বন্দরনগরীতে ৬৬ প্রজাতির ছয় শতাধিক প্রাণী নিয়ে এ চিড়িয়াখানা চলছে কিউরেটর এবং সহকারী কিউরেটর ছাড়াই। এই বিপুল সংখ্যক প্রাণীর দেখাশোনার দায়িত্বে আছেন মাত্র ১৪ জন কর্মী আর একজন মাত্র চিকিৎসক।
সেই চিকিৎসকই এক দিকে অসুখবিসুখে প্রাণীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন, অন্য দিকে কিউরেটর ও সহকারী কিউরেটরের কাজ সামলাচ্ছেন একা হাতে।
অথচ দেশের প্রথম সাদা বাঘের জন্ম এই চিড়িয়াখানাতেই; আছে জেব্রা, সিংহ, বিভিন্ন প্রজাতির বিদেশি পাখি, ইমু। বন গরু, কুমিরও চিড়িয়াখানায় আসা দর্শকদের অন্যতম আকর্ষণ।
চিড়িয়াখানা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোমিনুর রহমান লোকবল সংকটের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে আপাতত কোনো নিয়োগ পরিকল্পনা নেই বলে তিনি জানিয়েছেন।
জনবল কাঠামো অনুযায়ী এ চিড়িয়াখানার বিভিন্ন পদে ২৫ জনের বিপরীতে আছেন ২১ জন। এই ২১ জনের মধ্যে দুজন কাজ করেন টিকেট কাউন্টারে, দুজনের দায়িত্ব গেইটে দর্শনার্থীদের টিকিট দেখা। আর নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন আরও দুই কর্মী।
বাকি ১৪ জন চিড়িয়াখানার প্রাণীদের দেখভাল করেন। এছাড়া পরিচ্ছন্নতাসহ চিড়িয়াখানার আরও অনেক কাজই ওই ১৪ জনকেই সামলাতে হয়।
সাপ্তাহিক পালা অনুযায়ী কর্মচারীদের প্রতিদিন অন্তত চার জনের সাপ্তাহিক ছুটি থাকে। যার কারণে দিনের কাজ চালাতে হয় মাত্র ১০ জনকে দিয়ে।
এছাড়া কেউ যখন ছুটিতে যান, তখন এই সীমিত জনবল দিয়ে দর্শনার্থীদের চাপ সামলানো কঠিন হয়ে পড়ে; আর দর্শণার্থী বাড়লে তো কথাই নেই।
কর্মচারীরা জানান, এক সময় এ চিড়িয়াখানায় প্রাণীদের জন্য খাঁচা ছিল ৮ থেকে ১০টি; এখন বেড়ে হয়েছে ৩৩টি।
কোভিড মহামারীর সময়ে প্রায় দুই বছর চিড়িয়াখানা বন্ধ থাকলেও ইদানিং চাপ বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি মাসে গড়ে ৮০ হাজার দর্শণার্থী চিড়িয়াখানায় আসছেন বলে কর্তৃপক্ষের ভাষ্য।
কর্মীরা বলছেন, কাজ অনুযায়ী এখনকার তুলনায় দ্বিগুণ জনবল দরকার এ চিড়িয়াখানায়। কিন্তু বেশ কয়েকবছর ধরে লোক নিয়োগ হচ্ছে না।
তবে আপাতত লোক নিয়োগের পরিকল্পনা নেই জানিয়ে চিড়িয়াখানার পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি জেলা প্রশাসক মোমিনুর রহমান বলছেন, নিরাপত্তার দায়িত্বে আনসার সদস্য বাড়িয়ে তারা বিষয়টি সামাল দিতে চান।
“শিগগিরই নিরাপত্তার দায়িত্বে ১০ জন আনসার সদস্য নিয়োগ দেওয়া হবে। ফলে বর্তমানে যারা নিরাপত্তাসহ গেইটের দায়িত্বে আছেন, তারা চিড়িয়াখানর ভেতরে কাজ করতে পারবেন।”
ফাইল ছবি
আগামীতে চিড়িয়াখানার সম্প্রসারণ এবং আধুনিকায়নের কাজ শুরুর পরিকল্পনার কথা বললেও কবে তা হবে সে বিষয়ে কোনো ধারণা দেননি জেলা প্রশাসক।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের দায়িত্বে ১৯৮৯ সালে নগরীর ফস’স লেক এলাকা ছয় একর জমিতে গড়ে ওঠে এ চিড়িয়াখানা। তিন দশকে এর আয়তন বেড়ে হয়েছে ১০ দশমিক ২ একর। পাশাপাশি বেড়েছে প্রাণীর সংখ্যা।
মাঝে সংস্কারের অভাবে এবং প্রাণী বৈচিত্র্যের অপ্রতুলতায় শ্রীহীন হয়ে পড়েছিল চিড়িয়াখানাটি। ২০১৬ সালে অবকাঠামো উন্নয়ন ও প্রাণীর সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়।
সে বছর ডিসেম্বরে চিড়িয়াখানার নিজস্ব তহবিল থেকে ৩৩ লাখ টাকায় দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে একটি বাঘ ও বাঘিনী আনা হয়। এখন বাঘের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক ডজনে।
পুরনো খবর
নতুন রূপে সাজছে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা
চিড়িয়াখানার উন্নয়নে পুরস্কৃত চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার পাখিশালা নতুন রূপে