তিনি
বলেছেন, “আর কোনো সংঘাত নয়, আর কোনো বিবাদ নয়, আমি চাই ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ। এজন্য আজকে
প্রথম এসেছি, সবাইকে নিয়ে আমি এটার সমাধান করব। আমি দুপক্ষকেই ঢাকা ডাকব। দুই
পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করে এ সমস্যার সমাধান করব।”
ওবায়দুল কাদেরের বিরুদ্ধে
তার ভাই বসুরহাট পৌরসভার
মেয়র আবদুল কাদের মির্জার
নানা বক্তব্য এবং দলীয় কোন্দলের কারণে গত কয়েক বছর ধরেই নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ জাতীয়
রাজনীতিতে আলোচনার বিষয়।
উপজেলা
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান বাদল এবং সদর আসনের সংসদ সদস্য
একরামুল করিম চৌধুরীর সঙ্গে কাদের মির্জার বিরোধ গত কয়েক বছরে রক্তক্ষয়ী সংঘাতেরও চেহারা
পেয়েছে।
এর
মধ্যে অসুস্থতা
ও করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে টানা ৩৩ মাস নিজ এলাকায় যেতে পারেননি সড়ক পরিবহন-সেতুমন্ত্রী
ওবায়দুল কাদের।
দীর্ঘদিন পর বড় ভাই এলাকায়
ফেরায় গ্রামের বাড়িতে পারিবারিক ভোজের আয়োজন করেন বসুরহাটের পৌর মেয়র কাদের মির্জা।
সেই অনুষ্ঠানে তিনি বসুরহাট
পৌরসভার পক্ষ থেকে ওবায়দুল
কাদেরের হাতে ‘বীর সম্মাননা ৭১’ ক্রেস্ট তুলে দেন।
এদিকে
কাদের
মির্জার প্রতিপক্ষ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান বাদলের অনুসারীরা বেলা ২টার
দিকে বসুরহাট ডাকবাংলোতে ঈদ পুনর্মিলনীর আয়োজন করে।
এক
পর্যায়ে জনসভায় রূপ নেওয়া সেই পুর্নমিলনী অনুষ্ঠানেও যোগ দেন ওবায়দুল কাদের।
সেখানেই তার ঐক্যের আহ্বান আসে।
কোম্পানীগঞ্জ
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খিজির হায়াত খান, ওবায়দুল কাদেরের তিন ভাগনে উপজেলা
আওয়ামী লীগের মুখপাত্র মাহবুব রশিদ মঞ্জু, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সিরাজীস
সালেকিন রিমন, স্বাধীনতা ব্যাংকার্স পরিষদের সদস্য ফখরুল ইসলাম রাহাতও উপস্থিত
ছিলেন সেখানে।
দলের
সাধারণ সম্পাদক কী নির্দেশনা দিয়েছেন জানতে চাইলে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর
রহমান বাদল বলেন, “উনি (ওবায়দুল কাদের) আমাদেরকে ঢাকায় যেতে বলেছেন। ঢাকায় বসে
এটার সমাধান করবেন।
“কাদের
মির্জা অপপ্রচার চালিয়ে নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে। সে গুজব ছড়িয়েছিল
কাদের ভাই (ওবায়দুল কাদের) আমাদের প্রোগ্রামে আসবেন না। তার অপপ্রচার ব্যর্থ
হয়েছে। আমাদের প্রোগ্রামে হাজার হাজার নেতাকর্মী
সমাবেশে এসেছে। আমরা সার্থক, মন্ত্রী মহোদয় শিডিউল ছাড়াই আমাদের প্রোগ্রামে
এসেছেন।”
ওবায়দুল
কাদেরের আহ্বানের পর দীর্ঘদিনের বিরোধের নিরসন হবে কি না প্রশ্ন করলে বাদল বলেন, “তিনি
আমাদের নেতা, কিছু করার নাই। তিনি সুষ্ঠু সমাধান না দিতে পারলে আমরা মাননীয়
প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করব।”
কোম্পানীগঞ্জ
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খিজির হায়াত খান বলেন, “তিনি (ওবায়দুল কাদের) সবার
সাথে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। পরে তিনি আমাদের দশজনকে ঢাকায় যেতে বলেছেন। তিনি
ডাকলে আমরা ঢাকায় যাব।”
স্থানীয়
আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিরোধে জড়ানো কাদের মির্জা গত বছর খানেক ধরে নিজের ভাইয়ের
বিরুদ্ধেও নানা মন্তব্য করে আসছিলেন।
ওবায়দুল
কাদের দুপুরে বাদলদের কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার পর পৌর মেয়র কাদের মির্জা বলেন, “তিনি
(ওবায়দুল কাদের) বাড়িতে আমাকে বলেছেন ওদের সাথে দেখা করবেন, কিন্তু কিছু বলবেন না।
আমি এ বিষয়ে কোনো কথা বলিনি। বলবার প্রয়োজনীয়তাও মনে করিনি। আমরা কাজে বিশ্বাস
করি। নেতাকর্মীরা আমার পাশে আছে। আমি কারো বিরুদ্ধে কিছু বলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব
করি না। আমি কাজ করে এ পর্যন্ত পৌঁছেছি।”
‘বিএনপিও পানি ঘোলা করে খাবে’
তিন বছর পর নোয়াখালীতে নিজের
নির্বাচনী এলাকায় যাওয়ার পর বৃহস্পতিবার রাতে ফেনী সার্কিট হাউজে সাংবাদিকদের সঙ্গে
মতবিনিময়েও অংশ নেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
সেখানে তিনি বলেন, “নির্বাচনে
অংশগ্রহণ করা বিএনপির অধিকার, সুযোগ নয়। গাধা যেমন পানি ঘোলা করে খায়, বিএনপিও তেমনি
পানি ঘোলা করে খেয়ে তারপর নির্বাচনে আসবে।”
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক
বলেন, সংবিধানের আলোকে ‘যথা সময়ে’ নির্বাচন হবে এবং ‘বিএনপিসহ সবাই’ তাতে অংশ নেবে
তার বিশ্বাস।
“বিএনপি কী বলে মানুষের কাছে
ভোট চাইবে? তাদের আমলেতো কোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নেই। বিএনপি চোখে সরষে ফুল দেখছে। আন্দোলন করার জন্য
তাদেরতো কোনো নেতাই নেই। তারা যদি কখনও সরকার গঠন করতে পারে, তখন তাদের সরকারপ্রধান
কে হবে?”
বিএনপির নির্দলীয় সরকারের
দাবি প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, “এখানে নিরপেক্ষ সরকারের দরকার নেই, দরকার নিরপেক্ষ
নির্বাচন কমিশন। এক্ষেত্রে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই।”
ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য
ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী, জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ-উল
হাসান, ফেনী পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ
বদরুল ইসলাম মোল্লা, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট হাফেজ আহম্মদসহ
দলীয় নেতারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।