এর মধ্যে নানান রকমের ক্যানসার, স্ট্রোক,
টাইপ ২ ডায়াবেটিস ইত্যাদি অন্যতম।
পেটের মেদ যে কারণে অস্বাস্থ্যকর
নিবন্ধিত ডায়েটিশিয়ান, প্রত্যয়িত পুষ্টিবিদ,
‘সার্টিফাইড স্ট্রেন্থ অ্যান্ড কন্ডিশনিং স্পেশালিস্ট’ প্রশিক্ষক এবং ‘দ্যা জিমগোট
ডটকম’য়ের প্রতিষ্ঠাতা রেডা এলমার্ডি বলেন, “পেটের মেদ কেবল দেখতেই বাজে না বরং তা নানান
স্বাস্থ্য ঝুঁকিরও কারণ। এই ধরনের মেদকে বলা হয় ‘ভিসারেল মেদ’।”
ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে
যুক্তরাষ্ট্রের এই বিশেষজ্ঞ জানান, এই ধরনের মেদ হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও নানান ক্যান্সারের
ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়াও পেটের মেদ নানা রকমের দীর্ঘমেয়াদী রোগেরও কারণ।
ইন্সুলিনের মাত্রার বৃদ্ধির কারণে পেটের
নিচের অংশে মেদ জমে। ইন্সুলিন হরমোন রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এর ভারসাম্যহীনতা
টাইপ-২ ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা বাড়ায়।
পেটের বাড়তি মেদ স্ট্রোক, পিত্তরোগ, ঘুমে
সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিও বাড়ায়।
কম কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ: কার্বোহাইড্রেট শক্তির উৎস। তবে অতিরিক্ত কার্ব গ্রহণ দেহে মেদ
হিসেবে জমে। অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট খাওয়া রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত কম বেশি হয়ে
থাকে। এতে ইন্সুলিনের মাত্রা বাড়ে এবং বাড়তি ক্যালরি চর্বি হিসেবে জমতে থাকে।
তাই মেদ কমাতে রুটি, পাস্তা, ভাত ও আলু
খাওয়া যতটা সম্ভব এড়ানো উচিত। এগুলোর পরিবর্তে আঁশ সমৃদ্ধ তাজা ফল, সবজি, শস্য, বাদাম,
মটর, ডাল ও শাক সবজি খাওয়া উপকারী।
পর্যাপ্ত পানি পান: “পর্যাপ্ত পানি পান শরীরের জন্য সার্বিকভাবেই উপকারী,” বলেন এলমার্ডি।
দেহের বিষাক্ত উপাদান বের করে দিতে, তাপমাত্রা
নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং পেশির ভর স্বাভাবিক রাখতে পানি পান জরুরি। সুস্থ থাকতে দৈনিক
কমপক্ষে আট গ্লাস পানি পান করা উচিত।
এছাড়াও, সারাক্ষণ তৃষ্ণা অনুভব করলে তাজা
লেবুর রসের সঙ্গে কুসুম গরম পানি পান করলে দেহে আর্দ্রতার মাত্রা বাড়বে।
নিয়মিত শরীরচর্চা: এলমার্ডি মনে করিয়ে দেন যে, “শরীরচর্চা মানসিক চাপ কমাতে ও ঘুম ভালো হতে সহায়তা
করে। এটা মন ভালো রাখার পাশাপাশি আত্মবিশ্বাস বাড়াতেও সহায়তা করে।
মেডিকেল সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত এক
প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি জানান, যারা নিয়মিত শরীরচর্চা করে তাদের বিএমআই’য়ের
মান অন্যদের তুলনায় কম থাকে।
এছাড়াও, নিয়মিত শরীরচর্চা ডায়াবেটিস,
হৃদরোগ, হাইপারটেনশন, স্ট্রোক, হতাশা, উদ্বেগ, ও ক্যান্সারের মতো রোগের ঝুঁকি কমায়।
শুরুতে সপ্তাহের তিন দিন ত্রিশ মিনিট
এবং পরে এর মাত্রা ষাট মিনিট করে সপ্তাহে পাঁচদিন করা যেতে পারে।
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ: বড় বড় শ্বাস নেওয়ার ব্যায়াম, ধ্যান, যোগ ব্যায়াম ইত্যাদি নানান
শরীরচর্চা মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এই অনুশীলন কর্টিসলের মাত্রা কমায়। ফলে
হরমোন নিয়ন্ত্রণে থাকে। আর পেটে মেদ জমার প্রবণতা কমে।
যেসব কারণে পেটের মেদ জমে
পেটে মেদ জমার কারণ সম্পর্কে এলমার্ডি
কয়েকটি বিষয়কে দায়ী মনে করেন-
বংশগতি: কারও
পেটে মেদ হবে কিনা তা অনেকটাই নির্ভর করে বংশগতির ওপর। সাধারণত বাবা মায়ের পেটের মেদ
থাকলে পরে সন্তানেরও এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা থেকে থাকে। তবে ডায়াবেটিস বা হৃদরোগ বংশগতি
নয় বরং জীবনযাত্রার ওপরেই বেশি নির্ভর করে।
খাদ্যাভ্যাস:
পেটের মেদ বাড়াতে খাদ্যাভ্যাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। উচ্চ আঁশ ও কম শর্করা ধরনের
খাবার খাওয়া ক্ষুধাভাব কমায়। বেশি পরিমাণে ফল ও সবজি খাওয়া অনেকক্ষণ পেট ভরা রাখে এবং
অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা হ্রাস করে।
শরীরচর্চা:
শারীরিক নড়াচড়া না করা, অলস জীবন, বেশিরভাগ সময় চেয়ারে বসে থেকে কাজ করা- এরকম বিষয়গুলো
শরীরের মেদ বাড়ায়।
মনে রাখতে হবে, ওজন কমাতে শরীরচর্চা চমৎকার
কাজ করে; পেটের মেদ কমানোর ক্ষেত্রেও।
প্রথম অবস্থায় ত্রিশ মিনিট করে সপ্তাহে
তিনদিন শরীরচর্চা করা যায়। এরপর ধীরে ধীরে তা ষাট মিনিট এবং সপ্তাহে পাঁচ দিন করে শরীর
চর্চা করা যেতে পারে।
সুস্থ থাকতে সপ্তাহে কমপক্ষে দুদিন শরীরচর্চা
নিশ্চিত করা উচিত।
আরও পড়ুন