এর মধ্যে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান সিয়ামকে রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে সংঘর্ষের সময় ডেলিভারিম্যান নাহিদকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যার মামলায়।
আর সংঘাত, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, উসকানি ও পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার মামলায় রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে নিউ মার্কেটের খাবারের দোকান ‘ওয়েলকাম’ এর দুই কর্মী মোয়াজ্জেম হোসেন সজীব এবং মেহেদী হাসান বাপ্পিকে।
ঢাকা কলেজের বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সিয়ামকে বুধবার রাতে শরীয়তপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর বাকি দুজনকে কক্সবাজার থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। শুক্রবার তাদের ঢাকার মহানগর হাকিম মো. মোশাররফ হোসেনের আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করা হয়।
নাহিদ হত্যা মামলায় সিয়ামকে সাত দিনের রিমান্ডে চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের ধানমন্ডি জোনাল টিমের পরিদর্শক তারিকুল আলম জুয়েল।
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, সিয়ামের রডের আঘাতেই নাহিদ মারা যান। ওই ঘটনায় আর কারা জড়িত তা জানতে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।
সিয়ামের আইনজীবী এ সময় রিমান্ডের বিরোধিতা করে জামিনের আবেদন করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করে। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে সিয়ামকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয়।
অন্য মামলায় বাপ্পি ও সজীবকে সাত দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক হালদার অর্পিত ঠাকুর। আসামিপক্ষের আইনজীবী রিমান্ডের বিরোধিতা করে জামিনের আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তাদেরও তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে।
রোজার মধ্যে গত ১৮ এপ্রিল নিউ মার্কেটে ‘ক্যাপিটাল’ ও ‘ওয়েলকাম’ নামে ওই দুই দোকানের কর্মীদের বচসার পর এক পক্ষ ঢাকা কলেজ ছাত্রাবাস থেকে ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মীকে ডেকে আনে। তারা মারধরের শিকার হওয়ার পর ছাত্রাবাসে ফিরে আরও শিক্ষার্থীদের নিয়ে মধ্যরাতে নিউ মার্কেটে হামলা চালাতে গেলে বাঁধে সংঘর্ষ।
ওই সংঘর্ষ চলে পরদিনও। দিনভর সংঘর্ষের সময় ডেলিভারিম্যান নাহিদকে কুপিয়ে জখম করা হয়। ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে তিনি মারা যান।
একই দিনে সংঘর্ষের সময় দুপুরের দিকে নুরজাহান মার্কেটের সামনে ইটের আঘাতে আহত হন মো. মোরসালিন নামের এক দোকান কর্মী। দুদিন পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে তার মৃত্যু হয়।
সংঘর্ষের ওই ঘটনায় নিউ মার্কেট থানায় দুটি হত্যা মামলার পাশাপাশি সংঘর্ষ, বোমাবাজি এবং অ্যাম্বুলেন্সে হামলার অভিযোগে মোট পাঁচটি মামলা হয়েছে।
এর মধ্যে সংঘর্ষের মামলায় ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে কয়েকশ ছাত্র ও দোকানকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলার প্রধান আসামি মকবুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে ইতোমধ্যে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।
নিউ মার্কেট থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি মকবুল ‘ক্যাপিটাল’ ও ‘ওয়েলকাম’ নামের ওই দুটি দোকানের মালিক। তবে কোনো দোকানই তিনি নিজে চালাতেন না। রফিকুল ইসলাম ও শহিদুল ইসলাম নামে দুজনকে ভাড়া দিয়ে রেখেছিলেন দোকান দুটি।
মকবুলের দাবি, রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণেই তাকে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে। মামলায় নাম আসা বাকিরাও বিএনপির নেতাকর্মী।
এছাড়া নাহিদ মিয়াকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় এর আগে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। তারাও সবাই ঢাকা কলেজের ছাত্র। এক দফা রিমান্ড শেষে তারা কারাগারে আছেন।
এই পাঁচজন হলেন- ঢাকা কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল কাইয়ুম (২৪), একই বর্ষের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের পলাশ মিয়া (২৪) ও মাহমুদ ইরফান (২৪), বাংলা বিভাগের ফয়সাল ইসলাম (২৪) এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রথম বর্ষের জুনায়েদ বুগদাদী (১৯)।
পুরনো খবর: