্যাস বন্ধ থাকার নোটিস সম্পর্কে কিছুই শোনেননি বলে জানান তিনি।


৪৮ ঘণ্টা গ্যাস থাকছে না ঢাকার একাংশ ও রাজশাহীতে
 

আশুলিয়া এলাকার হযরত আলী জানান, ঈদের সময়ে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে লাইনে কাজ করা মোটেও ভালো কাজ নয়। এটা মানুষদের কষ্ট দেওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়।

ভাদাইল এলাকার বাসিন্দা রেশমি আক্তার জানান, ঘোষণার বিষয়টি আগে থেকে জানতে পারায় বিকল্প হিসেবে ইট দিয়ে চুলা বানিয়েছেন।

“কিন্তু আজ বাসায় মেহমান আসছে, তাদেরকে ভাল মন্দ রান্না করে খাওয়াতে হবে। কিন্তু গ্যাস না থাকায় অনেক কষ্ট হচ্ছে। মনের মতো করে রান্না করতে পারছি না। এই সময়ে গ্যাস বন্ধ রাখা ঠিক হয়নি,” অনুযোগ তার।

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

সাভারের গৃহিণী আনোয়ারা বেগম, পোশাক শ্রমিক সাহিদা বেগমসহ অনেকেই জানান, সকাল থেকেই গ্যাস বন্ধ। বিকল্প ব্যবস্থায় ইট দিয়ে চুলা বানিয়ে কোনো রকমে লাকড়ি এনে রান্না বসাইছি।

তবে ঈদের ছুটির কারণে ও পূর্ব প্রস্তুতি থাকায় সাভার-আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের কারখানাগুলোতে গ্যাস নিয়ে তেমন জটিলতার খবর আসেনি।

দুর্ভোগে রাজশাহীর ৪ জেলা

গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া ও পাবনা জেলায় একই রকম ভোগান্তিতে পড়েছেন গৃহিণীরা বলে প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।

রাজশাহী নগরের সাগরপাড়ার গ্রাহক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ঈদের মধ্যে রান্নার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করতে মুশকিলে পড়তে হয়। অনেককেই সিলিন্ডার গ্যাস ও চুলার ব্যবস্থা করতে হয়েছে। দুদিনের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করতে গুনতে হয়েছে কয়েক হাজার টাকা।

পাবনা শহরের দিলালপুর কফিলউদ্দিন পাড়ার বাসিন্দা উৎপল মির্জা বলেন, ঈদে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কর্মজীবী মানুষ পৈত্রিক বাড়িতে আসেন। এবার গ্যাস না থাকায় খাওয়া দাওয়া নিয়ে বিড়ম্বনার পড়তে হয়েছে বেশিরভাগকে।

তার সন্দেহ, “শুধু ওভারটাইম বিল করতেই গ্যাসের লোকজন ঈদের সময় এ হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন”।

পাবনা শহরের পৈলানপুর মহল্লার তপু আহমেদ বলেন, “ঈদের রাত থেকে খুবই কষ্টের মধ্যে রান্নাবান্নার কাজ করতে হচ্ছে। তার উপর বাসায় টাঙ্গাইল থেকে ভায়রা ভাই এসেছেন। কী যে মসিবতের মধ্যে রয়েছি, শুধু আমরাই বুঝতে পারছি।“

লাইব্রেরি বাজার চামড়ার গুদাম এলাকার বাসিন্দা গৃহবধূ নুজহাত নূর তুষ্টি বলেন, ঈদের রাতের রান্না করতে কষ্টের কথা কী আর বলবো! ছাদে ইট দিয়ে কোনোভাবে চুলা তৈরি করে যেনতেন ভাবে রান্না করেছি।

“পরে স্বামী সন্তানসহ যশোরে বাপের বাড়ি চলে এসেছি শুধু গ্যাস কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালী সিদ্ধান্তের কারণে।“

ফাইল ছবি

প্রথম দিন দুর্ভোগে পড়েনি বগুড়া-সিরাজগঞ্জ

গ্যাস বন্ধ থাকার ঘোষণায় বগুড়া শহরের অনেকেই বিকল্প ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু বুধবার প্রথম দিন লাইনের গ্যাসের সংকটে পড়তে হয়নি তাদের।

শহরের সুত্রাপুরের বাসিন্দা আরিফাতুল জান্নাত রুপু জানান, গ্যাস থাকবে না শুনে কষ্ট হলেও সিলিন্ডার কিনে এনেছি। এখন দেখছি গ্যাস আছে। শুধু অতিরিক্ত খরচ করলাম।

চেলোপাড়ার প্রদীপ কুমার জানান, যদি গ্যাস কোম্পানি বলতো সব বন্ধ হলেও পাইপ লাইনের গ্যাস দিয়ে বাসার রান্না চলবে, তাহলে পয়সা খরচ করে খড়ি-চুলার ব্যবস্থা করতাম না।

সিরাজগঞ্জ শহরের সয়াধানগড়া মহল্লার সুলতানা পারভীন স্বপ্না বলেন, গ্যাস সঞ্চালন লাইন বন্ধের কথা শুনেছি। কিন্ত সঞ্চালন পাইপে হয়তো গ্যাস মজুদ থাকায় কারণে আমরা এখনও সরবরাহ পাচ্ছি। চুলা বন্ধ হয়নি।

সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলা সদর থেকে সীমান্তবাজার পর্যন্ত এলাকায় সিএনজি অটোরিকশা চালান নুর আলম বাবু।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টফোর ডটকমকে বলেন, ঈদের দিন গ্যাস লোড দিয়েছি, আজ রাত পর্যন্ত চলবে। কিন্তু কাল দিনে আর চলবে না।

যতটা সম্ভব আগে কাজ শেষ হবে

দেশের একাধিক স্থানে সঞ্চালন লাইনে মেরামতের কাজটি করছে জিটিসিএল।

কোম্পানির ডিরেক্টর অপারেশন তাজুল ইসলাম মজুমদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা ৪৮ ঘণ্টার একটা পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেছি। আমরা চেষ্টা করছি অন্তত নির্ধারিত সীমা থেকে চার ঘণ্টা আগেও যেন কাজটা শেষ করতে পারি। গ্রাহকের কথা চিন্তা করে যত আগে কাজ সম্পন্ন করা যায় ততই ভালো।”

তিনি আরও জানান, মূলত জিটিসিএলের ধনুয়া থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত যে ট্রান্সমিশন লাইন; সেখানেই মেরামত কাজটি শুরু হবে রাতে। এই লাইনের করদা ও পানশাইল এলাকায় দুটি পুরোনো বাল্ব প্রতিস্থাপন করা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম’র সাভার, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা প্রতিনিধি]