বর্তমানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিবের দায়িত্বে থাকা এ কর্মকর্তাকে ‘লঘুদণ্ড’ হিসেবে এ সাজা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
শুক্রবার এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (শৃঙ্খলা ও তদন্ত অনুবিভাগ) ড. ফরিদ উদ্দিন আহমদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে জানান, সপ্তাহখানেক আগে ‘তিরস্কার দণ্ডের’ আদেশ হয়েছে।
গেল বছর মার্চে সারওয়ার আলম ফেইসবুকে চাকরি জীবনে ‘বঞ্চনার’ কথা লিখে পোস্ট দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে জুন মাসে তার বিরুদ্ধে ‘অকর্মকর্তাসুলভ’ আচরণের অভিযোগে বিভাগীয় মামলা হয়।
ফরিদ উদ্দিন আহমদ বলেন, “ফেইসবুকে মন্তব্য করার কারণে একটি বিভাগীয় মামলা হয়, মামলায় শেষ পর্যন্ত তিরস্কার দণ্ড দেওয়া হয়েছে।”
সারওয়ার আলম জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকায় সেখান থেকে আদেশটি হয়েছে বলে জানান তিনি।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, “বিভাগীয় মামলায় এটা সর্বনিম্ন দণ্ড এটা। এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিলেরও সুযোগ রয়েছে। এরপরে এটা বাতিলও হতে পারে।”
র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকার সময় ভেজাল এবং অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে গণমাধ্যমে বেশ পরিচিতি পান মো. সারওয়ার আলম।
২০২০ সালের ৯ নভেম্বর তাকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে বদলি করা হয়।
গত বছর ৭ মার্চ প্রশাসনের ৩৩৭ জন সিনিয়র সহকারী সচিবকে উপ-সচিব পদে পদোন্নতি দেয় সরকার। কিন্তু পদোন্নতি পাননি ২৭তম বিসিএসের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা সারওয়ার আলম।
পরদিন ৮ মার্চ ফেইসবুকে স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, “চাকুরী জীবনে যেসব কর্মকর্তা কর্মচারী অন্যায়, অনিয়মের বিরুদ্ধে লড়েছেন তাদের বেশিরভাগই চাকুরী জীবনে পদে পদে বঞ্চিত ও নিগৃহীত হয়েছেন এবং এদেশে অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়াটাই অন্যায়।”
সারওয়ার আলমের শাস্তির ঘোষণায় ওই স্ট্যাটাসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব সারওয়ার আলম একজন সরকারি কর্মচারী হয়ে সরকার ও কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এ ধরনের ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করার মাধ্যমে অকর্মকর্তাসুলভ আচরণ করেছেন।
এতে জনপ্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হওয়ায় ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮’ এর ৩ (খ) বিধি অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’ এর অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয় এবং গত বছর ৩০ জুন অভিযোগনামা এবং অভিযোগ বিবরণী পাঠিয়ে কৈফিয়ত তলব করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, অভিযুক্ত কর্মকর্তা নির্ধারিত বা বর্ধিত সময়ের মধ্যে আত্মপক্ষ সমর্থনে কোনো লিখিত বক্তব্য দাখিল না করায় এবং অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেওয়ায় তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়।
তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনায় সারওয়ার আলমের বিরুদ্ধে যে মন্তব্যের কারণে অকর্মকর্তাসুলভ আচরণ এবং জনপ্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুন্নের অভিযোগ আনা হয়েছে, তিনি তার ফেইসবুক আইডিতে সে মন্তব্যটি করেছেন মর্মে স্বীকার করেছেন।
‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮’ এর ৩(খ) বিধিতে বর্ণিত ‘অসদাচরণ’ এর অভিযোগ তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় বিধিমালার ৪(২)(ক) বিধি অনুযায়ী তাকে ‘তিরস্কার’ সূচক লঘুদণ্ড দেওয়া হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।
এ বিষয়ে সারওয়ার আলমের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএস পাঠিয়েও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।